রিপন হাওলাদারঃ
বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাস মহামারীর আকার ধারণ করেছে। বিশ্বে লকডাউনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশও। করোনা ভাইরাস নির্মূলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা,জনগণকে সচেতন করা সাহসী যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। এ পর্যন্ত এক হাজার এর বেশি পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৬ জন পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তেমনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগে ২০ জন পুলিশ সদস্য করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।
গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তীসহ সবাই এই দুর্যোগে আক্রান্ত সদস্যদের পাশে রয়েছেন। তাদের প্রতি সহমর্মিতার অংশ হিসেবে গুলশান বিভাগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের সূচনালগ্ন হতেই এর বিরুদ্ধে গুলশান বিভাগের করোনা যোদ্ধাদের মূল অস্ত্র ছিল পেশাদারিত্ব, মানবতা, নূতন উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনা আর সামাজিক দূরত্ব মানতে সবাইকে উদ্বুদ্ধকরণ। এই যুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রেরণা গুলশান বিভাগের গর্বিত পুলিশ সদস্যদের হার না মানার তীব্র মানসিকতা আর মানুষের প্রতি বিরল দায়িত্ববোধ।
করোনা মোকাবেলায় গুলশান বিভাগে কার্যক্রম ছিল দৃষ্টান্তমূলক।
লকডাউন চলা অবস্থায় গত ১ এপ্রিল রাতে ডিসি গুলশান- ডিএমপির ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট দেয়া হয়। পোস্টটি দেন গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।
পোস্টে লেখা হয়– ‘ করোনাভাইরাসের কারণে অঘোষিত লকডাউন চলছে দেশে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া প্রায় সব বন্ধ। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মার্চের বেতন পাননি, পাবেন কি-না সে নিশ্চয়তাও নেই। সমাজের এই নিম্নমধ্যবিত্ত চাকরিজীবী লোকেরা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন। তবে সামাজিক আত্মসম্মানের ভয়ে তারা সরকার বা স্থানীয়ভাবে কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারছেন না।
অসহায়,দুস্থ, কর্মহীন,নিম্ন আয়ের চাকুরিজীবী, নিম্ন মধ্যবিত্ত যাদের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাহায্য প্রয়োজন তাদের সাহায্যের জন্য মোবাইল নাম্বার সহ ইনবক্স করুন। পরিচয় গোপন রেখে সাধ্যমত সাহায্য করা হবে’।এরপর থেকেই লাগাতার সহযোগিতা করে যাচ্ছে পুলিশ।
০১ এপ্রিল থেকে কর্মহীন, অসহায়, দু:স্থ নিম্ন মধ্যবিত্ত/মধ্যবিত্তদের বাসায় তাদের পরিচয় প্রকাশ না করেই প্রতি রাতে গুলশান বিভাগের পক্ষ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও গুঁড়া দুধ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী প্রাণের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা সবাই নিম্নবিত্ত, গরিব দুস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষের কথা বিবেচনা করে সাহায্য সহযোগিতা করছি। তবে সমাজের অনেকেই নীরবভাবে জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছেন। তারা কারও কাছে হাত পাততে পারছেন না। তাদের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। পোস্টটি দেয়ার পরে আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি। অনেকে আমাদের ইনবক্সে তথ্য দিয়ে সাহায্যের আবেদন করছেন। আমরা তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তাদের সাহায্য করছি। ইতোমধ্যে অনেককে সাহায্য করা হয়েছে। তবে আমরা তাদের নাম-পরিচয় ও ছবি গোপন রাখবো।’
এর মধ্যেই প্রায় ৫,০০০ পরিবারের বাসায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে। এখনও একইভাবে কাজ চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ বিভাগ। আর পুরো বিষয়টি নিজে তদারকি করছেন সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।
তিনি বলেন, ‘ আমরা কৃতজ্ঞ সেইসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে। যারা এই মহতী কার্যক্রমে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন। ‘যারা হাত পাততে পারেন না’ তাদের সহায়তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবান আমাদের ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আমাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।
আমরা বিশ্বাস করি সবাই যার যার অবস্থান থেকে চেষ্টা করলেই এই বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply