নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি পোড়ানো এবং নৌকা প্রতীক ভাংচুর মামলার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় খটশিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিশেষ কর্মিসভায় তিনি যোগদান করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে আসা সিদ্দিকুর রহমান ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়নাল আবেদিনকে পরাজিত করে জাতীয় পার্টি থেকে হাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
পরে নির্বাচনী নীতিমালা তোয়াক্কা না করে ২৬ এপ্রিল নির্বাচনী এলাকায় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘোড়ারগাড়িতে চড়ে বিজয় মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিদ্দিকুর রহমান নিজে। মিছিলটি নির্বাচনী এলাকার সিংগারোল-দহগা নামক স্থানে পাকাসড়কে পৌঁছলে সেখানে নির্মিত নৌকা প্রতীক সংবলিত তোরণ ভাংচুর করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত গেটটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
পরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়নাল আবেদিনের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে মারপিট, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন ২৭ এপ্রিল পরাজিত প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের ভাই জালাল উদ্দীন বাদী হয়ে সিদ্দিকুর রহমানসহ ১০৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনের বিরুদ্ধে পীরগঞ্জ থানায় দ্রুতবিচার আইনে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ পরবর্তীতে তদন্তসাপেক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুরসহ ১১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০১৬ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক সিদ্দিকুর রহমান চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ সময় ওই মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে যান সিদ্দিকুর এবং স্বপদে বহাল হন তিনি। শুনানি শেষে মামলাটি বিচারের জন্য নিম্ন আদালতে পাঠিয়েছেন হাইকোর্ট।
নিম্ন আদালতে মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এ অবস্থায় হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ করেন সিদ্দিকুর। এতে নিম্ন আদালতে আবারও থেমে যায় মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম। বর্তমানে বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য রয়েছে।
এ অবস্থায় সিদ্দিকুরসহ তার অনুসারীরা আওয়ামী লীগে যোগদান করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আকতারুল ইসলাম, সাবেক অর্থ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহারুল ইসলাম, পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মফিজুল হকসহ একাধিক নেতা জানান, সিদ্দিকুর বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখানে স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেয়া মামলার প্রধান আসামি হয়েও তিনি আওয়ামী লীগে কীভাবে যোগদান করলেন বা কোন স্বার্থে তাকে আওয়ামী লীগে যোগদান করানো হল- তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না।
তাদের অভিযোগ, বিশেষ সুবিধা নিয়ে মামলা থেকে বাঁচাতেই তাকে (সিদ্দিকুর) আওয়ামী লীগে যোগদান করানো হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মামলা থেকে বাঁচতে নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই দলে যোগদান করেছি। বঙ্গবন্ধু বা প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর বা পোড়ানোর ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক বলেন, কোনো বিশেষ সুবিধা নয়, কেউ আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে যোগদান করতেই পারে; এতে দোষের কিছু নেই।
ঠাকুরগাঁও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১২ সালে বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান স্বার্থ হাসিলের জন্য জাতীয় পার্টিতে এসেছিলেন। ঠিক একইভাবে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য আবারও আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সিদ্দিকুর নিজেই নির্বাচনী প্রতিহিংসা সৃষ্টি করে জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি চালিয়ে মামলায় পড়েছেন। তবে সিদ্দিকুর রহমান জাতীয় পার্টি ছেড়ে যাওয়ায় দলের কোনো ক্ষতি হবে না।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply