এস,এম,মিজান, গৌরনদী :
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের ১৩৫ শহীদের স্মৃতি বিজড়িত বধ্যভুমি (মরার ভিটায়) আজও স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাযজ্ঞের সাথে স্থানীয় কয়েকজন যুদ্ধপরাধী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকলেও তাদের এখনও বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এ কারণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের স্বজনরা তবে ২৫ মে সন্ধ্যায় শহীদের স্মরণে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় বারের ন্যায় সেখানে মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়েছে।
জানাগেছে, পাকসেনাদের ভয়ে ৭১ সালের ১৫ মে, বাংলা ৩রা জৈষ্ঠ্য হরহর মৌজার নন্দি পাড়ার বনজঙ্গল বেষ্টিত জলাভুমিতে প্রান বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছিল আশপাশ এলাকার কয়েক,শ হিন্দু পরিবারের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কিন্তু বিষয়টি জানতে পারে পাকবাহিনীর দোসর ও স্থানীয় বাটাজোর ক্যাম্পের রাজাকাররা। তারা পাক হানাদারদের নিয়ে সেদিন ওই স্থানে হানা দেয়। হানাদাররা সেদিন নিরীহ জনতার ওপর ব্রাশ মেরে ১৩৫ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ৫ মাসের শিশু থেকে ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ছিল এবং অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু। সেদিন স্বজনদের হারিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান কেউ কেউ। ২ বোন ও মাকে হারিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন বাটাজোরের নন্দিপাড়ায় অবিনাশ নন্দি। ওই সময় তার বয়স ছিল ৩ বছর। তবে সেদিনের কোন স্মৃতি তার মনে নেই।
গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সহকারী কমান্ডার আনোয়ার হোসেন রাঢ়ী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ওইদিন পাকসেনাদের আসার খবর পেয়ে বাটাজোরের হরহর মৌজার (নন্দিপাড়ার) বাড়ৈ বাড়ির পার্শ¦বর্তী জলাভুমিতে প্রান বাচঁতে আশ্রয় নিয়েছিল ওই এলাকার শতশত হিন্দু স¤প্রদায়ের নারী – পুরুষ ও শিশুরা। কিন্তু নরপশুদের কবল থেকে সেদিন তারা রেহাই পাননি। ওইদিন সকালে পাকবাহিনীর একটি দল পার্শ¦বর্তী আধুনা গ্রামে হামলা চালায়। তারা ওই গ্রামের বহু নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে ও অসংখ্য বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। মিলিটারী আসছে এ খবর পেয়ে সকাল থেকে নন্দিপাড়ার প্রায় ৪ শতাধিক লোক (মরার ভিটায়) নন্দীপাড়ার নির্জন জঙ্গল ও শুকনা জলাশয়ের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানে সেদিন লুকিয়ে ছিলেন ননী গোপাল দাশ সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রানে বেঁচে যান। তিনি জানান, আধুনা আক্রমন শেষে ফেরার পথে আদম আলী মাষ্টার, খাদেম মিলিটারী ও মানিক রাঢ়ী, আঃ জব্বার, মকবুল প্যাদাসহ বাটাজোর ক্যাম্পের রাজাকাররা পাকসেনাদের নিয়ে ওই স্থানে হানা দেয়। পাকসেনাদের এলোপাথারী গুলিতে সেদিন ১৩৫ জন নিরাপরাধ মানুষ প্রান হারিয়ে ছিল। হরহর মৌজার অশ্বিনী দাসসহ তার পরিবারের ৫ জন ওইদিন নিহত হন। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় রাজাকাররা গাইড না দিলে নির্জন ও এই দুর্গম স্থানে পাকসেনারা আসতে পারতো না। গণহত্যার পর লাশগুলো ঘটনাস্থলে পরে থাকে । পরবর্তিতে এলাকাবাসী লাশগুলো সৎকার করতে না পেরে ওই স্থানেই গণকবর দেয়। এর পর থেকে স্থানীয়রা ওই স্থানের নাম দিয়েছে মরার ভিটা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাযজ্ঞের সাথে স্থানীয় কয়েকজন যুদ্ধপরাধী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকলেও তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। আজও ১৩৫ জন শহীদের স্মৃতি বিজরিত সেই বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের স্বজনরা। তারা দ্রত যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতারের দাবী জানান। একই সাথে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে মরার ভিটায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান তারা। সোমবার সন্ধায় ১৩৫ শহীদদের স্মরণে গৌরনদীর নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান খালেদা নাছরিন, উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মামুনুর রহমান, খাদ্য পরিদর্শক অশোক কুমার চৌধুরী, একাডেমিক সুপার ভাইজার গৌরাঙ্গ প্রসাদ গাইন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সহকারী কমান্ডার মোঃ আনোয়ার হোসেন, বাটাজোর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ কাদের, সাবেক কমান্ডার ইসমাত হোসেন রাসু সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বধ্য ভুমি মরার ভিটায় শহীদদের স্মরনে মোমবাতি প্রজ্জলন ও পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply