বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন

কৃষি ঋণের নামে প্রতারনা, ভ্যান চালক মহিউদ্দীন বিপাকে!

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
  • ৫১ Time View

ফিরোজ তালুকদার, কলাপাড়া:

অনিয়ম দুর্নীতির সূতিকাগার এখন কলাপাড়া সোনালী ব্যাংক। ঈদ পূর্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বরাদ্দ হত দরিদ্র
সুবিধা ভোগীদের ভাতার টাকায় দূঃসাহসী থাবা বসিয়েছে কলাপাড়া সোনালী
ব্যাংক। বাধ্যতামূলক উৎকোচ কমিশনের তোঘলকি কারবারে ব্যাংক ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর
আকন ও মাষ্টার রোলের অফিস সহকারী বশির হোসেনের ঘুষ কেলেংকারীর তথ্যচিত্র
গনমাধ্যমে প্রকাশের পর শুরু হয় সমগ্র উপকূল জোড়ে তোলপার। ওই ব্যাংকের সকল
অনিয়মতান্ত্রিক কর্মজ্ঞের উপর অনুসন্ধানি নজর রাখতে গিয়ে বেড়িয়ে আসছে
প্রতিক্ষনে অনিয়ম আত্মসাতের নজিরবিহীন দূর্নীতির তথ্যচিত্র। এবার বেড়িয়ে
এসেছে মানব রুপি দানবদের অমানবিক বানিজ্যিক অর্থ সক্ষতার অভূতপূর্ব কৌশলি
আচরনের বহিপ্রকাশে খবরের পেছনের খবর-। প্রস্তাবিত জেলা কলাপাড়ার নীলগঞ্জ গ্রামের
হাবিব হাওলাদারের পুত্র স্বাক্ষর-জ্ঞান হীন হতদরিদ্র মহিউদ্দীন (৪২)। পৌরশহরে দিনভর
ব্যবসায়ীদের বিক্রীত সার-সিমেন্ট টেনে কোনরকম ভ্যান চালিয়ে সংসার চলে তার।
প্রতিদিন ভ্যানের চাকা ঘোরাতে ঘোরাতে হতদরিদ্র মহিউদ্দীন যখন ক্লান্ত তখন নীলগঞ্জ
ইউনিয়নের গনি শরীফ নামের এক ব্যাংক দালাল তাকে সরকারী অর্থ সহায়তা দেয়ার
প্রতিশ্রুতি দেয় এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে তার সাথে
দেখা করতে বলে। এরপর মহিউদ্দীন ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে দেখা করে গনি শরীফের
সাথে। গনি শরীফ এবং মাদ্রাসা শিক্ষক হাবিবুল্লাহ তাকে সোনালী ব্যাংকে নিয়ে
কিছু কাগজ পত্রে টিপ স্বাক্ষর নেয়। এরপর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কোন সরকারী
সাহায্য জোটেনি মহিউদ্দীনের ভাগ্যে। পরবর্তীতে অপর ব্যাংক দালাল মো: আজিজের কাছ
থেকে মহিউদ্দীন জানতে পারে সোনালী ব্যাংকে তার নামে (কৃষি বোরো-৬৪/২০১১- ১২)
২০,০০০ টাকার কৃষি ঋন রয়েছে, যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৩২,৪০০ টাকা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকের ওই ঋনের টাকা পরিশোধ না করলে তার নামে মামলা হবে-এমন আতংকে
কিংকর্তব্য বিমূঢ় মহিউদ্দীন ওই টাকা নেয়নি বলে আকুতি জানায় সোনালী ব্যাংক
কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋন প্রস্তাবে তার টিপ স্বাক্ষর সহ ছবি
দেখিয়ে ঋন পরিশোধের জন্য বলে। এরপর মহিউদ্দীন নিরুপায় হয়ে ঋন মওকুফের জন্য গত ৯
জুলাই সোনালী ব্যাংক কলাপাড়া বন্দর শাখার ম্যানেজারের কাছে লিখিত আবেদন করার পরও
অদ্যবধি কোন প্রতিকার মেলেনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, এক শ্রেনীর সংঘবদ্ধ দালাল
সোনালী ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে গোপন আতাঁত করে হতদরিদ্র
মানুষকে সরকারী সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ছবি, টিপ সহি ও জাতীয় পরিচয় পত্র
ব্যবহার করে ঋন উত্তোলন করছে। এমনি ভাবে উপজেলার পূর্ব মধুখালী ছালেহিয়া দাখিল
মাদ্রাসার সহকারী সুপার এবং নীলগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: হাবিবুল্লাহ
জামিনদার সেজে ব্যাংক দালাল গনি শরীফের যোগসাজসে মহিউদ্দীনের উক্ত ঋনের সমুদয়
টাকা উত্তোলন করে নেয়। সোনালী ব্যাংক কলাপাড়া বন্দর শাখা থেকে ইতিপূর্বে নীলগঞ্জ
ইউনিয়নে এরকম আরও ভুয়া কৃষি ঋন বিতরন করা হয়েছিল, যা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের
নজরে এলে ঋন বিতরন কার্যক্রমে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উক্ত ঋন পরিশোধে
বাধ্য হয়। এছাড়া সোনালী ব্যাংক মহিপুর মৎস্য বন্দর শাখায় অর্থ কেলেংকারিতে
ইতিপূর্বে দু’কর্মকর্তা বরখাস্ত হন এবং তাদের নামে বিভাগীয় মামলা পর্যন্ত হয়।
এদের একজন দীর্ঘদিন সাময়িক বরখাস্ত থাকার পর উচ্চ আদালতের অনুকম্পায় চাকুরী
ফিরে পান। যিনি বর্তমানে সোনালী ব্যাংক কলাপাড়া বন্দর শাখার দায়িত্বে রয়েছেন। এ
বিষয়ে গনি শরীফ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ’সোনালী
ব্যাংক থেকে মহিউদ্দীনের নামের ওই কৃষি ঋনের টাকা নিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষক
হাবিবুল্লাহ। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানো হলে তারা হাবিবুল্লাহ’র
বেতন থেকে ওই ঋনের টাকা কর্তন করার কথা বলেছেন।’ এ বিষয়ে পূর্ব মধুখালী

ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার মো: হাবিবুল্লাহ তার বিরুদ্ধে আনীত
অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ’মহিউদ্দীনের উক্ত কৃষি ঋনের বিষয়ে আমি কিছুই
জানিন না। গনি শরীফ যদি আমার কথা বলে তবে কাগজ পত্র দেখাক।’ সোনালী ব্যাংক
কলাপাড়া বন্দর শাখা’র দায়িত্ব প্রাপ্ত ম্যানেজার মো: জাহাঙ্গীর আকন জানান, ’তিনি
সোনালী ব্যাংক কলাপাড়া শাখায় সাময়িক দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ব্যাংকের
বিভিন্ন প্রকল্পের বিতরনকৃত ঋনের তথ্য ও টাকার পরিমান যথাযথ কর্তৃপক্ষের এবং
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া প্রদানের সুযোগ নেই বলে তিনি সাংবাদিকদের
জানান ।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়