আরিফ শেখ :
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এলাকার ২৪ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই)এর জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েক যুগ পূর্বে বাংলাদেশ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৪ ওয়ার্ডের শিমুলতলী এলাকায় ২৯.২৮ একর জমি অধিগ্রহণ করেন। অধিগ্রহনকৃত জমির বর্তমান বাজার মূল্য অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্বে যারা মালিক ছিলেন তাদের কয়েকজন উত্তরসূরীরা ২.৪০ একর জমি ফেরত পেতে কোর্টে মামলা করেন। যে মামলা এখনও চলমান রয়েছে।
অপরদিকে অধিগ্রহণকৃত জমিতে ততকালীন সময়ে কিছু অসহায় ভূমিহীন পরিবারের বসবাস থাকার কারনে ০.৫০ একর জমি বেদখলে থেকে যায়।যে জমিতে বর্তমান অসহায় ভূমিহীনদের কোন অস্তিত্ব নেই, রয়েছে বৃত্তবানদের বসবাস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্ত্তৃবানরা কি ভাবে সরকারি জমিতে ভবন নির্মান করলেন এবিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তি জানান, এই এলাকায় খলিল নামে এক ব্যাক্তি আছেন যার রয়েছে বিশাল ক্যাডার বাহিনী যিনি তার বাহিনী দিয়ে প্রথমে একটি প্লট দখল করেন কিছুদিন পরে সেই প্লট স্ট্যাম্পের মাধ্যমে অপর ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। এভাবে সরকারি জমিতে বসবাস করা ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে ০.৫০ একর সরকারি জমি দখলে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেদখলকৃত ০.৫০ একর জমির মধ্যে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলামের দখলে রয়েছে ৩ টি প্লট যার একটি প্লট বাউন্ডারি করা ও অপর দুটি বাউন্ডারি ছাড়া ৩ টি প্লটের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। পাশেই পুলক নামে এক ব্যাক্তি ২ টি প্লট ১০ লক্ষ দিয়ে স্থানীয় খলিলের কাছ থেকে ষ্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে ক্রয় করেন যার বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে কোটি টাকারও বেশি সেখানে বানিয়েছেন বিলাসবহুল ২ তালা রেস্টুরেন্ট। এর পাশে খলিল নামে এক ব্যাক্তি বিশাল এক জুটের গোডাউন বানিয়েছেন যে জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকার বেশি। পাশে আরেক ব্যাক্তি মোশাররফ যিনি করেছেন ১ তলা পাকা বাড়ি মোশাররফ হোসেন স্থানীয় যুবলীগের সাবেক- সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং আগামী সম্মেলনে ২৪ নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী। এছাড়াও স্থানীয় আরও কয়েকজন ব্যাক্তি এটিআইয়ের জায়গা দখল করে নির্মান করেছেন পাকা ভবন।
দখলের বিষয়ে, স্থানীয় ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে জানান, আমার দখলকৃত প্লট আমি টিসিবির মালামাল রাখার কাজে ব্যবহার করছি। অপর দখলকৃত ব্যাক্তি, পুলক যিনি গত কয়েকমাস আগে গাজীপুর সদর থানায় অস্ত্র মামলায় আটক হয়েছিলেন,তিনি জানান, আমি একটি রেষ্টুরেন্ট করে এক ব্যাক্তির কাছে ভাড়া দিয়েছি। মাসে সেখান থেকে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া পাই। অপর দখলকৃত ব্যাক্তি মোশাররফ জানান, আমি ১ তলা বাড়ি করে সেখানে আমি নিজে থাকি ও কয়েকটি রুম ভাড়া দেই। এছাড়াও এটিআইয়ের বেদখলকৃত জমিতে টিনসেড ভবন করে বসবাস করা কয়েকটি পরিবার বলেন, এটিআই আমাদের উচ্ছেদ করে দিলে আমরা অন্য কোথাও চলে যাবো।
বেদখলকৃত সম্পত্তি উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে, গাজীপুর জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এর অধ্যক্ষ মোঃ নোয়াখেরুল ইসলাম বলেন, আমরা বেদখলকৃত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য, জেলা,প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি আশা করি অতিদ্রুত আমাদের সম্পত্তি উদ্ধার হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (এলএসএসএ) জনাব,সহিদুল ইসলাম বলেন,আমাদের ২.৪২ একর জমি নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে আশা করি আদালত থেকে দ্রুত আমাদের পক্ষে রায় পাবো। বেদখলকৃত ০.৫০ একর জমির বিষয়ে বলেন, ততকালীন সময়ে আইনী জটিলতার কারনে জেলা প্রশাসক আমাদের ০.৫০ একর জমির দখল বুঝিয়ে দিতে পারেননি, তবে কিছুদিন আগে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর বেদখলকৃত জমি দখলের জন্য একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছি আশা করি আমরা দ্রুত একটি সমাধান পাবো।
বেদখলকৃত সরকারি জমি উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলার এডিসি রাজস্ব এস,এম সাইফুর রহমান বলেন, আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যেতা পেলে বেদখলকৃত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply