বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ১২:২৫ অপরাহ্ন

আশ্রয় নিয়েছে ৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা, অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় ৫ লাখ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
  • ৭৬ Time View

মিয়ানমারের রাখাইন (আরকান) রাজ্যে গত ২৪ আগস্ট রাত থেকে নতুন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১৫ দিনে ৩ লক্ষাধিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী জানিয়েছেন। যদিও জাতিসংঘের রির্পোটে বলা হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

নতুন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মতে, আশ্রয় নেওয়া ৩ লাখ ছাড়াও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় মিয়ানমারে এখনো ৫ লাখের উপরে রোহিঙ্গা রয়েছে। ওইসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চারদিকে ঘিরে রাখার কারণে তারা আসতে পারছেনা।

একটি সূত্র জানায়, ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী নতুন করে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, জ্বালাও পোড়াও শুরু করে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমরা পালিয়ে আসার জন্য সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অবস্থান নেয়। বিজিবি ও অন্যান্য আইশৃংখলাবাহিনীর কড়া বাধার মুখে বেশ কয়েকদিন সীমান্তে অপেক্ষার পর ঈদুল আজহার দিন থেকে মানবিক বিবেচনায় সরকার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নমনীয় হন।

এর পরেরদিন থেকে আজ পর্যন্ত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ভয়াবহ আকার ধারন করে। বিজিবি ও মানবিক কারণে আগের মতো আর রোহিঙ্গা ঠেকাতে হার্ডলাইনে না যাওয়ায় বানের স্রোতের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে থাকে বাংলাদেশে। সীমান্তের অন্তত ২২টি পয়েন্ট দিয়ে এই অনুপ্রবেশের ভয়াবহ প্রবনতা বেড়ে যায় বলে স্থানীদের দাবি। সীমান্ত পেরিয়ে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার টেকনাফ শাহ পরীর দ্বীপ থেকে উখিয়ার কুতুপালং পর্যন্ত রাস্তার দু,পাশে বনবিভাগের জায়গায় এরা অবস্থান নেয়। বিশেষ করে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, নতুন গড়ে উঠা বালুখালী ঢালার মুখ, থাইনখালী হাকিম পাড়া, পালংখালী তাজনিরমার খোলা, পালংখালীর বাঘঘোনা বস্তিতে প্রবেশ করছে।

অচিন এলাকায় যে যেখানে পারছেন সেখানেই মাথা গোজার ঠাঁই নিচ্ছেন। ফলে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় নতুন করে গড়ে উঠছে ঝুপড়ি ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের অভ্যান্তরে নতুন করে হাজার হাজার ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেছে নতুন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। সেই সঙ্গে প্রতিদিন বানের স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। যে যেখানে পারছে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে। প্রতিটি সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। শিশু-বৃদ্ধদের কোলে-কাঁধে করে নিয়ে আসছে তারা।

স্থানীয় কুতুপালং, বালুখালী বস্তির লালু মাঝি ও শামশু মাঝি জানান, পুরাতন ছাড়াও নতুন গড়ে উঠা বস্তিতে বিপুল পরিমান রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এ সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষাধিক। স্থানীয় সীমান্তবর্তী এলাকার বালুখালী গ্রামের জাফর ইকবাল জানান, ঈদের দিন থেকে যে হারে রোহিঙ্গার স্রোত আসছে তাতে এ সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া এলাকার জাকির হোসেন মংডু ছৈঝাপাড়ায় সহিংসতার আগের দিন রাজ মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে আর ফেরত আসতে পারেনি। তার বড় ভাই মৌলভী আবু জাফর তুমব্রু পশ্চিমকূল পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি জানান, ভাই জাকির হোসেন জানিয়েছেন মংডু ছৈঝাপাড়া, উকিলপাড়া, মংনিপাড়া, তামির ও বুডিদংয়ে এখনো প্রায় ৫ লাখের উপরে রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদেরকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছে যাতে পালিয়ে আসতে না পারে। সেখানে অনেক রোহিঙ্গা মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে মারা যাচ্ছে।

একই কথা বুচিদং এলাকার আব্দু শুক্কুরের। তিনিও জানান, ওইসব গ্রামগুলোতে মংডু টাউন এলাকান রোহিঙ্গা মুসলিমদের একত্রিত করে জিম্মি অবস্থায় বন্দী করে রেখেছে সেদেশে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা মৌলিক সমস্যায় ভুগছে। ইতিমধ্যে অনেক লোক সেখানে অভাব অনটনের কারণে মারা গেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়