মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

কাপাসিয়ায় যুবলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৪৯ Time View

 

 

কাপাসিয়া প্রতিনিধিঃ

 

মোঃ হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গাজীপুর আদালতে তার কন্যা মোছাঃ ফাতেমা আক্তারকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। নারী ও শিশু মোকদ্দমা নং- ২২৭/২০২২। মামলায় উল্লেখ করেন তার মেয়েকে বর্তমান কাপাসিয়া যুবলীগের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন যাবৎ ধর্ষণ করে আসছিলো। আমার মেয়ে গর্ভাবতী হইলে আসামী স্থানীয় কবিরাজের নিকট থেকে গাছস্থ ঔষধ আনিয়া তাকে খাওয়ালে তার গর্ভ নষ্ট হওয়ার পরিবর্তে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে আসামী মনে করে গর্ভ নষ্ট হয়ে গেছে। পরবর্তীতে আসামী বুঝতে পারে গর্ভ নষ্ট হয়নি। তখন বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে গর্ভ নষ্ট করার চেষ্টা করে। এক সময় বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় যুবলীগ নেতা এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তার বাড়ির কিশোরী গৃহকর্মীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ৮মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার কয়েকদিন পরই কণ্যা সন্তানের জন্ম হয়। এনিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। গত দু’দিন ধরে বাবা ও নবজাতকসহ ওই কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। তবে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে জানিয়েছেন।

এলাকাবাসি জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কড়িহাতা বেপারীপাড়া গ্রামের এক ব্যাক্তির পালিত মেয়ে (ভিকটিম) কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেনের বাড়িতে গত ৭ বছর ধরে ঝি’য়ের কাজ করে আসছিল। বিয়ের প্রায় দেড় মাসের মধ্যে ওই কিশোরী এক কণ্যা সন্তানের জন্ম দেয়। স্থানীয়দের প্রশ্নের জবাবে কিশোরীটি জানায় গৃহকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে সে। গত আগস্টের মাঝামাঝি তার কণ্যা সন্তানের জন্ম হয়। এনিয়ে ওই কিশোরীর বক্তব্যের (সাক্ষাতকার) ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাতারাতি ভাইরাল হয়। এলাকায় পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠে।

ভিকটিম কিশোরী ও তার স্বজনরা জানায়, প্রায় বছর খানেক আগে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন একাধিকবার জোরপূর্বক কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এ অবস্থায় কিশোরীটি সন্তান সম্ভবা হয়। গত জুন মাসের শেষের দিকে আট মাসের সন্তান সম্ভাবনা ওই কিশোরীকে চেয়ারম্যানের বাড়ির কাজের ছেলে রইছ উদ্দিনের সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন। কিশোরীকে বিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পর রইছ উদ্দিন পালিয়ে যায়। পরে ১ আগস্ট কাপাসিয়ার তরগাঁও খেয়াঘাট এলাকার প্রবাসী জামান মিয়ার বাড়িতে ৯’শ টাকায় একটি ঘর ভাড়া করে দেন চেয়ারম্যান সাখাওয়াত। এরপর ১৫ আগস্ট রাতে কিশোরীর প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে কাপাসিয়ার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন (১৬ আগস্ট) সেখানে নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে ওই কিশোরীর কন্যা সন্তান ভ’মিষ্ট হয়। পরে কিশোরীটি নবজাতকসহ বাসায় ফিরে আসে।

ভাড়া বাসার মালিকের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও শ্যালক প্রায়শঃ ভিকটিম কিশোরীর কাছে আসতেন। তারা নবজাতকের বাবার নাম কোনোভাবেই যেন চেয়ারম্যানের নাম বলা না হয় সেজন্য কিশোরীটিকে শাসিয়ে যেতেন।

এলাকাবাসী জানান, ২৮ আগস্ট সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ভিকটিমের সাক্ষাতকার নেয়। পরে ওই রাতেই চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও শ্যালক মামুন মিয়া লোকজন নিয়ে এসে ভিকটিমকে নবজাতকসহ ভাড়া বাসা থেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই কিশোরিটি তার পালিত বাবা ও নবজাতকসহ নিখোঁজ রয়েছে।

কাপাসিয়ার বাসস্ট্যান্ড মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ নাজমুল ইসলাম জানান, ভিকটিম কিশোরীর বাবা এ মসজিদের জন্য দানের টাকা উত্তোলন করতেন। গত কিছুদিন যাবত তিনি আদায়কারীর কাজে আসছেন না। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ভিকটিমের ব্যবহৃত ঘরের কিছু জিনিসপত্র মসজিদের বরান্দায় পাওয়া যায়। এগুলো কে বা কারা রেখে গেছে তা জানাযায় নি।

এদিকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটা তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের এক নারী সদস্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। একটি ভিডিওতে বা সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া সাক্ষাতকারে তাকে অভিযুক্ত করলেও পরে আরেকটি ভিডিও ফুটেজে তাকে অভিযুক্ত না করার দাবী করেন তিনি।

এ ব্যাপারে ২৯ আগস্ট রাতে তিনি কাপাসিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। কিন্তু ওই নারী ইউপি সদস্যের নামে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, পরে দেখতে পাবেন। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও বার্তায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি এই নবজাতকের বাবা নন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে প্রয়োজনে ডিএনএ টেষ্ট করার দাবী করেন তিনি।

গাজীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহানাজ আক্তার বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে এরকম হয়ে থাকলে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা। এ ক্ষেত্রে কিশোরীকে আমরা কাউন্সিলিং করব।

কাপাসিয়া থানার ওসি এফ এম নাসিম বলেন, এ রকম ঘটনা শুনেছি কিন্তু মেয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়