(অসাধু প্রতিষ্ঠানের উপর আইন প্রয়োগ করে বাধ্যতামূলক গাড়ী পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট স্থান করা বাধ্যতামূলক সহ যদি রাজউক প্রতি সেক্টরে ২-৩টি করে পার্কিং ইয়ার্ড বিল্ডিং তৈরি করে, তাহলে যেমন কিছু লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং আসবে রাজস্ব আয়, তেমনি নিপাত যাবে উত্তরার যানজট।)
প্রাণের বাংলাদেশ ডেস্ক :
প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে রাজউকের পরিকল্পিত আবাসিক এলাকায় শপিংমল ও ক্লিনিক-হাসপাতালের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সৃষ্ট পার্কিংয়ে তীব্র যানজট- মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ এখন চরমে। উত্তরায় সড়কে অবৈধ পার্কিং, যানজটে নাকাল এলাকাবাসী। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা অংশের সোনারগাঁও জনপথ, রবীন্দ্র সরণি, শাহজালাল এভিনিউ, জসীমউদ্দীন রোড, শায়েস্তা খান এভিনিউ, গরীবে নেওয়াজ রোডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবৈধভাবে গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়।
এতে সড়কগুলোতে সৃষ্টি হচ্ছে অনাকাঙ্খিত যানজট। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব সড়কে চলাচলকারীদের। একাধিক এলাকাবাসী জানান, অবৈধ পার্কিংয়ের ফলে আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর মাত্র ৫ মিনিটের পথ, অথচ এ সামান্য পথ যেতেই সময় লাগে অনেক। এটা নিত্যকার ঘটনা হলেও সমাধানের উদ্যোগ নেই। তারা জানান, সকালে স্কুল-কলেজ ও অফিসগামী লোকজন যানজটের কথা মাথায় রেখে কাকডাকা ভোরে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ সময় আর যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রায়শই পেরে ওঠেন না। স্কুলে সময়মতো না পৌঁছলে শাস্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বলে জানায় উত্তরা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের এক ছাত্রী। সবচেয়ে বড় সমস্যা অ্যাম্বুলেন্সে আটকে থাকা মুমূর্ষু রোগীদের। সকালে শুরু হওয়া এ যানজট সারা দিনে ২-৩ ঘণ্টার জন্য কিছুটা শিথিল হলেও বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাড়ি থাকে অনেকটা অনড়।
জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা ও বিকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। এ সময় আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে গাড়ির লাইন থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে। অথচ সড়কের পাশে গড়ে ওঠা বহুতল মার্কেট, হাসপাতাল, ব্যাংক ও অফিসগুলোতে পার্কিংয়ের আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি এ যানজট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ট্রাফিক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গাজীপুর ও বাইপাইল রোড হয়ে শতাধিক পরিবহন প্রতিদিন ঢাকার রোডে চলাচল করে। প্রতিটি পরিবহনের যতগুলো গাড়ির রুট পারমিট থাকে বাস্তবে গাড়ি চলে তার তিন থেকে চারগুণ।
যানজটের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে গবেষক মহল জানায়, উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর মাত্র দুই কিলোমিটার সড়ক। কিন্তু, এ সামান্য পথেই রয়েছে আটটি বাস দাঁড়াবার স্থান (বাস স্টপেজ)। আবদুুল্লাহপুর, হাউস বিল্ডিং, বিএনএস সেন্টার, আজমপুর, রাজলক্ষ্মী, জসীমউদ্দীন রোড, কসাইবাড়ি ও বিমানবন্দর এ আট স্টপেজে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দখল করে যত্রতত্র একাধিক বাস দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে দূর গন্তব্যপথের এবং দ্রুতগামী গাড়িগুলোর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়ে কৃত্রিম ভাবে সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। যার ফলশ্রুতিতে দুর্ভোগ পোহায় হাজার হাজার চলাচলকারী।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অবৈধ পার্কিং ও অনুমোদনহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের। সরেজমিন বুধবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উল্লিখিত সড়কগুলোতে অবৈধভাবে পার্কিং ও বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুরে যানজটের বাস্তব এ চিত্র দেখা যায়। এ সময় রাজলক্ষ্মী থেকে বিএনএস সেন্টার গরীবে নেওয়াজ রোডে লুবানা হাসপাতাল ইবনে সিনা ল্যাবএইডের সামনে শতাধিক প্রাইভেট গাড়ির অবৈধ পার্কিং দেখা যায়। কসাইবাড়ি থেকে বিমানবন্দর ওভারব্রিজ পর্যন্ত সড়কে চলাচল বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় একাধিক বাস।
জসীমউদ্দীন রোড, হাউস বিল্ডিং, আজমপুর বিএনএস সেন্টার, রাজলক্ষ্মী এবং আবদুল্লাহপুরের প্রতি স্টপেজেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, রাইদা, ভিআইপি ২৭, বলাকা, প্রজাপতি, ছালছাবিল, আজমেরি গ্লোরি, ভিক্টর ক্লাসিক, বিআরটিসি, তুরাগসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যানারের বাস। উত্তরার বাসিন্দা সোহাগ জোয়াদ্দার প্রাণের বাংলাদেশকে জানান, তার বাসা ১০ নং সেক্টরে।
বাচ্চা পড়ে উত্তরার একটি স্কুলে। সকালে নিজ প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে স্কুলে পৌঁছতে ৫ মিনিটের পথ আধঘণ্টা লেগে যায়। আবার দুপুরে ছুটির পর বাসায় ফিরতেও আধঘণ্টা লাগে। বনানীতে অফিস জনৈক শান্তা ইসলাম জানান, সকাল ৯টায় অফিসে পৌঁছতে ভোর সাড়ে ৬টায় বের হন এবং অফিস শেষে হাউস বিল্ডিংয়ের বাসায় ফিরতে রাত ১০টা বাজে।
তিনি বলেন, এ যানজটের কারণে পরিবার ও ছেলেমেয়েদেরও তিনি ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। তিনি কর্তৃপক্ষকে এদিকে নজর দিতে অনুরোধ করেন। জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঢাকা উত্তরের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) প্রাণের বাংলাদেশকে বলেন, বিভিন্ন রোডের মার্কেট, হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পার্কিং থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পার্কিং না থাকা সত্ত্বেও অনুমোদন দেয়ার কারণে রোডে গাড়ির চাপ হয়। তিনি আরও বলেন, যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দায়িত্ব সংশ্লিষ্টরা হাসপাতাল, মার্কেটগুলোতে পার্কিং নিশ্চিত করলে যানজট কমে আসবে।
রাজধানীর পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার মধ্যে উত্তরা অন্যতম। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের রুলস রেগুলেশনস মাস্টার প্লান সিস্টেম করে একটি মডেল পরিকল্পিত এলাকা তৈরি করে প্লট বরাদ্ধের মাধ্যমে এ্যালটমেন্ট দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে। কোনটা বাণিজ্যিক হবে, কোনটা আবার আবাসিক, সবকিছুর বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন থাকলেও আবাসিক এলাকার মধ্যে অনেক প্লট মালিকরা এবং ভাড়াটিয়া মিলে গড়ে তুলেছে অনুমতি বিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক, মার্কেট, কাঁচা বাজার ও স্কুল-কলেজ। উত্তরায় অবস্থিত ইবনেসিনা হাসপাতাল, ল্যাব এইড, পপুলার, লুবানা হাসপাতাল এন্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, শিন শিন হাসপাতাল, আই কেয়ার হাসপাতাল, ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ফরাজী ডেন্টাল সহ উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল।
অন্যদিকে স্কলাষ্টিকা স্কুল, ৭ নং সেক্টর উত্তরা হাই স্কুল, মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, হাবিবুল্লাহ মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজ, শান্তা মরিয়াম, জমজম মার্কেট, মাস্কট প্লাজা, নর্থ টাওয়ার, রাজলক্ষী, আলাউদ্দিন টাওয়ার, আমির কমপ্লেক্স, কুশল সেন্টার, রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেট, এছাড়াও বেশ কিছু সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে উত্তরা আবাসিক এলাকার মধ্যে।
এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিসরে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে আগতদের গাড়ী রাখতে হলে গুণতে হয় ২-৫শত টাকা। এই কারণে এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে গাড়ী গুলো বেশির ভাগ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে সড়কের এক তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে। যে কারণে প্রধান সড়কটি অবৈধ গাড়ী পার্কিংয়ের কারণে হয়ে যায় সরু। এর মধ্যে থেমে থাকে রিক্সা, ফলে আসা যাওয়া করতে পারেনা গাড়ী, ফলে সৃষ্ট হয় বিশাল যনজটের। উত্তরা আবাসিক এলাকার যানজটের বিষফোঁড়া এসব প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পার্কিংয়ের বিষয়ে কঠোর না হলে এবং আইনগত ব্যবস্থা না নিলে এই সমস্যা আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
যা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ কন্ট্রোল করতে পারবেনা বলে দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশকে জানায় হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের পরিচালক জিয়াউল হক। সিস্টেম লসের এই প্রক্রিয়ায় রাজউকের নিয়ম ভেঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার কারণে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে গাড়ী পার্কিংয়ের জায়গাটিকেও প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগিয়ে অধিক মুনাফা লুফে নেওয়ার কারণে সব গাড়ী পার্কিং হয় এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে থাকা সিটি কর্পোরেশনের রাস্তায়। যানজটের প্যারেশানিতে উত্তরায় বসবাসরত মানুষ হাপিয়ে উঠেছে। এভাবে প্রধান উত্তরার আবাসিক এলাকার সেক্টর পেরিয়ে যানজটের বিস্তৃতি ঘটেছে আব্দুল্লাহ্পুর থেকে মৈনারটেক, অন্যদিকে উত্তরখান মোড়, দক্ষিণখান মোড় হয়ে এয়ারপোর্ট, হাজী ক্যাম্প, কসাই বাজার সহ সবই এখন যানজটের ডিপোতে পরিণত হয়েছে। আসছে ট্রেন, যাচ্ছে ট্রেন, প্রতি ১৫ মিনিট পর পর একটি করে ট্রেন আসা যাওয়া করে। মাঝে মাঝে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায় এমন সংবাদও হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
চলছে অনুমোদনহীন অটোরিক্সা সহ বিভিন্ন গাড়ী। উত্তরার আবাসিক এলাকা সহ এর আশেপাশে সকল সেক্টর এবং সেক্টরের বাহিরের এলাকার সকল প্রধান সড়ক গুলো এখন যানজটে পরিপূর্ণ থাকে। এসব যানজটের সময় সীমা কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে ৩-৪ ঘন্টা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। অন্যদিকে আব্দুল্লাহপুর থেকে এয়ারপোর্ট মোড় পর্যন্ত বড় ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কটি সবসময় জ্যাম লেগে থাকে। এয়ারপোর্টের সিএনজি ও আব্দুল্লাহপুরের পাম্পে গ্যাস ও তেল নিতে আসা গাড়ীর লাইন থাকে প্রধান সড়ক পর্যন্ত।
সবকিছু মিলে উত্তরা এখন যানজটের মডেল শহরে পরিণত হয়েছে। অফিস থেকে শুরু করে ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলে আসা যাওয়া যানজটের কারণে অভিভাবকদের উপরে বাড়তি চাপ, জীবনের ঝুঁকি সবকিছু মিলে এখানে বসবাস করা একটি দুর্বিষহ বিষয় হয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত জ্যামের কারণে ধূলার প্রচন্ড বলয় তৈরি হয়ে আকাশে বাতাসে সবসময় উড়ে বেড়ায়। যে কারণে এখানে বসবাস করা প্রায় মানুষ এলার্জি সহ বিভিন্ন ধূলাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছে। এর মধ্যে আবার রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের স্প্রে। রাস্তার ধূলা এবং বিষাক্ত স্প্রে মিলে যে ককটেল তৈরি হয় এর মধ্যে চলাফেরা করা মানুষ দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
এ বিষয় নিয়ে উত্তরার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের দাবী রাজউক সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মেয়র যদি গাড়ী পার্কিং এবং যানজট নিরসন এই বিষয় গুলোর উপর নজরদারী দিয়ে অসাধু প্রতিষ্ঠানের উপর আইন প্রয়োগ করে বাধ্যতামূলক গাড়ী পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা করে এবং রাজউক প্রতি সেক্টরে ২-৩টি করে পার্কিং ইয়ার্ড বিল্ডিং তৈরি করে, তাহলে যেমন কিছু লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং আসবে রাজস্ব আয়, তেমনি নিপাত যাবে উত্তরার যানজট।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply