মোঃ সুমন হোসেন, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মঙ্গলপৈতা ও দেবরাজপুরের আশপাশের গ্রামগুলোর কয়েকটি বাড়িতে গড়ে উঠেছে নকল আজিজ বিড়ি তৈরীর ছোট ছোট কারখানা। ইতোপূর্বে কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব নকল বিড়ি কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিড়ি তৈরীর সরঞ্জাম ও কয়েক লক্ষ টাকার নকল বিড়ির ব্যান্ড রোল উদ্ধার করে ধ্বংস করেন। সে সময় আটক হওয়া অপরাধীদে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল ও জরিমান করা হয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও সেখানে শুরু হয়েছে নকল বিড়ি তৈরী ও বেচাকেনা।
শুক্রবার সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে, নকল বিড়ি তৈরীর কারখানা মালিক ও বিড়ি ব্যবসায়ী দেবরাজপুর গ্রামের আমির হোসেন মোল্যা এক সংবাদকর্মীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। দম্পোক্তি প্রকাশ করেন, আমির হোসেন মোল্যা বলেন, সংবাদ লিখে তোমরা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। কারন আমরা নিয়মিত থানা পুলিশ, ফাঁড়ি পুলিশ ও ক্ষমতাসীন লোকজনকে টাকা দিয়ে থাকি। স্থানীয়রা জানায়, থানা পুলিশ ও স্থানীয় ক্যাম্প পুলিশকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে মঙ্গলপৈতা বাজারের আশপাশের গ্রামের কিছু বাড়িতে ছোট ছোট নকল বিড়ি তৈরীর কারখানা গড়ে তুলে তারা এ ব্যবসা করে আসছে। যারা এ ব্যবসার সাথে জড়িত তারা হলেন, দেবরাজপুর গ্রামের শাহাজাহানের ছেলে আমির মোল্যা, একই গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে শাহাজাহান, মোজাম্মেল মন্ডলের ছেলে মোঃ বকুল, মৃত আফসার শেখের ছেলে তোহাজ্জত শেখ, আমির শেখের ছেলে ইলিয়াস শেখ, আফসার শেখের ছেলে রওশন শেখ, মৃত শাহাদৎ মোল্যার ছেলে মুজিদ মোল্যাসহ অনেকে। উলেখ্য, গত ১৬ জুন ২০১৬ ইং তারিখে নকল বিড়ি তৈরীর কারখানায় অভিযান চালিয়ে নকল বিড়ি তৈরি ও মজুদ করার অভিযোগে কালীগঞ্জ উপজেলার দেবরাজপুর গ্রামের আসলাম হোসেন ও আকিদুল ইসলাম নামের ২ ব্যক্তির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও জরিমানা দিয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে সময় ৬০ কোটি বিড়ি তৈরীর উপকরণ ও ৫ লক্ষাধিক টাকার নকল ব্যান্ডরোলসহ আসলাম হোসেন ও আকিদুল ইসলাম নামের দুই জনকে আটক করা হয়। পরে আদালত বসিয়ে ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে আসলাম হোসেকে ৬ মাসের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আকিদুল ইসলামকে ২ মাসের কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয়। পরে উদ্ধারকৃত নকল বিড়ির উপকরণ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা আবারও আগের মত ব্যবসা শুরু করেছে। সূত্র জানায়, দেবরাজপুর গ্রামের শাহাজাহান আলী দীর্ঘদিন ধরে এই নকল আজিজ বিড়ি তৈরি করে আসছে। সেসহ কয়েকজন রংপুর, ও বগুড়া থেকে নকর আজিজ বিড়ি তৈরির সমস্থ সরঞ্জাম ক্রয় করে আনে। এই অবৈধ ব্যবসার কারনে একদিকে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে আসল আজিজ বিড়ির মালিক আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে রায়গ্রাম ইউনিয়নের এক মেম্বর। সে প্রতি সপ্তাহে থানা পুলিশ কে ম্যানেজ করার নামে ৮ হাজার টাকা আদায় করে থাকে বলে অভিযোগ। তবে ওই মেম্বর টাকা নেবার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার জানামতে তারা গরীব পরিবার। এসব বিড়ি তৈরি করে বিক্রি করে তারা জীবন জীবীকা নির্বাহ করে। আমি এসব ঘটনার সাথে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান খান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে ঈদের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে তিনি ইউএনও’র সাথে যোগাযোগ করবেন বলেও জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাদেকুর রহমান জানান, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা আইননত দন্ডনীয় অপরাধ। কারা এর সাথে জড়িত এবং কোথায় এসব কারখানা আছে তা জেনে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply