শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া: শত শত অভিবাসীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩
  • ২২ Time View

 

 

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে একটি ছাত্রাবাস। সেখানে রয়েছেন প্রায় ৫০০ অভিবাসী, যাদের বেশিরভাগই নেপাল ও বাংলাদেশ থেকে গত ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ায় এসেছেন। কোথাও এক রুমে গাদাগাদি করে, কোথাও-বা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে তাদের। গত কয়েক মাস ধরেই কাজ ছাড়া আটকে আছেন তারা। হাজার হাজার ‘ডলার ফি’র বিনিময়ে এদেশে পাড়ি জমালেও নিয়োগকারী এজেন্ট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চাকরি দেয়নি। ফলে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন অভিবাসীরা।

প্রতারণার স্বীকার এসব অভিবাসীরা জানান, তারা তিন মাসের ওয়ার্ক ভিসায় (কলিং ভিসা) মালয়েশিয়ায় এসেছেন। যা পরবর্তীতে ওয়ার্ক পারমিটে আপগ্রেড করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা ওয়ার্ক পারমিট পায়নি। এমনকি কাজও।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এসব শ্রমিক জানান, তাদের মালয়েশিয়ান আইন সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। তাই এলাকা ছেড়ে অন্য কোথায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। আর এজন্য বাধ্য হয়ে একসাথে গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। আবার অনেকে বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্টরা তাদের পাসপোর্ট নিয়ে গেছে এবং তাদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই চলেছে।

‘আমরা সবাই হতাশাগ্রস্ত ও অসহায়। ইতোমধ্যে কাজের জন্য একটি বিশাল অর্থ দিয়েছি। চাকরি না থাকলে আমি কীভাবে তা ফেরত দেব?’ ডরমেটরিতে একজন নেপালি অভিবাসী রয়টার্সকে এসব জানিয়েছেন।

২৩ বছর বয়সী আরেক নেপালি অভিবাসী, যিনি রিক্রুটিং এজেন্টদের ‘ভয়ে’ পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তিনি জানান, মালয়েশিয়ার একটি পরিচ্ছন্নতা সংস্থার সাথে দুই বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু এখনও কাজ শুরু করেননি।

আরও জানান, সেখানে অন্যদের মতো তিনিও একজন এজেন্টকে কাজের জন্য ৩ লাখ নেপালি রুপি (প্রায় ১০২৬০ রিঙ্গিত) দিয়েছিলেন। তাকে প্রতি মাসে ২ হাজার ৬০ রিঙ্গিত বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মালয়েশিয়ায় পৌঁছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো তাদের বলেছিল, এই মুহূর্তে কোনও কাজ পাওয়া যাবে না। কাজের অপেক্ষা করার জন্য তাদের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় তাদের বলা হয়েছিল, তারা শেষ পর্যন্ত নিয়োগ পাবে।

এদিকে, কাজ না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনে কাটছে এসব অভিবাসীদের। কর্মহীন অভিবাসীদের খাদ্য কেনা এবং দেশে ফিরে ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একজন বাংলাদেশি কর্মী বলেন, ‘আমরা এখনও জানি না চাকরি পাব কি না। এজেন্ট আমাদের অপেক্ষা করতে বলছে… তিন মাস হয়ে গেছে’।

মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান চুক্তি এবং তাদের অস্থায়ী কাজের ভিসায় দেশটিতে যাওয়ার পর ৩ বছরের স্থায়ী কাজ পাওয়া যাবে- এমন প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও শ্রমিকরা কেন চাকরি ছাড়াই দিন কাটাতে হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে মালয়েশিয়া এ বিষয়ে গত মাসে তদন্ত শুরু করেছে।

অভিবাসীরা মালয়েশিয়ার রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতির মেরুদণ্ড, যা দেশের ১৫ মিলিয়ন কর্মশক্তির প্রায় ১৫%। এদিকে, মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জোরপূর্বক শ্রম ব্যবহারের জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মালয়েশিয়া বৃক্ষরোপণ, উত্পাদন এবং নির্মাণ শিল্পে ১২ লাখ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এসব সেক্টরে লোক নিয়োগে চলতি বছর নিয়োগপ্রক্রিয়া সহজ করার পর, অভিবাসী শ্রমিকরা আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন।

এদিকে, কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস গত মাসে মালয়েশিয়ার নাগরিকদের চাকরির প্রতারণা থেকে বাঁচতে আরও স্বচ্ছতার আহ্বান জানিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তাদের কয়েক শ নাগরিক চাকরি ছাড়াই মালয়েশিয়ায় আটকে আছেন। নেপাল দূতাবাসও এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছে বলে জানিয়েছে।

এসব বিষয়ে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং শ্রম বিভাগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনও জবাব দেয়নি তারা। মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে ২২৬ জন আটকা পড়া শ্রমিকদের একটি পৃথক গ্রুপের জন্য চাকরি খোঁজার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়