এম আব্দুল করিম, কেশবপুর (যশোর) ঃ
ঠিলে ধুয়ে দে বউ-গাছ কাঁটতে যাব সন্ধে রস ঝেড়ে এনে জাউ রেন্ধে খাঁব, ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাঁটতে যাব। যশোরের যশ খেজুরের রস, এই প্রবাদটি শীতের আগমনে চিরায়ত বাংলার প্রতিটি মানুষের মুখে-মুখে ধ্বনিত হয় ।
কুঁয়াশার চাঁদরে মোড়ানো সকালের সোনালী সূর্য্যের মৃদু হাসি বাংলার মানুষকে বুঝিয়ে দেয় শীতের আগমনি বার্তা। নানাবিধ সমস্যার পরও শীত আসলেই কেশবপুর তথা যশোরের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল জুঁড়ে শুরু হয় গাছিদের খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন ঠিলে-খুংগি-দড়া- গাছি দাঁ বালিধরাসহ ইত্যাদি তৈরীর অবিরাম প্রস্তুতি। বেড়ে যায় গাছিদের ব্যস্ততা। আবহমান বাংলার প্রতিটি ঘরেঘরে ছেরেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও ব্যাবস্ততা বেড়ে যায় দিগুন। মৌসুমের শুরুতে আলতো শীতের সোনালী সূর্য্যরে রোদেলা সকালে গাছিরা বাঁশের ডগা দিয়ে নলি তৈরীতে ব্যাস্ত সময় পার করে। কেউবা আবার পাটের আশ দিয়ে দড়া তৈরীতে মগ্ন। বেলা বাড়তেই ঠিলে-খুংগি-দড়া- গাছি দাঁ বালিধরা নিয়ে গাছিরা ছুটে চলে গাছ কাটতে। আবার ভোরে উঠে রস নামাতে কূয়াশা ভেদ করে চড়ে বেড়ায় এক গাছ থেকে আরেক গাছে। এর পর ব্যাস্থতা বাড়ে মেয়েদের, সকাল থেকে দুপুর অবধি কোন ফুসরত নেই দম ফেলার। কেশবপুরের খেজুরের রসের খ্যাতি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। কেশবপুর, মনিরামপুর থেকে তাজা খেজুরের রসের তৈরী গুড় বাংলাদেশের প্রত্যেক অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। পাশা-পাশি আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত, মায়ানমারসহ পৃথিবীর কয়েকটি দেশে কেশবপুরের খেজুরের গুড়ের ব্যাবপক কদর রয়েছে। যশোর তথা কেশবপুরকে সারা পৃথিবীতে পরিচিত করেছে যে কয়টি বিষয় তার মধ্যে যশোরের কেশবপুরের খেজুরের রস অন্যতম একটি। কেশবপুরের খেজুরের রসের গুড়র বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। শীত আসলেই আবহমান বাংলার ঘরেঘরে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। প্রতি ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা তৈরীর জন্য ঢেঁকিতে চাউলের গুড়া তৈরীর মহোৎসব। বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে সন্ধা হলেই একদিকে শুরু হয় কবি গান অন্য দিকে সন্ধে রস দিয়ে শুরু হয় বিভিন্ন প্রকার পিঠা পুলিসহ পায়েশ তৈরীর ধুম। এ যেন কবির সেই ঐতিহাসিক উক্তির বাস্তব রূপায়ণ; ঠিলে ধুয়ে দে বউ-গাছ কাঁটতে যাব সন্ধে রস ঝেড়ে এনে জাউ রেন্ধে খাঁব।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply