পটুয়াখালী : পর্যটন কেন্দ্র নয়! তবু ও যে কোন পর্যটন কেন্দ্রকে হার মানাতে সক্ষম রাঙ্গাবালীর সাগর সৈকত। জাহজ মারার চর থেকে সোনার চর পর্য্যন্ত রাঙ্গাবালী উজেলার কুল ঘেষে দক্ষিনে বঙ্গোপ সাগরের বিরাট এলাকা জুরে ভিন্ন ভিন্ন নামে জেগে ওঠা চরগুলো বনাঞ্চলে ঘেরা সবুজ বেষ্টনী, সাথে থাকা ডুবো চর গুলো তলে তলে একে অপরের সাথে মিশে যেন মিতালী পেতেছে। কি না আছে এই সৈকতে। সুর্য্যদয় সর্য্যাস্তের চোখ জুরানো দৃশ্যতো আছেই, এ ছারাও হরিনীর ডাগর চোখের চাহনী, নানা প্রজাতির পাখির কলতান, বানরের কিঁচির মিঁচির, পাতি শৃগালের হুয়াক্কা হুয়া, বণ্য শুকরের পাল, সব মিলিয়ে অপরুপ সৌন্দর্য্যে ভরপুর। কি করে বুঝাবো প্রিয় পাঠক, নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যায়না। তাই একবার ঘুরে আসুন রাঙ্গাবালীর সাগর সৈকত।
দিনের শুরুতেই চোখে পরে পুব সাগরে ডিমের কুসুমের মত লাল গোলাকার পিন্ড সাগরের বুক চিরে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দারাচ্ছে। সারাদিন বিকিরন শেষে সন্ধা ঘনিয়ে আসলে আবার গোলাকার পিন্ড হয়ে পশ্চিম সাগরে পানির মধ্যে যেতেযেতে এক সময় টুপ করে ডুব দিয়ে পাতাল পুড়ির রাজ বাড়ীর অতিথি হয়ে যায়। সুর্য্যদয় সুর্য্যাস্তের এ দৃশ্য কার বা চোখ জুরিয়ে না যায়। সবুজ বেষ্টনীতে রয়েছে নানা আকারের ছইলা কেওরা গেওয়া গাছ। আরো আছে গোল পাতা, হারগুজি ও তাম্বুরা কাটার ঝোপঝার, যা ডাহুক কোড়া ছেনী (স্থানীয় নাম) পাখির অভায়রণ্য। বাইরে রয়েছে বালুর ধুম(স্তুপ)।
হিং¯্র প্রাণী নেই। বানর আর পাতি শৃগালেরা দল বেধে ধুমে এসে বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গিতে খেলা ধুলায় মেতে ওঠে। গাছে গাছে ঘুঘু পাখি,শালিক, কুকুয়া (স্থানীয় নাম) সহ নাম না জানা নানা প্রজাতির পাখি ছারাও বাবুই পাখির অন্ত নেই এখানে। বিকেল গরিয়ে এলে বক, সারস, শামুকখোল, মদন টাকরা উরে এসে আশ্রয় নেয় বড় গাছের মগডালে। তাদের কোলহলে মুখরিত হয়ে ওঠে সাগর সৈকত। গভীর রাতে কুকুয়া পাখির পুতপুত ডাক আর ডাহুক ডাহুকিরা কোয়াক কোয়াক সুরে জানিয়ে দেয় রাত ১২ টা। ঘরির কাটার সাথে মিলিয়ে দেখা গেছে দু চার মিনিটের বড় বেশি ব্যবধান হয়না। জেগে ওঠা চর গুলোর সাথে বিরাট এলাকা জুরে রয়েছে ডুবো বালু চর। জোয়ারের সময় এই চর পানিতে ডুবে অদৃশ্য হয়ে যায়, বিনা বাতাসে বড় বড় ঢেউ হুমরি খেয়ে পরে ডুবো চরে। তার মাঝে বালিহাঁস, কয়াল, গাংচিলেরা দল বেধে ভেসে বেরায় সাতার কাটে। জেলেদের নৌকা ট্রলার ব্যস্ত হয়ে ওঠে জাল ফেলার তাগিদে। জাল ফেলে ¯্রােতের টানে ভেসে যায় দুর থেকে বহু দুরে। ভাটার সময় বিরাট এলাকা জুরে জেগে ওঠে ধু ধু বালুচর।এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত দেখা যায়না রোদের আলোতে ঝিকিমিকি সোনালী রং ছরিয়ে দেয় চারিদিকে। শুরু হয় নানা প্রজাতির পাখির আগমন ও কলতান। গাংচিল, কেচিকাটা, কন্যাসী, চকোয়া, বক, সারসেরা (স্থানীয় নাম) ভিন্ন ভিন্ন যে যার দলে বসে গুজবে মেতে ওঠে, কেউবা হাটু জলে খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। তবে যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে পারলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ নীলাভূমি রূপালী দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে।
কীভাবে যাবেনঃ
সদরঘাট থেকে রাঙ্গাবালির লঞ্চে উঠে কোড়ালিয়া নামার পর ওখান থেকে উপজেলা সদর বাহেরচ পৌছাতে হবে সড়ক পথে । তারপর সিদ্ধান্ত সেখানথেকে সোনারচর, জাহাজমারা, তুফানিয়ার, শিপচরসহ সকল যায়গায় যাওয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যম রয়েছে।
কোথায় থাকবেনঃ
পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে রাত কাটানোর মতো নিরাপদ আরামদায়ক কোন ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে প্রশাসনের উদ্যোগে সোনারচরে পর্যটকদের জন্য ছোট্ট তিন কক্ষের একটি বাংলো নির্মান করা হলেও। জাহাজ মারা, তুফানিয়া এখনও নিরাপদ কোন হোটেল হয়নি। ইচ্ছে করলে রাতে এসে রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরে এসে থাকতে পারেন। এছাড়া রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প। সেখানে কিছুটা কষ্ট হলেও রয়েছে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply