ইমরান হোসাইন:
তুরাগ নদীর পাশ দখল মুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কতৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ)। ৯ এপ্রিল থেকে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু হয়। অভিযানে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এই পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আমিন মোমিন হাউজিং, মধু সিটি রিভার ভিউসিটি, সিলিকন সিটি, আকাশ নীল, ওয়েস্টন সিটি, ঢাকা উদ্যান চন্দিমা হাউজিং, তুরাগ হাউজিং বসিলা হাউজিং, নাভানা পাইপ ফিটিংস গোডাউন, ৫ম-ই- নো কংক্রিট, ম্যাক্রো মটরস এন্ড পানি সাভিসিং সেন্টার ও ইব্রাহিম ওয়ার্কশপ সহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়। কয়েকটি ভবন সহ বালুর গদি উচ্ছেদ করা হয় ।
বিআইডব্লিউটিএ এর এই উচ্ছেদকে স্বাগত জানালেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর অজানা রহস্যে অনেকাংশে নিয়ম বহিঃভূত কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে । লীজ নেওয়া সম্পত্তি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্পত্তি বলে জোড় পূর্বক স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়। জমির কাগজ পত্র দেখাতে চাইলে ছুড়ে ফেলে দেয়। আদালতের হস্তক্ষেপকে অবজ্ঞা করা সহ কোন কোম্পানীকে সময় দেয়া আবার কোন কোম্পানীকে সময় না দেওয়া এসব অনিয়ম তুলে ধরে বিআইডব্লিউটিএ এর প্রতি অভিযোগ দিয়েছে অ্যাগ্রো ভিটা লিমিটেড কোম্পানী ।
কোম্পানীটি ২১০.০০শতাংশ জমি (বাপাউবো) কাছ থেকে লীজ নেয়। প্রকল্পের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ০৩-১১-২০০৯ সালে ২১.২০শতক প্রায় এবং ৩০-০৬-২০১১ সালে ৩২.৬৬ শতক প্রায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ( বাপাউবো) প্রকল্প সংযোগ সড়ক হিসাবে অনুমতি প্রধান করেন। প্রকল্পটিতে প্রায় দুই হাজার গাছ ছিল । প্রকল্পটি নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টের একটি রিটপিটিশন আছে । গত ১০ এপ্রিল হঠাৎ অ্যাগ্রো ভিটা লিমিটেডের উপর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় । এতে নেতৃত্ব দেন বিআইডব্লিউটিএ এর র যুগ্ন-পরিচালক ও ঢাকা নদী বন্দর নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা একেএম আরিফ উদ্দিন এবং নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান।
অভিযানে অবৈধ ভাবে স্থাপনা সহ প্রায় দুই হাজার গাছ নষ্ট করে দেয়া হয়। গাছ পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়ায় । নদীর দু-পারে স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতেই এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। আর নদীর দু-পারে স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে গাছ অপরিসীম ভূমিকা পালন করে । অথচ একেএম আরিফ উদ্দিনের নেতৃত্বে অ্যাগ্রো ভিটা লিমিটেডের দুই হাজার গাছ গুড়িয়ে দেয়া হয়। এতে কোম্পানীর প্রায় দুই কোটি টাকা ক্ষতি হয়। হাইকোর্টের রিটপিটিশনকে তোয়াক্কা না করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে তবে আদালতের হস্তক্ষেপ থাকলে সেটা আলাদা বিষয় । তাহলে অ্যাগ্রো ভিটা কোম্পানীর আদালতের হস্তক্ষেপ দেখা হলো না কেন। এমনকি কাগজ পত্র দেখাতে চাইলে তা ছুড়ে ফেলে দেয়া হয় এবং কোম্পানীর এক স্টাফকে চার ঘন্টা আনসার সদস্য ধারা বন্দি রাখা হয়।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের কোন কথাই তারা শুনেননি কথা বলতে গেলে গ্রেফতার করার হুমকি দেয়।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চে দুই দফায় তুরাগ নদের দু’পাড়ের প্রায় সাড়ে তিনশ’ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ওই সময় স্থানীয়দের মধ্যে বেশ কয়েকজন অবৈধ স্থাপনার সঙ্গে বৈধ স্থাপনা ভাঙ্গা পড়েছে বলে দাবি ওঠে। এর মধ্যে ঢাকার দারুস সালাম থানাধীন ছোট দিয়াবাড়ির বাসিন্দা মোহাম্মদ শওকতের দাবি, অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার সময় তার ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩০ শতাংশ জমির ওপর থাকা স্থাপনা ভাঙ্গা পড়েছে। ছোট দিয়াবাড়ির আরেক বাসিন্দা সেলিমের দাবি, তারই ২০ শতাংশ জমির ওপর থাকা বৈধ স্থাপনা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকালে ভাঙ্গা পড়েছে। তারা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে তারা সরকার বা বিআইডব্লিউটিএ-এর তরফ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। স্থানীয় মধু মেম্বারও এমনটাই দাবি করে বলেছেন, তাদের বাড়ির একাধিক বহুতল বাড়ি ভাঙ্গা পড়েনি। আবার নদীর ভেতরেও বহুতল বাড়ি আছে, যেগুলো ভাঙ্গা হয়নি। এছাড়া অভিযানকালে নদটির পশ্চিম দিকে সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের করা একটি সরকারী পাঁকা রাস্তার কিছু অংশ ভাঙ্গা হয়েছে। আর অভিযানের সময় স্থানীয় মেম্বার আবু তালেবের ঘেরের ২৫ লাখ টাকার মাছ ছেড়ে দেয়ার ঘটনা অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে স্থানীয়দের দাবি।
জানা গেছে ২০১৬ সালে একনেকের বৈঠকে ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণ্যফুলি নদীর দূষন বন্ধ ও নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় চলছে এই উচ্ছেদ অভিযান । কিন্তু এই উচ্ছেদ অভিযানের নামে আদালতকে অবজ্ঞা করা এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি আর যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ভুক্ত ভুগি ও এলাকাবাসিরা ।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply