স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন না করার অপরাধ
বি এম রাকিব হাসান, খুলনা:
খুলনা সদর থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকসহ আটজন শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দেরিতে স্কুলে আসা এবং স্কুলে নিয়মিত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক টিএম জাকির হোসেন এ নোটিশ প্রদান করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক টিএম জাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সংশ্লিষ্টদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সঠিক কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, নগরীর সুলতানা হামিদ আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সাতজন শিক্ষক গত সোমবার দেরিতে ক্লাসে উপস্থিত হন। এছাড়া উল্লিখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় দু’ সপ্তাহ জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং অ্যাসেম্বলী হয়না। গত সোমবার আঞ্চলিক পরিচালক আকস্মিক স্কুল পরিদর্শনে গেলে এ বিষয়গুলো তার দৃষ্টিতে আসে। যেসব শিক্ষক দেরিতে আসেন তাদের তিনি সতর্কও করেন। এরই আলোকে গত মঙ্গলবার শিক্ষা কর্মকর্তাসহ আট শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাও নোটিশ জারী করা হয়। নোটিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হচ্ছেন সুলতানা হামিদ আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহার বেগম, সহকারী শিক্ষক (শারীরিক) এনামুল হক, কনিকা রায়, চন্দনা সেন, বদরুজ্জামান, কম্পিউটার শিক্ষক হাবিবুর রহমান, ইংরেজি শিক্ষক শরীফুল ইসলাম এবং সহকারী লাইব্রেরিয়ান মাহফুজা হক। স্কুল নিয়মিত মনিটরিং না করায় সদর থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মমিনকেও কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
স্কুলের অপরাপর সূত্রগুলো জানান, একটি ব্যানার সাঁটানো ছাড়া জাতীয় শোক দিবসে উল্লেখযোগ্য কোন অনুষ্ঠান স্কুলে আয়োজন করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্মরণিকা প্রকাশের জন্য বার্ষিক চাঁদা নিলেও গত পাঁচ বছরেও তা প্রকাশিত হয়নি। কম্পিউটার শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের ল্যাবে ১১টি কম্পিউটার-ডেস্কটপ এবং একটি ল্যাপটপ রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা দু’টি কম্পিউটার ও মডেম ল্যাব থেকে তার কক্ষে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। ইউপিএসও অকেজো। এমনকি ৫ শতাধিক ছাত্রীর কাছ থেকে কম্পিউটার খাতে অর্থ নেওয়া হলেও সংস্কার করা হয়না। প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহার বেগম জানান, গত সোমবার তিনি দেরিতে স্কুলে পৌঁছেছেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আঞ্চলিক পরিচালকের সাথে নানাবিধ উত্তরও তিনি দিয়েছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাঝে-মধ্যে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন হয়না। সহশিক্ষা কার্যক্রম স্কুলে চলছে বলে তিনি দাবি করেন। দুদকে অভিযোগ : প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সম্প্রতি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দুদকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তিনি ২০১০ সালে এ স্কুলে যোগদানের পর অদ্যাবধি কোন আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব বা অডিট সম্পাদন করেননি। তিনি গোঁজামিল ও ধামাচাপা দিয়ে বিদ্যালয়ের আর্থিক ক্যাশবুক (হিসাব বহি) মিলিয়ে রাখেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ, বিনামূল্যের বই বাজারে বিক্রি, আর্থিক দুর্নীতি, ভুয়া প্রশ্নবিল তৈরি, অবৈধভাবে পদ মুদ্রণের শিট ডিজিতে প্রেরণ, অননুমোদিত শাখা পরিচালনা, ছুটি বিধান লঙ্ঘনসহ ১৪টি খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সুলতানা হামিদ আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহার বেগমের এমপিও স্থগিত রয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া পারভেজ’র তদন্তে ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। রিপোর্টের সুপারিশে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নূরুন্নাহার বেগমের এমপিও বন্ধসহ বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির শাস্তি নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ অডিট পরিচালনার জন্য নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি তাকে বরখাস্ত না করায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকার গা-ছাড়া ভাব এবং তার কোন জবাবদিহিতা নেই। তিনি এখনও অব্যাহত গতিতে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে অর্থ লোপাটসহ নানাবিধ অনিয়ম করে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply