(রাজৈর মাদারীপুরের মোশারফ কাজীর ছেলে হৃদয় হোসেনের মৃতদেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন। মানবপাচারের সাথে আন্তর্জাতিক মাফিয়া সহ বাংলাদেশের অনেক রাঘব বোয়ালরা জড়িত আছে বলে জানা যায়)
জেড এম ফেরদৌস :
শত চেষ্টা করেও থামছেনা মানবপাচার। অবৈধ পণ্য মাদকের মতো ভিন্ন ভিন্ন রোড পরিবর্তন করে হচ্ছে মানবপাচার। কখনও নৌকায় কখনোও ড্রামের মধ্যে কিংবা কন্টেইনারে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ পাচারের ব্যবসা। এই ব্যবসার সাথে আন্তর্জাতিক মাফিয়া সহ বাংলাদেশের অনেক রাঘব বোয়ালরা জড়িত আছে বলে জানা যায়। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে কমপক্ষে ১৭ জন বাংলাদেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে।
গত বুধবার তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্টের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। লিবিয়ার উত্তরপশ্চিম উপকূলের জুয়ারা থেকে সিরিয়া, মিসর, সুদান, মালি ও বাংলাদেশের অভিবাসীদের নিয়ে রওনা দেয় নৌযানটি। ঐ ঘটনায় সাগর থেকে ৩৮০ জনের বেশি আরোহীকে উদ্ধার করেছে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা মংগি স্লিম বলেন, ‘১৭ জন বাঙালি মারা গেছে এবং ৩৮০ জনের বেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে যারা লিবিয়ার জুয়ারা থেকে ইউরোপের পথে রওনা দিয়েছিল। গত কয়েক মাসে তিউনিসিয়ার উপকূলে বেশ কয়েকটি নৌযানডুবির ঘটনা ঘটেছে।
অভিবাসনের প্রত্যাশায় তিউনিসিয়া ও লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশে, বিশেষ করে ইতালিতে পৌঁছানোর জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। ইউরোপের প্রধান গন্তব্য ইতালিতে গত কয়েক বছরে অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রবেশের সংখ্যা কমে এলেও ২০২১ সালে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে।
বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে সংবাদের প্রতিবেদক অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসে মানব পাচারকারীর অন্যতম দালাল ইলিয়াস ফকিরের নাম। কে এই ইলিয়াস ফকির? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দালাল ইলিয়াস ফকির পিতা- আক্কাস ফকির, গ্রাম- বটদীয়া, পোস্ট- গোহালা, থানা- মোকসেদপুর, গোপালগঞ্জ। সে পূর্বেও বহু মানবপাচারের মতো অপরাধ সংঘটিত করে অবৈধ পন্থায় এবং অবৈধ রোডে মানুষকে বিদেশে পাঠানোর অপকর্ম করে শত শত মানুষের জীবন হানি ঘটিয়েছে। এবারও তার তত্ত্বাবধানে এবং তার সঙ্গীয় মানবপাচারকারীর মাধ্যমে ১৭ জন বাংলাদেশীর জীবন গেল ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবির মধ্য দিয়ে। এদের মধ্যে টেকেরহাট, ঘোষালকান্দি, রাজৈর, মাদারীপুরের মোশারফ কাজীর ছেলে হৃদয় হোসেন নির্মমভাবে মারা যায়।
বর্তমানে তার লাশ তিউনিশিয়ায় আছে। হৃদয় ছিল মাদারীপুরের সর্বজন স্বীকৃত একজন ভাল ছেলে। সম্পূর্ণ রাজৈর মাদারীপুর জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। হৃদয়ের পরিবার থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন আমাদের ছেলে হৃদয়ের লাশ যেন বাংলাদেশে ফিরে আনা হয়।
লিবিয়া থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় বাংলাদেশি যুবক হৃদয় কাজীর (২০) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার ঘোষালকান্দি গ্রামের মোশারফ কাজীর ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত রমজানের আগে মুকসুদপুর উপজেলার চরপ্রসন্নদী গ্রামের হাকিম দালালের মাধ্যমে চার লাখ ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে লিবিয়ায় পৌঁছায় হৃদয়। সেখানে দালালরা তাকে আটকে রেখে অতিরিক্ত এক লাখ টাকা আদায় করে। সেখান থেকে ইলিয়াস দালালের মাধ্যমে আরো তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা হয়। ইলিয়াসের বাড়িও মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামে।
সেই চুক্তি অনুযায়ী ১৯ জুলাই প্লাস্টিকের বোর্টেং মোট ৬১ জনকে নিয়ে ইতালির উদ্যেশ্যে রওনা হয়। অনেক দেশের সীমান্তে পৌঁছানোর পরও নিরাপত্তরক্ষীদের কারণে কোন দেশেই তারা নামতে পারেনি। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে সাগরে অনেক সময় ভাসতে থাকার কারণে হিট স্ট্রোকে ১৭ জন বাংলাদেশিসহ মোট ৩০ জনের মৃত্যু ঘটে। বাকিরা অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরে তুরস্কের কোস্টগার্ড এসে তাদের উদ্ধার করে। হৃদয়ের লাশ তুরস্কে আছে বলে জানিয়েছেন তার বন্ধু ও স্বজনরা।
একই বোর্টে থাকা হৃদয় কাজীর বন্ধু হৃদয় শেখ বলেন, ‘হৃদয় কাজী আমার কোলেই পানি পানি করতে করতে মারা গিয়েছে। আমিও অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছি। এছাড়াও একই উপজেলার ছাতিয়ানবাড়ী গ্রামের সাধন বিশাস, হোসেনপুর এলাকার জিন্নাত শেখ এবং শংকরদী গ্রামের সাগর সিকদারও চিকিৎসাধীন আছে।’
হৃদয় কাজীর কাকা মিরাজ কাজী জানান, আমার ভাতিজা ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছে। এখন আমাদের একটাই দাবি ওর লাশটা যেন শেষবারের মত একবার দেখতে পারি।
নৌকা ডুবিতে অবৈধ পন্থায় বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়ায় অনেক মানবপাচারকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও এদের অপকর্ম থামছেনা। প্রয়োজন কঠোর থেকে কঠোর তম পদক্ষেপ নিয়ে আইন প্রয়োগ করে প্রকৃত মানবপাচারকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করে অসহায় মানুষকে প্রতারকদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply