রবিউল আলম রাজু :
রাজধানীর উত্তরা এখন মদের বাজারে পরিণত হয়েছে। উত্তরার প্রতিটি সেক্টরে একাধিক বারের সন্ধান মিলেছে। কোনটি চলছে প্রকাশ্যে আবার কোনটি গোপনে। উত্তরা আবাসিক এলাকার ছেলে মেয়েরা সন্ধ্যা হলেই কিং ফিশার ও নেস্ট রেস্টুরেন্ট বারের মতো এসব অবৈধ জায়গায় একত্রিত হয়ে ছুটে চলে বিভিন্ন লাইসেন্স বিহীন হোটেল গুলোতে মদ খাওয়ার জন্য।
এসব হোটেল গুলোতে খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে দিচ্ছে মদের সাপ্লাই। উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা এসে মটর সাইকেল বা প্রাইভেটকারে এসে মদ নিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। সংশ্লিষ্ট থানার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা পাশাপাশি থাকলেও কঠোর কোন নজরদারী দিচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। উত্তরা আবাসিক এলাকার ছেলেমেয়েরা ও তাদের পরিবেশ এখন সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। মদের বারকে ঘিরে বৃহত্তর উত্তরায় জমে উঠেছে রমরমা দেহ ব্যবসা সহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ। একটি নির্দিষ্ট স্থানে অ্যালকোহল বা মদ পানের জন্য প্রয়োজন লাইসেন্স। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সুপারিশে এ লাইসেন্স দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম। তবে অধিদফতর আর মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে শুধুমাত্র লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে উত্তরা অর্ধশতাধিক রেস্টুরেন্ট, ক্লাব আর হোটেলগুলোতে চলছে জমজমাট অবৈধ বারের ব্যবসা। রাজধানীর উত্তরার ডজনখানেক হোটেল-ক্লাবে সরেজমিন পরিদর্শন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন ক্লাবে এবং বাসা বাড়ীর মধ্যে রীতিমতো মিনিবার বানিয়ে বিক্রি করছে মদ। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অনুমোদন ছাড়া অ্যালকোহল পানের উৎসব চলছে। ক্লাবের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় অসহায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও পুলিশ। এসব ক্লাব ও বার কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র অনুমতির আবেদন করেই চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। ওই আবেদনই শেষ। অর্ধশতাধিক সদস্যকে মদের আড্ডায় মত্ত দেখা যায় সবসময়।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বারের একাধিক সদস্য জানান, তারা এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য স্বীকৃত নন। তথ্য নেয়ার জন্য কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে- জানতে চাইলে ক্লাবের একজন বলেন, ‘কথা বলার মতো তো কেউ নেই। চলতি বছরের অভিযান চালিয়ে উত্তরা থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিয়ার ও বিদেশি মদসহ অনেককে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) এবং র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন টিম। কিছু দিন পূর্বে রাজধানীর উত্তরার কিংফিশার বার থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার অবৈধ দেশি-বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগ। এ সময় কাস্টমার ও বার কর্মচারীসহ প্রায় শতাধিক জনকে আটক করা হয়। তাদের জরিমানা করা হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এরপরও বন্ধ হয়নি কোন ক্লাব বা বার পরিচালনা। অবৈধভাবে বার পরিচালনা ও মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগে অভিযান চালিয়ে জাপান বাংলাদেশ ক্লাবকে জরিমানা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
রাজধানীর ‘বনানী ক্লাবে’ দেদারছে চলে মদ বিক্রি ও পানের আয়োজন। বিষয়টি সবারই জানা। কিন্তু এরপরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট দফতরের। একই চিত্র রাজধানীর গুলশান এলাকার বিভিন্ন ক্লাবের। বার পরিচালনার আবেদন করেই যেন দায় শেষ। এরপর সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মদ বিক্রি হচ্ছে সেখানে। র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) প্রাণের বাংলাদেশকে বলেন, সরকার-কর্তৃক নিষিদ্ধ সবকিছুর বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান পরিচালিত হয়। উত্তরা কিংবা গুলশান এলাকায় অনুমোদন ছাড়া বার পরিচালনা কিংবা মাদক বিক্রির অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেই এবং ভবিষ্যতেও নেবো। সাধারণত একটি বারের লাইসেন্স নেয়ার জন্য নির্ধারিত একটি ফরম পূরণ করতে হয়।
জমির বৈধ কাগজপত্র, মালিক ও মালিকানার নাম, মালিকদের পরিচয়পত্র, জমির নকশা, স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনাপত্তিপত্র, পুলিশ ভেরিফিকেশন, ক্লাবের ট্রেড লাইসেন্স ও ক্লাবের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ সদস্য থাকা। অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনাপত্তিপত্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। আবেদনের ফি ৫০ হাজার টাকা। তিন ক্যাটাগরিতে বার পরিচালনার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রেস্টুরেন্টগুলোতে বার পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। বার পরিচালনার অনুমোদনের বিষয়টি সরকারের উচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কাজ।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply