দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ :
ভালুকা গ্রাম ও ভালুকা বাজারকে কেন্দ্র করেই পরবর্তী সময়ে ভালুকা থানা ও ভালুকা উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে। ভালুকা নামকরণ বিষয়ে বেশ কয়েকটি জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। এই জনশ্রুতি গুলোর মধ্যে তিনটি জনশ্রুতিই সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। এই তিনটি জনশ্রুতির একটি হলো বৃটিশ শাসন যখন বাংলাদেশে পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন নীলকর সাহেবগণ তাঁদের নিজস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে বিভিন্ন জায়গায় নীলকুঠি স্থাপন করেন। নীলকুঠি স্থাপনের পর নীলকর সাহেবগণ মাঝে মধ্যে শিকার করতে বের হতেন। শিকার করতে বের হয়ে নীলকর সাহেবগণ বনে-জঙ্গলে বাঘ, ভাল্লুক দেখতে পেতেন। আর এ কারণেই নীলকর সাহেবদের কাছে এই এলাকা ভল্লুক এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ভল্লুক এর অপভ্রংশ হিসেবে উৎপত্তি ঘটে ভালুকা নামের। দ্বিতীয় জনশ্রুতি হচ্ছে, বর্তমান ভালুকা বাজারের দু’টি অংশ রয়েছে। এর একটি হচ্ছে পূর্ব অংশ, অন্যটি হচ্ছে পশ্চিমাংশ। পূর্ববাজারসহ গোটা ভালুকাই ছিলো ভাওয়াল পরগণার অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য ভালুকার পশ্চিম বাজার ছিলো মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজ শশীকান্তের জমিদারির আওতাভূক্ত।
সেখানে জঙ্গলের ভেতর একটি মাজার ছিলো। এর খাদেম ছিলেন ওয়াহেদ আলী ফকিরের পিতা ইন্নত ফকির। মরহুম খান সাহেব আবদুল্লাহ চৌধুরীর নির্দেশে তাঁর সমসাময়িক বেশ ক’জন বিশ্বস্ত লোক মনসুর আলী খান, জয়েদ আলী ও জয়েদ খানের সহযোগিতায় ভালুকা বাজার সৃষ্টি হয়। পূর্ব বাজারে একটি কাঁচারী ঘর ছিলো। সেখানে ভাওয়াল রাজার নামে খাজনা আদায় করা হতো। ভাওয়ালের কাঁচারীর নাম হয়ে ছিলো ভাওয়ালের নাম অনুসারেই। পরবর্তী সময় বাজারসহ গ্রামের নামকরণ হয় ভালুকা। ১৯১৭ সালে গফরগাঁও থানাকে বিভক্ত করে ভালুকা থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তৃতীয় জনশ্রুতিটি হচ্ছে ভালুক চাঁদ মন্ডল ছিলেন আদিবাসী কোচ বংশের সর্দার। ভালুক চাঁদ এর নামানুসারে ভালুকা নামের সৃষ্টি হয়েছে। উথুরা ইউনিয়নে ও বর্তমান ডাকাতিয়া অঞ্চলে কোচ বংশের লোকজনের অধিবাস এখনো রয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমানে কোচ বংশের লোকজন বর্মণ পদবী ধারণ করেছে।
শিক্ষা:
শিক্ষার হার=৪৯.৮%। মোট সাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন জনগন: ১৭৯৮৬১। মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৭টি (সরকারী ৯৪টি, বেসরকারী রেজিষ্টার্ড ৩৫টি, আন রেজিষ্টার্ড ১টি, উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ৮টি তার মধ্যে কিন্ডার গার্ডেন ৬টি, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা ১১টি, উচ্চ মাদ্রাসা সংলগ্ন ৩৭টি, কমিউনিটি ২৫টি), নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১১টি, ৯ম শ্রেণীর অনুমতি প্রাপ্ত বিদ্যালয় ৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩টি, স্কুল এন্ড কলেজ ৩টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১টি, ডিগ্রী কলেজ ২টি (সরকারী), ফাযিল মাদ্রাসা ৩টি, আলিম মাদ্রাসা ২টি, দাখিল মাদ্রাসা ৩৬টি।
অর্থনীতি:
প্রধান খাত-শিল্প। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া কৃষি ও মৎস্য খাতও অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে।
নির্বাচন সংক্রান্ত:
নির্বাচনী এলাকা ১৫৬-ময়মনসিংহ ১১। ভোটার সংখ্যা পুরুষ ১১৪৪২২ জন, মহিলা ১১৯৩৯৭ জন, মোট ২৩৩৮১৯ জন। বর্তমান সাংসদ ডাঃ আমানুল্লাহ আমান , এম পি বিবিধ শিল্প অঞ্চল ও শিল্প: ভালুকার হাতিবেড় গ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কুমির প্রজনন খামার রেপটাইলস। আরো রয়েছে টেক্সটাইল মিলস, সিরামিক শিল্প, স্পিনিং মিলস, মাছ ফিড, চালের মিল, মোটর মিলস, গ্লাস কারখানা,এবং দক্ষিণ ভালুকায় রয়েছে ভারী শিল্প ও আন্তর্জাতিক মানের পোশাক শিল্পাঞ্চল। ভালুকার মোট আয়তনের ৩১.৭% (৪৭৩৫৬ বর্গকি মি) জমির উপর শিল্পকারখানা অবস্থিত।
প্রাকৃতিক সম্পদ:
কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এই উপজেলায় অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩৪৪.১৩ হেক্টর জমি নিয়ে এই জাতীয় উদ্যানটি গঠিত। এছাড়া মোট বনভূমি ২৩০৭৮.২৬ একর। বালু মহল আছে।
নদীসমূহ:
ভালুকা উপজেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে খিরু নদী সুতিয়া নদী, কাওরাইদ নদী, বাজুয়া নদী, লালতি নদী ও মিয়াবুয়া নদী।
কৃষি: মোট জমি ৪৪৪০৫ হেক্টর। এক ফসলী জমি ৫২২৩ হেক্টর, দুই ফসলী জমি ১৯৫৩৮ হেক্টর, তিন ফসলী জমি ১৬৮৯৭ হেক্টর। নীট ফসলী জমি ৪১৬৫৮ হেক্টর, মোট ফসলী জমি ৯৪৯৯০ হেক্টর, ফসলের নিবিড়তা ২২৮%। বর্গাচাষী ৮০০০ জন, প্রান্তিক চাষী ২৪০১১ জন, ক্ষুদ্র চাষী ৯০০০ জন, মাঝারি চাষী ৮৩২৮ জন, বড় চাষী ২০০০ জন। কৃষি ব্লকের সংখ্যা ৩১টি, কৃষি বিষয়ক পরামর্শ কেন্দ্র ৩১টি, সয়েল মিনিল্যাব ৫টি, বিএডিসি বীজ ডিলার ১৯ জন, বিসিআইসি সার ডিলার ১০ জন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র:
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১টি (৫০ শয্যাবিশিষ্ট), পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭টি, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৬টি। সরকারী অ্যাম্বুলেন্স ১টি।
পেশা: কর্মজীবী: ১৪৯,৫২৩জন (৪০.৮%) ; কর্মসন্ধানি: ২৮৬১জনগৃহস্থালির কাজ: ১০৭,৬০৫জন(২৯.৪%) কোন কাজ করেন না: ১০৬,১৯২জন(২৯%) টেলিযোগাযোগও পোষ্টাল সুবিধা :
ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ১টি, টেলিফোন কোড ০৯০২২, পোষ্টাল কোড ২২৪০।
বিনোদন:
ভালুকায় রয়েছে তেপান্তর সুটিং স্পট , ড্রীম হলিডে রিসোর্ট, আলাউদ্দিন রিসোর্ট, কুমির খামার, মোতালেবের সৌদিয়া খেজুর বাগান।
আদমশুমারী: মোট জনসংখ্যা=৪৩০,৩২০ জন (২০১১ সনের আদমশুমারী অনুযায়ী), পুরুষ=২১৭,১৩৪ জন, মহিলা=২১৩,১৮৬জন। মুসলিম=৯৪%, হিন্দু=৫%, অন্যান্য=১%। জনসংখ্যার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৬৯.০৬ জন, মোট খানার সংখ্যা ৭২,০৬৯টি, বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৫৪%,
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply