ফারুক পাটোয়ারী :
রাজধানীতে যেখানে সেখানে অলিতে গলিতে নির্মাণ হচ্ছে ভবন। এসব ভবনের নেই কোন সেফটি সিস্টেম। ভবনের চারদিকে নেই নেট। যেকোন সময় ভবনের উপর থেকে ইট কিংবা লোহা পড়ে ঘটতে দূর্ঘটনা। প্রায় সময় এরকম অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কিছু ভবন মালিকদের গাফিলতির কারণে রাস্তায় চলাফেরা করা মানুষদের উপর নেমে আসে বিপদ।
উত্তরখান ভুইয়া বাড়ীর রোডে সাবেক কাজী অফিসের গলির পাশে মোঃ ফারুক আহমেদ ৫ কাঠা জমির উপর ৭ম তলা ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দেদার্সে। ভবনের কাজ চলাকালীন সময়ে একপথচারী ভবনের গলি দিয়ে যাওয়ার সময় তার মাথার উপর ইট পড়লে পথচারী মারাত্মক ভাবে আহত হয় এবং মাটিতে লুটেপড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আহত ব্যক্তিকে এলাকার লোকজন মৃত ভেবে তাকে মনসুর আলী মেডিকেলে ভর্তি করে। কিন্তু অল্পের জন্য তিনি বেঁচে যান। তার অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আহত ব্যক্তি ভবিষ্যতে কোন কাজকর্ম করে চলতে পারবেনা কিনা রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ।
এ বিষয় নিয়ে ভবন মালিকদের তার চিকিৎসা ও পরিবারের দেখাশুনার বিষয়ে তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। ঘটনার বিষয়টি নিয়ে এসআই গোবিন্দের সাথে কথা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আহত ব্যক্তি রবিউল (৪০), তাকে মনসুর আলী মেডিকেল ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এখনোও কেউ কোন অভিযোগ করেনি, করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রথমত একটি ভবন নির্মাণকালে রাজউকের অনুমতির স্মারক নং সহ সকল তথ্যাদি সম্মেলিত সাইনবোর্ড ভবনের সম্মুখে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। ভবনের যতগুলো ফ্লোর হবে ততগুলো কাজ ও কর্মচারীদের এবং পথচারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেফটি দিতে হয়। কিন্তু এই ভবনের মালিক সেফটি তো দূরের কথা টাকা খরচ একটু বেশি হবে বলে ভবন মালিক মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ভবনের সামনে তথ্যাদি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিলে ভবনের মূল কাহিনী ও থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার ভয়ে ভবন মালিক ফারুক সাহেব তথ্যাদি সাইনবোর্ডটি ব্যবহার করেননি বলে জানা যায়। গত একসপ্তাহ আগে সংবাদের প্রতিবেদকের একটি দল অফিস হতে অনুমতি ও এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ভবনটিতে গেলে সেখানকার ভবনের সামনে ফারুক সাহেবের কিছু লোকজনের সাথে তথ্যাদি সাইনবোর্ড না ঝুলানো এবং সেফটি বিষয়ে কথা বললে ফারুক সাহেবের লোকদের অযথা বাকবিতন্ডা করে। একদিন পরেই দুজন কথিত সাংবাদিক দিয়ে সংবাদের প্রতিবেদককে ফোন করানো হয়। কেউ বলে আমার মামার বাড়ী, আবার আরেকজন বলে আমার ভাইয়ের বাড়ী। সেখানে গিয়ে কোন ধরনের ডিস্ট্রাব করবেন না। সেখানে গিয়ে ডিস্ট্রাব করলে আপনাদের ভালো হবেনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের চারদিকে নির্ধারিত রাজউক নিয়মে কোন ছাড় না দিয়ে ভবনটি নির্মাণ করে যাচ্ছেন। রাজউকের নিয়ম অনুসারে ২৫% ছাড় দিতে হয়। এছাড়া কোন ভাবেই ভবন নির্মাণ রাজউকের নিয়মে হবেনা। এলাকার লোকজন আরোও জানায়, এই ভবনটি ৮-৯ ফিট রাস্তার মধ্যে কোন ভাবেই ৭ম তলা ভবন নির্মাণের জন্য প্লান পাশ রাজউক কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনা। তাহলে প্রশ্ন হলো কিভাবে পেল ভবন নির্মাণের অনুমতি। রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ার পর বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন আইনী পদক্ষেপ নিলেও এখনো বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ হয়নি রাজউক নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের কাজ।
এই ভবনের ব্যাপারে জানা যায়, এই ভবনটি অনেক ঝুকির মধ্য দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এলাকার একজন নাম না জানাতে ইচ্ছুক স্থানীয় ব্যক্তি দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশের প্রতিবেদককে জানান, এই ভবনের মালিকের ছেলেরা উশৃঙ্খল। ভবন নির্মাণের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ভবন মালিকের ছেলেরা বিভিন্ন মানুষের সাথে দূর্ব্যবহার করে বলে জানা যায়। লোক মুখে শোনা যায়, ভবন মালিকের ছেলেদের বিরুদ্ধে উত্তরখান থানায় মাদকের মামলা রয়েছে। এরকম অনেক ভবন নির্মাণ হচ্ছে রাজধানীতে, যাদের কোন আদিপাত্য খুজে পাওয়া যায় না। তাদের আয় রোজগারের ইতিহাস টানলে এগুলো নিয়ে দূর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল।
এসব উঠতি বড়লোকদের ধারণা ইট পড়ে মানুষ আহত হলে আর মরলে কি হবে! অল্প কিছু জরিমানা দিলেই সব কিছু মাফ হয়ে যায়।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply