শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নীলফামারীতে ট্রেন আটকিয়ে মানববন্ধন ঢাকাসহ তাপপ্রবাহ বইছে ৬০ জেলায় সোনারগাঁয়ে ৭টি রেষ্টুরেন্টসহ দুই হাজার অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন ১ জনকে আটক স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা দাম কমবে ইন্টারনেটের ১৬১ টাকা কমলো ১২ কেজি এলপিজির দাম মেলান্দহের আদ্রা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কুচক্রিমহলের ষড়যন্ত্র! উত্তরা আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ রেললাইন বস্তি অপরাধ মাদকের অভয়ারণ্য গুলশান-বনানীর বিস্তৃত এলাকার একচ্ছত্র মাদক সম্রাট হুমায়ুন কবির গাজী ক্ষমতার জোরে অন্যের জমি দখলের চেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে; থানায় অভিযোগ

অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়া ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯
  • ১২৬ Time View
এম,এ,হান্নান ব্যুরো প্রধান ভোলা : 
ভোলায় ২০ লাখ মানুষের প্রাণের দাবী ছিল ডিজিটাল পাসপোর্ট অফিস স্থাপন। সেই দাবিকে সম্মান জানিয়ে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জননেতা তোফায়েল আহমেদের সহযোগীতায় বিগত ৭/৯/২০১৪ ইং তারিখে ভোলার চরনোয়াবাদ (তিন খাম্বা) এলাকার অমি ম্যানসনের ভাড়া বাসায় পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম চালু হয়। কিন্তু মানুষের ভোগান্তি এতটুকুও কমেনি। আগে ভোলার মানুষ বরিশাল গিয়ে পাসপোর্টে কাগজপত্র জমা দিত এবং সেই পাসপোর্ট পুনরায় বরিশাল থেকেই আনতে হতো। এখন বাড়ীর কাছে পাসপোর্ট অফিস থাকার পরও ভোলার মানুষের ভোগান্তি কমেনি। তাদের যেই কপাল, সেই কপালই থেকে গেল। পাসপোর্ট অফিসের স্টাফ এবং কিছু দালাল মিলে গ্রাহকদেরকে ইচ্ছে মত হয়রানী করছে। সঠিক কাগজপত্র নিয়ে গেলে তারা বলে আপনার কাগজে ত্রুটি আছে, এগুলো সারিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু টাকার দিলে সেই ত্রুটিপূর্ণ কাগজ বৈধ বলে গন্য হয়।
সকল ঘাট ম্যানেজ করে কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও সঠিক সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না। ভুগতে হয় নানা ভোগান্তিতে। এখানে একটি কথা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত রয়েছে যে, ‘টাকা দেন, পাসপোর্ট নেন’। বাস্তবেও তাই হচ্ছে। কি অসহায়, আর কি ধনী। সকলের ক্ষেত্রেই একই ব্যবস্থা। এটা যেন তাদের নিত্য দিনের কাজ। সাধারণ পাসপোর্ট পেতে সরকারী হিসেবে মতে সময় লাগার কথা সর্বোচ্চ ২১ দিন। কিন্তু এই ২১ দিনের পরিবর্তে তা দীর্ঘ ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় গড়ায়। অন্যদিকে জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্ট পেতে সরকারী হিসেবে সময় লাগার কথা ১১ দিন, কিন্তু তাতেও চলে যায় মাসের অধিক সময়। ভোলা পাসপোর্ট অফিসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্নীতির খবর স্থানীয় পত্রিকাসহ আঞ্চলিক এবং জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা বহাল তবিয়তেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ তাদের এ অনিয়ম রোধ করতে পারছে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা, স্টাফ এবং অবৈধ দালাল চক্রের ক্ষমতার উৎস কোথায় ?
এ ধরনের নানান অনিময় আর দুর্নীতির খবর পেয়ে অনুসন্ধানে নামে ভোলার বাণীর টিম। প্রমানও পায় তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলার এক ব্যাংক কর্মকর্তা দৈনিক ভোলার বাণীকে জানান, গত ২ মাস আগে তিনি ইন্ডিয়ায় ডাক্তার দেখানোর জন্য পাসপোর্ট কারাতে যান। তার সকল কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও ওই সময়ে জমা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কারণ তিনি কোন (উপরী) টাকা দেন নি। তাই তাকে ঘুরতে হয় ১ সপ্তাহ। অবশেষে তার কাগজপত্র জমা নেন ঠিকই, কিন্তু তদন্তের ক্ষেত্রে এনওসি পত্রখানা রেখে দেন পাসপোর্ট অফিসে। তাই তদন্তে বড় ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। সর্বশেষ তিনি ২ মাস পর পাসপোর্ট হাতে পান।
ভোলার উপ-শহর খ্যাত বাংলাবাজার এলাকার শান্তি নামের এক জুয়েলারী ব্যবসায়ী জানান, আমি ঘুসের টাকা দেইনা দেখে আমাকে এই অফিসের বাংলাবাজার থেকে ১০ বার আনিয়েছে। আমাকে আজকে আসলে বলে ওমুক কাগজ আনেন। তার পরের দিনে আসলে বলে তমুক কাগজ আনেন। এভাবে অতিবাহিত হয় ১০ দিন। আমিও আইছি, কিন্তু ঘুসের টাকা দেই নি। কাগজপত্র জমা দিয়েই ছারছি। কিন্তু ১ মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে এখনও পাসপোর্ট হাতে পাইনি। আমি যদি তাদের দাবীকৃত ওই টাকা (উপরী) দিয়ে দিতাম তাহলে আজ আমাকে ঘুরতে হতো না এবং ভোগান্তিতে পোহাতে হতো না।
বরিশাল বিএম কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র হাসনাঈন আহমেদ জানান, আমার বাড়ী ভোলা শহরে। আমি পাসপোর্ট অফিসের সবাইকে চিনি। তারপরও আমার কাছে তারা নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি টাকা দাবী করে। আমি দেইনি বলে আমাকে দেড় মাস ঘুরিয়েছে।
বরিশাল বিএম কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র হাসনাঈন আহমেদ জানান, আমার বাড়ী ভোলা শহরে। আমি পাসপোর্ট অফিসের সবাইকে চিনি। তারপরও আমার কাছে তারা নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি টাকা দাবী করে। আমি দেইনি বলে আমাকে দেড় মাস ঘুরিয়েছে।
এদিকে ভোলার দৌলতখান থেকে আসা নুরুল হক নামের এক লোক ভোলার বাণীকে জানান, এই অফিসের আজিম স্যার আমার কাছ থেকে সরাসরি বাড়তি টাকা চেয়েছে। আপনি যদি বাড়তি টাকা দেন তাহলে আপনাকে ঘুরতে হবে না এবং কোন ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। সময় মত পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। কিন্তু বাড়তি টাকা না থাকায় কাগজপত্র জমা দিতে পারলাম না।
চরফ্যাশন থেকে আসা শাহ আলম নামের ব্যক্তি ভোলার বাণীকে বলেন, গতকালকে বলল আপনার কাগজপত্র ঠিক নাই, আর আজকে আজিম স্যারকে বাড়তি টাকা (উপরী) দিলাম তখনই আমার কাগজপত্র ঠিক হয়ে গেছে। জানি না পরে তারা আরো কোন টাকা দাবী করে কিনা।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মচারী ভোলার বাণীকে জানান, শুরু থেকেই আমি এই অফিসে চাকুরী করছি। কিন্তু সানি স্যার আর আজিম স্যারে মত এমন ঘুসখোর অফিসার আর একজনও আসেনি। তারা প্রতিদিন দালালের মাধ্যমে এবং সরাসরি নিজেরাও লাখ লাখ টাকা কামাই করে। অথচ আমাদেরকে একটি টাকাও দেয় না।
স্থানীয় এলাকার একাধিক লোকের সাথে আলাপ করলে তারা ভোলার বাণীকে জানান, এই অফিসটা (বর্তমানে নিজস্ব ভবন) এখানে আসার পর থেকে এলাকার পোলাপানগুলো খারাপ হয়ে গেছে। সবার হাতে হাতে টাকা। অফিসের স্টাফগুলো টাকা ছাড়া কারো সাথে কথা বলতেও চায় না। আমারা চাই এই পাপের কারখানা এই এলাকা থেকে চলে যাক। ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বিচার শাখা সুত্রে জানা গেছে, তাদের সাথে ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সানী ও আজিম’রা অসদাচরণ করেন। অথচ এই শাখার সাথে রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের একটি নিবিড় সেতু বন্ধন। সেটাও তারা মানছে না।
ভুক্তভোগীদের এ ধরনের নানান অভিযোগ সম্পর্কে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা আজিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভোলার বাণীকে জানান, এসব অভিযোগ পুরোপুরি সত্যি নয়। তিনি আরো বলেন, টাকা-পয়সা খরচ করে এখানে এসেছি, সামান্য কিছুতো নিতেই হয়।
ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক এস এম এ সানি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভোলার বাণীকে জানান, মাঝে মধ্যে পাসপোর্ট আসতে একটু দেরী হয়। টাকা-পয়সার মাধ্যমে পাসপোর্ট করিয়ে দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের ব্যাপারে তিনি বলেন, অফিসের কেউ কেউ নিতে পারে, তবে আমি খাই না। আমি কোন ধরনের দুর্নীতির সাথে জড়িত নই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়