শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৬:৩৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করলে তার ক্ষতি হবে না: শাজাহান খান আগের মতোই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরেকটি গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে: হানিফ হিন্দি সিনেমায় নৈতিকতা-মূল্যবোধের অভাব রয়েছে: কাজল যার আইনি প্যাঁচে অভিযুক্ত হলেন ট্রাম্প শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ দেশে খাদ্যের অভাব নেই: শিক্ষামন্ত্রী রাজধানীর উত্তরখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা রামনা ইউনিয়ন প্রবাসী সংগঠনের ইফতার সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম সৌদি আরবে সাময়িকভাবে ভারত থেকে চিংড়ি আমদানি নিষিদ্ধ অন্য মামলায় শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

করোনাকাল ও ঘুড়ি ওড়ানো বিকেল

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০২০
  • ৪২ Time View

 

 

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ

 

আকাশের দিকে চোখ মেললেই ঘুড়ির লড়াইয়ের দৃশ্য! অন্য সময় তাদের দেখা মেলা ভার। করোনার হালে নেটপ্রেমী কিংবা স্মার্টফোনে বুঁদ হওয়া তরুণ প্রজন্মকে মাঠে ফেরাতে দারুণ কাজ করেছে ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দ। গ্রাম বা শহরে এখন ঘুড়ি ওড়ানো খেলা আধুনিকতায় অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেছে। শিশুরা বড় হচ্ছে খাঁচার মধ্যে। ঘরে বসে শহরের শিশুরা কম্পিউটার বা ভিডিও গেইম খেলে সময় কাটায়। যারা মাঠে যায়, তারা ফুটবল বা ক্রিকেট খেলে। গ্রামাঞ্চলের শিশুদের মধ্যেও ক্রিকেট খেলার জোয়ার বয়ে গেছে। তবে ঘুড়ি ওড়ানো খেলা একেবারে হারিয়ে যাচ্ছে।

কবিতার ভাষায় ‘আমাদের যুুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা, তোমরা এ যুগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা। আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি, তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।’ সুফিয়া কামালের ‘আজিকার শিশু’ কবিতাকে মনে করিয়ে দেয় শৈশবে ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দময় স্মৃতি।

স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা যেমন ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনই অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় বড়রাও ঘুড়ি উড়ানোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন বিকেল হলেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিকাংশ ভবনের ছাদ এবং গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ময়দানে দেখা মিলছে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব। ঘুড়ি এক প্রকারের হাল্কা খেলনা, যা সুতা টেনে আকাশে ওড়ানো হয়। পাতলা কাগজের সঙ্গে বাঁশ থেকে বানানো চিকন কঞ্চি লাগিয়ে সাধারণত ঘুড়ি তৈরি করা হয়।

এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ও নকশার ঘুড়ি রয়েছে। ঘুড়ি ওড়ানো একটি মজার খেলা। বহু দেশে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ঘুড়ি ওড়ানো একটি অবসর বিনোদন। বিচিত্র নাম রয়েছে এসব ঘুড়ির। ডাক ঘুড়ি, সাপ ঘুড়ি, মাছ ঘুড়ি, ব্যাঙ ঘুড়ি, মানুষ ঘুড়ি, ঘুড্ডি ঘুড়ি, ঈগল ঘুড়ি ও তারা ঘুড়ি।

আর এই লম্বা ছুটিতে বাঙালির ঐতিহ্য রঙিণ ঘুড়ি নিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিকেল হলেই শুরু হয় উপজেলার গোবিন্দাসী পুরাতন ফেরীঘাট এলাকার খোলা জায়গায় ঘুড়ি উৎসব। শুধু গোবিন্দাসী নয়। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খোলা মাঠ, বাসার ছাদে ঘরবন্ধি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ঘুড়ি উড়ানো উৎসব করে আসছে। প্রতিযোগিতা করছে ঘুড়ির সুতোয় কাটাকাটি। এ যেন করোনাকালীণ ক্লান্তি দূর করার এক বিনোদন।

উপজেলা পৌর শহরের স্থানীয় প্রভাতী কিন্ডারগাটেনের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র কিরণ কে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ। আগে নিয়মিত স্কুলে যেতাম। বিকেলে মাঠে খেলাধুলা করতাম। এখন তো আর সেটা সম্ভব নয়। সবসময় রুমে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না। এদিকে মা বাবা বাড়ী থেকে বের হতে দেন না। পবিত্র ঈদুল ফিতরের কারণে এখন একটু আধটু বের হতে দেন। অন্যদিকে একঘেয়েমী কাটাতে বিকেলে এখন বন্ধুরা মিলে ঘুড়ি ওড়াই।

করোনাকালে ঘুড়ি ওড়ানোর বিষয়ে সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম কিসলু বলেন, ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য আগের মতো আর চোখে পড়ে না। সাধারণত শীতকাল থেকে বসন্তকাল পর্যন্ত ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যেত। কিন্তু এবার গরমের মধ্যে গেল রমজান মাস থেকে ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। লকডাউনে ঘরবন্দী তরুণরা ঘরে থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে অলস সময় পার করছে। এই অলসতা দূর করতেই তরুণদের পাশাপাশি বড়রাও এসেছে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য।

তিনি আরো জানান, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি কবে হবে তা বলা যাচ্ছে না। আবার বাড়ীতে দীর্ঘদিন অবস্থান করার ফলে অনেকের মধ্যেই ক্লান্তি ও অবসাদ ভর করছে। অনেকেই ঘুড়ি উড়িয়ে সেই ক্লান্তি ও অবসাদ ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। মুক্ত আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে বদ্ধ হয়ে থাকা এক মানসিক যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ্আলাম প্রামাণিক বলেন- ঘুড়ি উড়ানো একটি গ্রামাঞ্চলের প্রাচীণ উৎসব। কালের প্রবাহে তা বিলুপ্তির পথে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ঘরের চার দেয়ালে বন্ধি হয়েছে পড়েছে। এসব বন্ধি জীবন থেকে বের হয়ে বাসা বাড়ির খোলা মাঠে মুক্ত আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা বিনোদন উপভোগ করছে। শুধু ওরা নয়, যুক্ত হয়েছে নানা বয়সের ঘরবন্ধি মানুষ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়