পরিস্থিতি অনুকূলে না আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না : প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের প্রকোপ না কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না- শিক্ষামন্ত্রী। বিশেষজ্ঞদের মতামত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনা প্রতিরোধ সিস্টেম জোরদার করা। কারণ করোনা হতে পারে অনেক দীর্ঘ মেয়াদি বিপদ।
শের ই গুল :
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে। অনেক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কবে খুলবে, তা কেউ জানে না। শুধু কিছুদিন পরপর একটি সাংবাদিক সম্মেলন কিংবা কোন ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হয় নতুন করে সময় বাড়ানো হয়েছে। করোনা মহামারীতে সরকারের শক্ত অবস্থান এবং বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান সহ সকল উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখলেও কাঁচা বাজার, মার্কেট থেকে শুরু করে সবকিছুই চলছে এমনকি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার নাকের ডগায় বসেছে মেলা। সেখানে প্রতিনিয়ত স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়েরা ভীড় ভাট্টা করছে। হাজার হাজার মানুষ আসছে-যাচ্ছে।
এরকম হয়তো দেশের অনেক জায়গায় লোক সমাগমের প্রক্রিয়া করে এক শ্রেণির মানুষ সরকারের করোনা নিধন পদ্ধতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে টাকা কামানোর ধান্দা। সব আইন-সব পদ্ধতি সব নিয়ম কানুন, সব ভয় ভীতি শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের বেলায়। সরকারের বিকল্প পদ্ধতি অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান, তাদের পরীক্ষা সবকিছু মিলে মনে হয় সারাজীবন ফেল করা শিক্ষার্থী এবার পাবে উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি।
বিশ্লেষকদের মতামত আগামী প্রজন্ম কিভাবে এই বিষয়টিকে উৎরিয়ে উঠবে, সত্যি একটি কঠিন সময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারীদের একটিই কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। লক্ষণও আশাব্যঞ্জক নয়। যদি এমন হয় করোনা ভাইরাস আগামী ১০ বছরেও একই অবস্থানে থাকবে, তখন জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার কি হবে? আবার এই ব্যবস্থার মধ্যেই অনেক সময় ক্ষ্যাপন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলে হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো আর কি শিক্ষার্থীরা খুজে পাবে। কারণ আমরা সবাই বুঝি সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
এদিকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও শহরের সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করছে, বেশির ভাগ সে সুবিধার বাইরে। সরকার টেলিভিশনে রেকর্ড করা ক্লাস সম্প্রচার করছে, সেখানে উপস্থিতি ভালো নয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত এখনো নেই। এসএসসি পরীক্ষা অনলাইনে হলেও ফল প্রকাশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে জানা যায় শিক্ষামন্ত্রীর অনলাইনে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায়। সব মিলিয়ে পড়াশোনা ও পরীক্ষা ছাড়াই চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এর চেয়েও ভয়ের বিষয় হলো, শিক্ষার্থীদের একাংশ পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়তে পারে। বাল্যবিবাহের হারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তে পারে শিশুশ্রমও। এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে ক্লাস করিয়ে পুরো টিউশন ফি নিচ্ছে।
অভিভাবকেরা তা দিতে রাজি নন। বিপরীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বেতন না পাওয়া ও চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই পরিস্থিতি নজিরবিহীন। প্রবীণ শিক্ষক নেতা কাজী ফারুক আহমেদ দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশকে জানান, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পর এত দীর্ঘ সময় ধরে আর কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকেনি। কোনো পাবলিক পরীক্ষাও বাতিল হয়নি।
সংগত কারণে সরকার আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পথেই হাঁটছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে আরেক দফায় ছুটি বাড়ানো নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম আল হোসেন দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশকে বলেছিলেন, আপাতত বিদ্যালয় খুলছে না। তিনি জানান, তাঁরা একাধিক বিকল্প নিয়ে এগোচ্ছেন।
যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অক্টোবরে খোলার মতো পরিস্থিতি হয়, তাহলে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে মূল্যায়ন করা হবে। আর নভেম্বরে খুললে আরেক ধরনের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মূল্যায়ন হবে। আর তাও সম্ভব না হলে বছরের শুরুতে যে আড়াই মাস ক্লাস হয়েছিল, তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পৌনে ৩ কোটি। ইতিমধ্যে এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। সংকট প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত থাকলেও বেশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, যদিও উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা একে তো ছোট, তার ওপর এই দুই স্তরে বাসায় থেকেও পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বড় শহরে কিছুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস নিলেও সেগুলোর বেশির ভাগে পাঠদান এখন পর্যন্ত মানসম্মত হয়নি।
কারণ, আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল না। যেমন রাজধানীর উত্তরার উত্তরখানের বাসিন্দা কানিজ ফাতেমা রুমানা প্রাণের বাংলাদেশকে বলেন, তাঁর দুই সন্তান একটি কিন্ডারগার্টেনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা থাকলেও স্কুলের মতো ফলপ্রসূ হয় না। অনলাইনে পাঠদানে বৈষম্যও আছে। শহরের সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা এমনিতেই পড়াশোনায় এগিয়ে থাকে। করোনা পরিস্থিতিতে তারা ক্লাস ও পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে অনলাইনে।
শহর ও গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ পাচ্ছে না। সরকার গত ২৯ মার্চ থেকে মাধ্যমিকের এবং ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের রেকর্ড করা ক্লাস সংসদ টেলিভিশনে প্রচার করছে। কিন্তু টেলিভিশনের ক্লাস খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। বোধ-বুদ্ধির বয়স থেকে সবাই শুনে এসেছি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর মুখবন্ধে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড বিষয়ে সংক্ষেপে নিখুঁত বর্ণনা আছে কয়েকটি বাক্যে।
আমাদের দেশে ব্রিটিশ শাসনের সময় ১৮৫৪ সালে উডস এডুকেশনাল ডেসপাচের মাধ্যমে শিক্ষানীতি বা শিক্ষা কমিশনের যাত্রা শুরু। ১৮৮২, ১৯০১, ১৯২৭ সালে আরও তিনটি শিক্ষা কমিশন হয়েছিল। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর মওলানা আকরম খাঁ শিক্ষা কমিশন-১৯৪৯ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের চেষ্টা হয়। তারপর ১৯৫৭, ১৯৫৮, ১৯৬৪ ও ১৯৬৯ সালে পরপর আরও চারটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়।
এ পর্যন্ত কুদরত-ই-খুদা কমিশন রিপোর্টের ভিত্তির ওপর সমসাময়িক বাস্তবতা ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে সব শিক্ষা কমিশনের নতুন রিপোর্টে। পরবর্তীকালে আমরা পাই অধ্যাপক শামসুল হক ১৯৭৬, মজিদ খান ১৯৮৩, মফিজ উদ্দিন ১৯৮৭, শামসুল হক ১৯৯৭, এমএ বারী ২০০১, মনিরুজ্জামান মিঞা ২০০৩ এবং সর্বশেষ কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০০৯ সালের রিপোর্ট, বর্তমানে যা কার্যকর রয়েছে। এত এত রিপোর্টের পরেও কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মূলনীতি পাশ কাটানো চলছেই। শিক্ষা নামের অদৃশ্য মেরুদণ্ড শক্তপোক্তভাবে নির্মাণ করতে পারেন একমাত্র শিক্ষক। যতই সুদৃশ্য ভবন কিংবা ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হোক, তা সর্বাংশে সার্থক হবে না শ্রেণীকক্ষে একজন সুশিক্ষক না দেয়া পর্যন্ত। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে পরীক্ষানির্ভর। ১২ বছরে শিক্ষার্থীকে চারটি পরীক্ষার পুলসিরাত পার হতে হয়।
বর্তমান পদ্ধতির সুবাদে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া গেলেও জ্ঞানের সীমা থাকে প্রান্তিকতম পর্যায়ে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি ইংরেজিমাধ্যম বিদ্যালয়ে ‘ও এবং এ লেভেল’ শিক্ষার্থী সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়ও এ কথারই প্রতিচিত্র পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরীক্ষায় অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই সর্বাধিক নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু পঠিত বিষয়ে সামান্য ঘুরিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি ভালোভাবে জানা থাকার পরেও ছাত্রছাত্রীরা উত্তর দিতে ব্যর্থ হতো।
কারণ পরীক্ষা পদ্ধতি সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তি নিশ্চিত করলেও জ্ঞানের গভীরতা তৈরিতে অসমর্থ। এতসব নিয়ম কানুন আর শিক্ষা পদ্ধতির মার প্যাচের মধ্যে শিক্ষার্থীরা দিশেহারা। তার মধ্যে করোনার প্রভাব সম্পূর্ণ ব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের উপর রাহুর মতো গ্রাস করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত বছর বেতন বৈষম্য নিরসনের জন্য আন্দোলনে নেমেছিলেন। বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে শিক্ষকরা কখনও আন্দোলন করেছেন সমসাময়িক ইতিহাস তেমন সাক্ষ্য দেয় না।
শিক্ষা ব্যবস্থা তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলেছে কিছু ব্যতিক্রম ত্র“টি-বিচ্যুতি নিয়েই। সর্বস্তরের শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি সরকার তার নিজস্ব সুযোগমতো বিবেচনা করে। তাই নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কোনোরূপ অসন্তোষ থাকলেও আন্দোলনের হুমকি নেই, ছিলও না। সামাজিক মর্যাদা, কাজের গুরুত্ব বিবেচনায় যাদের আমরা জাতি গঠনের কারিগর বলে প্রশংসা করি, তাদের আর্থিক প্রণোদনা, পেশাগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, পেশাভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রয়োজন মাফিক নয়। শিক্ষক সমাজ অন্যান্য পেশাজীবীর মতো ইচ্ছা করলেই দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামতে পারেন না। যখন-তখন আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেন না।
শিক্ষক সমাজে রয়েছে বিভাজন, যেমন সরকারি শিক্ষক, বেসরকারি শিক্ষক, এমপিওভুক্ত শিক্ষক, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রভৃতি। এই বিভাজনের মূলে রয়েছে বেতনের বৈষম্য ও প্রাসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার অভাব। বিভিন্ন সরকারি বিভাগের সঙ্গেও শিক্ষকদের সাধারণ বৈষম্য বিদ্যমান। বেতনের বাইরে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা- যেমন পরিবহন, আবাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা সংকুচিত। তারপরেও তারা শিক্ষা ব্যবস্থা চলমান রাখেন। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা নির্বিঘ্ন ও নিয়মিত রাখেন। জাতীয় ও সামজিক দায়িত্ব ছাড়াও শিক্ষাবিষয়ক পরিকল্পনার সঙ্গে শিক্ষকদের জড়িত রাখা হয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তারা সর্বোত্তম পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচি কিংবা পুস্তক রচনা করেন।
কিন্তু প্রায়ই তাদের পরিশ্রম শতভাগ কাজে লাগে না। বিশেষ করে পাঠ্যসূচি এবং পুস্তকের ক্ষেত্রে দেখা যায় মুদ্রিত হওয়ার পরে কোনো অদৃশ্য উপায়ে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অজ্ঞাতে, সবকিছুর খোলনলচে বদলে দেয়া হয়েছে। এমন তুঘলকি ঘটনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এনছে অস্থিরতা। অপরিকল্পিতভাবে স্কুলভবন বিন্যস্ত করা হয়। নতুন ভবন নির্মাণের সময় ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলার জন্য খোলা জায়গার ব্যবস্থা সংকুচিত হয়। পুরনো ভবন এসব ক্ষেত্রে ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করলে জায়গার সংকট অনেকাংশেই কম হতে পারে। তাছাড়া সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা থেকে যদি বহুতল ভবনের পরিকল্পনা নেয়া হয়, তাহলেও স্থান সংকট কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, তদারক এবং মনিটরিং নিয়মিত করা গেলে শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কলেজ পর্যায়ে মনিটরিং সম্প্রসারণের সম্ভাব্যতা বিবেচনা করা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষকদের মর্যাদা এবং আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টি বিবেচনা করলে বাংলাদেশের শিক্ষকদের অবস্থান উল্লেখযোগ্য রকমে পিছিয়ে আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা একজন মানুষের আজীবনের ভিত্তি তৈরির কেন্দ্র। সেখানকার শিক্ষকদের যোগ্যতা মানসম্মত হলে প্রমিত শিক্ষা নিশ্চিত হবে। অন্যান্য সরকারি চাকরির তুলনায় বেতনের বৈষম্য থাকায় মেধাবীদের এই ক্ষেত্রে আগ্রহ কম। যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষকের অভাবে ভবিষ্যৎ নাগরিকের সুশিক্ষায় ত্রুটি থেকেই যাবে।
শিক্ষার এই ত্রুটি আমৃত্যু জাতি, সমাজ ও ব্যক্তিকে পীড়িত করবে। বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ। জনসংখ্যা বেশি হলেও ভৌগোলিক কারণে পরস্পরের হদিস ভালোভাবেই রাখা যায়। কে কোথায়, কীভাবে, কোন অবস্থায়, কেমন আছে তার খোঁজ রাখা কঠিন কিছু নয়। পরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার বহুলাংশে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। দরকার সহানুভূতি এবং আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করার মানসিকতা। সবরকম বৈষম্য, বিভেদ, সংকট অতিক্রম করা তখন আর দুঃসাধ্য থাকে না।
শিক্ষকদের পরিচালনা, পরামর্শ, তদারকির ভার সঠিকভাবে শিক্ষকদের ওপর দিলে যাবতীয় বিষয় সহজেই এবং সুন্দরভাবে পরিচালিত হতে পারে। মাঠ পর্যায়ে বাস্তব জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে এক শ্রেণীর দায়িত্ববানরা সর্ববিষয়ে পারদর্শী সেজে শিক্ষাক্ষেত্রে অনর্থক জটিলতা পাকাচ্ছেন। তাদের পক্ষে সাময়িকভাবে পুচ্ছধারী কাক সেজে, পণ্ডিতম্মন্য ভেবে নিজের আত্মতুষ্টি পাওয়া সম্ভব। সম্ভব আরেক শ্রেণীর মানুষের হাততালি ও বাহবা পাওয়া।
কিন্তু তাতে জাতির লোকসানের সম্ভাবনাই বৃদ্ধি পায়। বিশিষ্ট্য শিক্ষাবিদদের মতামত দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনার কারণে বন্ধ না রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনা প্রতিরোধ পদ্ধতি চালু করায় ছিল উৎকৃষ্ট পন্থা। সরকার ইচ্ছে করলে করোনা প্রতিরোধ অর্থাৎ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, মুখে মাস্ক পরিধান করা, হাত-পা-মুখ ভাল ভাবে ধৌত করা, ব্যায়াম ইত্যাদি স্থায়ী ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক করে সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি ইনসেন্টিভ কেয়ার ইউনিটে পরিণত করতে হবে। এমনটাই সময়ের দাবী বলে মনে করেন বিজ্ঞজনরা।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply