আসিফ বাবু/ শিউলী শিলা :
পদ্মাবতী নদীর ঘাট দখল করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন, সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমি দখল, নদী কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা আদায়সহ এমব কোন কাজ নেই যা হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদের হাত ধরে হয়না। কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে চাইলে প্রাথমিক ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয় স্থানীয় রনজু মেম্বারের মাধ্যমে। মামলার বাদী হয় রনজু মেম্বারের কাছের লোক,সাক্ষী থাকেন রনজু মেম্বার নিজে, থানা পুলিশ সব দেখেন হামিদ চেয়ারম্যান।
প্রতিবাদকারী’কে এতে থামানো না গেলে হতে হবে এলাকা ছাড়া নয়তো অপহরণ গুম,খুনের শিকার। এরকম অনেক গুলো অভিযোগ ভুক্তভোগীরা পাঠিয়েছে সরকারী বিভিন্ন দপ্তর সহ অনেক গণমাধ্যম অফিসে।
গত ৫ জানুয়ারী ২০২২ইং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহণ করার পূর্বে স্থানীয় চিহ্নিত সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী’র সাথে সমন্বয় করে মাঠে নামে নির্বাচনে জয়ী হতে। ইউপি নির্বাচনে সরকার দলীয় টিকেট প্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান’কে মাঠে পরাজিত করতে হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এলাকা ছাড়া করে জয়ী হয়।
নির্বাচন পরবর্তী এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো এলাকায় প্রবেশ করতে পারছেনা অনেক ত্যাগী নেতারা। তাদের মধ্যে অন্যতম রাজপথ কাঁপানো ইউনিয়ন যুবলীগের সহ সভাপতি জালাল শেখ, পিতা আবদুল হাই হাঁটুরিয়া দক্ষিণ পাড়াস্থ জান বাঁচাতে ঢাকায় গিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা করে দিনাতিপাত করছে। রহিম ও রহমত, পিতা মৃত কুরবান শেখ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আছেন জালাল শেখের মত জীবন বাঁচাতে। এমন বহু ত্যাগী নেতাদের করুন অবস্থা হলেও থানা পুলিশের কোন সহযোগিতা পাচ্ছেনা বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়দের একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর নদী ও চরাঅঞ্চলের কুখ্যাত দস্যু বাহিনী’কে হাতে নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গড়ে তুলেছেন নতুন সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী যা পরিচালিত হয় তার একক নেতৃত্বে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের লিখিত অভিযোগে সত্যতা নিশ্চিত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগ আবদুল হামিদ’কে ইউনিয়ন কমিটির সহ সভাপতি পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন।
তবে দলীয় পদ পদবী না থাকলেও প্রায়ই একশত জনের মত অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে প্রকাশ্য ভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, চর জমি দখল,চাঁদা আদায় সহ নানা অপকর্মে জড়িত। এদের প্রত্যেক সদস্যের রয়েছে ১০/১৫/২০/২৫ টা পর্যন্ত মামলা, তৎমধ্যে হত্যা মামলা,চাঁদাবাজি মামলা,অবৈধ জমি দখলের মামলা, ধর্ষণ মামলা,অপহরণ মামলা। তবে আলাদীনের যাদুর সাহায্যে কেউ কখনো গ্রেফতার বা হাজির হতে হয়নি আদালতে। ৯৫ বয়সী স্থানীয় সাবেক মেম্বারের ভাষ্য মতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস আলী মকুল’কে দিন দুপুরে প্রকাশ্য গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করার পরও থানা পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
সাধারণ একটা মামলা দিয়ে আসামি করা হয়েছিল কয়েকজন’কে কোন প্রকার আদালতের শরণাপন্ন না হয়ে মামলায় বেকুসুল খালাস পেয়ে যায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। হত্যা মামলার আসামি বেকুসুল খালাস পেয়ে গড়ে তুলেছে বিশাল বাহিনী যার নেতৃত্বে রয়েছে স্বয়ং ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ। এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। চেযারম্যানের নেতৃত্বে পুরো বাহিনীর হাতে রয়েছে ১৫টি অবৈধ বালু উত্তোলনের পয়েন্ট যার মাসিক মাসোহারা ৩০ লক্ষ্য টাকা পায় পুলিশ প্রশাসন। হাঁটুরিয়া নাকালিয়া দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, একজন চেয়ারম্যান মানে জনগণের সেবক, যেখানে বসে সমাধান করতে হবে প্রতিনিধিদের সমস্যা গুলো অথচ তিনি নিজেই এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিগত দিনে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছে, তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে কেউ এখন এলাকায় নেই। এভাবে চলতে থাকলে সন্ত্রাসীদের জন্য নেতৃত্ব শুন্য হয়ে যাবে বৃহত্তর আওয়ামী লীগের হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন কমিটি। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু জনসভায় প্রকাশ্য ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ’কে ভালো না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। পরবর্তী সময় থেকে তিনি আড়াল হয়ে বাহিনীর লোকজন, মেম্বার, পুলিশ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান সবকিছুর মূল নিয়ন্ত্রক ওসি আসাদ। চেয়ারম্যানের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দাখিল করতে গেলে সরাসরি বলে দেয় মারামারি হয়েছে, হাত পা ভেঙেছে সমস্যা কি হাসপাতালে যাও মরলে আসিও তখন মামলা নিবো। আমরা নিরুপায় কোথায় যাবো?? এসপির সাথে কথা বলে সার্কেল অফিসারের সাথে দেখা করে ওসির সাথে যোগাযোগ করলেও মামলা নেয়নি বেড়া থানা। সকল তথ্য সংগ্রহের পর হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি সবকিছু মিথ্যা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন, এর বাহিরে কোন বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। বেড়া থানার ওসি আসাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি গত ২০/০৩/২২ তারিখে বদলী হয়ে গেছি এই বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই বলে মন্তব্য করেন।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply