মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৪ পূর্বাহ্ন

আঠারো মিনিটের ভাষণ ছিল ছন্দের বুলেট, শব্দের বুলেট

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৮ মার্চ, ২০২০
  • ৪২ Time View

         আফসার উদ্দিন খান ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনঃ

 

একজন নেতা না থাকলে, একজন যোগ্য অভিভাবক না থাকলে, সে জাতিকে কী পরিমাণ খেসারত দিতে হয় বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকার ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু-পরবর্তীকালীন বাংলাদেশের দিকে তাকালে সেই হৃদয় রক্তক্ষরণ করা চিত্ত আমাদের মানসগোচরে ভেসে ওঠে। মাত্র আঠারো মিনিটের অসামান্য একটি ভাষণ, যা একটি জাতির জন্য ছিনিয়ে এনেছিল অত্যুজ্জ্বল স্বাধীনতা। এ জন্য বিশ্বের দরবারে বঙ্গবন্ধু পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘পয়েট অব পলিটিকস’ হিসেবে। রাজনীতির সেই কবিকে বাঙালি জাতি হারিয়েছে এক বেদনাবিধুর নির্মমতায়। সর্বনাশা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের চাকা থমকে দাঁড়িয়েছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ভবনের সামনে। ঘাতকের কালো মেশিনগানের নিচে মুখ থুবড়ে পড়েছিল মানব সভ্যতার ইতিহাস। এই মর্মান্তিক

ট্র্যাজেডির অনেক বছর পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক গোপন নথি ফাঁস হয়েছিল। জাতির পিতা যেদিন সপরিবারে নিহত হন, সেদিন ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন অ্যাম্বাসেডরের পাঠানো একটি টেলিগ্রাফ। সেখানে লেখা ছিল- ‘দি কিলিং অব শেখ মুজিবুর রহমান রেন্ডার্ড দ্য নিউবর্ন বাংলাদেশ লিডারলেস’। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে বাঙালি জাতি নেতৃত্বহীন হয়েছিল, অভিভাবকহীন হয়েছিল, সে কথাটি আমাদের কাউকেই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নথি থেকে শিখতে হবে না। বঙ্গবন্ধুর গোটা বর্ণিল জীবনটাই একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই। বাঙালি জাতি সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে রক্তাক্ত যুদ্ধ করে অর্জন করেছিল স্বাধীন ভূখণ্ড। বোমারু বিমান ছিল না, ট্যাঙ্ক-কামান ছিল না, যুদ্ধজাহাজ কিংবা ডুবোজাহাজ কিছুই ছিল না। শুধু ছিল আঠারো মিনিটের ভাষণে বিধৃত

কতগুলো ছন্দের বুলেট, শব্দের বুলেট। তা দিয়েই অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত আধুনিক বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ হিসেবে দাবিদার পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে তাদের ৯৩ হাজার প্রশিক্ষিত দখলদার সেনাবাহিনীকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়েছিল। ওই সময় জাতির পিতা দুই হাজার মাইল দূরে পাকিস্তানের জেলখানায় বন্দি অবস্থায় ছিলেন। অথচ সেই কারাপ্রকোষ্ঠ থেকে সঠিকভাবে পরিচালনা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকে। এ জন্য ইতিহাসবিদরা বলেছিলেন, ‘বন্দি মুজিব ছিল মুক্ত মুজিবের চাইতে এক লক্ষ গুণ শক্তিশালী।’ এবার আমরা আসি মুজিববিহীন বাংলাদেশে। ১৫ আগস্ট যে মুহূর্তে বিশ্বের করুণতম ট্র্যাজেডি ঘটল

বাংলাদেশে, তখন আমাদের সবকিছুই ছিল। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিপরিষদ ছিল, পার্লামেন্ট ছিল, সংসদ সদস্যরা ছিলেন, নবনিযুক্ত গভর্নররা ছিলেন, সেনাবাহিনী-নৌবাহিনী-বিমানবাহিনী, পুলিশ-বিডিআর সবকিছুই ছিল। এ ছাড়া ছিল নবগঠিত একটি চৌকস রক্ষীবাহিনী। রাজনৈতিক কর্মীবাহিনীর ছিল বিদেশ থেকে পাওয়া ট্যাঙ্ক, বোমারু বিমানসহ সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র। একমাত্র ছিলেন না বঙ্গবন্ধু। ছিলেন না নেতা-অভিভাবক। আর এই একজন লোক ছিলেন না বলেই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট আমরা বিনা যুদ্ধে পরাজয় বরণ

করলাম। যুদ্ধ শুরু না হতেই আত্মসমর্পণ করে বসলাম। এরপর শুরু হলো ইতিহাস বিকৃতির পালা। আত্মপ্রতারণার গিলাপ দিয়ে গোটা জাতিকে আপাদমস্তক ঢেকে দেওয়া হলো। ছলচাতুরির কফিন দিয়ে দাফন করে দেওয়া হলো আমাদের যা কিছু ঐতিহ্যের, যা কিছু গর্বের, যা কিছু গৌরবের। মহান মুক্তিযুদ্ধকে ম্লান করে দেওয়া হলো বিকৃতির চাতুর্যতা দিয়ে। বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের চরিত্র হনন করে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলল। অপরদিকে খলনায়কদের এনে জাতীয় নেতৃত্বে অভিষিক্ত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হলো। তবে মিথ্যাচার দিয়ে ইতিহাস রচনা করা যায় না। ইতিহাসে মিথ্যার কোনো স্থান নেই; তাই সেসব খলনায়ক

ইতিহাসের স্বাভাবিক স্রোতেই ভেসে গেছে, ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। অন্যদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় নেতারা যথাযোগ্য মর্যাদায় তাদের স্থান করে নিয়েছেন। আজ প্রতিটি বাঙালির হূদয়ে তারা এক একটি শহীদ মিনার, এক একটি স্মৃতিসৌধ হয়ে অত্যুজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছেন। অন্তত দুটি কারণে আওয়ামী লীগের নাম বাঙালি জাতির ইতিহাসে চিরস্থায়ীভাবে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। এক. এই দলের নেতা বিশ্ব মানচিত্রে একটি নতুন জাতি ও নতুন দেশের জন্ম দিয়েছেন। দুই. এই দলটি জাতির এক মহাক্রান্তিলগ্নে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ তথা জাতির কান্ডারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি একুশ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে ছিল।

ইতিহাসে নিষিদ্ধ ছিল। তবে শেখ হাসিনা হাল ধরার ফলে তার কঠিন, কঠোর নেতৃত্বে একুশ বছর পর হলেও রাষ্ট্রক্ষমতায় অভিষিক্ত হয়েছিল। শেখ হাসিনা না থাকলে কত একুশ বছর পার হয়ে যেত তা কেবল ইতিহাসই বলতে পারত। আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। প্রতিবছরই এই দিনটি বাঙালির হূদয়ে এক নতুন জাগরণের বার্তা নিয়ে আসে। একই সঙ্গে এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। তাই পিতার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেশের সর্বস্তরে পালিত হচ্ছে ‘মুজিববর্ষ’। এই দিনে জাতির পিতাকে

চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ‘বঙ্গবন্ধু তুমি বলেছিলে, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তুমি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছ আর তোমার প্রিয় কন্যা শেখ হাসিনা মুক্তির লক্ষ্যে নতুন যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রয়োজন হলে ’৭১-এর মতো আমরা লক্ষ লাশ কাঁধে তুলে নেব তবু আমরা মুক্তির লক্ষ্যে ঘোষিত যুদ্ধে সূর্য শপথের সাথী হব। রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে আনব ফুটন্ত সকাল।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়