জোহরা সালাম :
বেলা বারোটা বেজে দশ মিনিটে ক্রুজ শীপের ইঞ্জিন স্টার্ট হয়ে গেল। ক্যাপ্টেন জাহাজ ছেড়ে দিলেন। জাহাজের নিচে টারবাইন ঘোরা শুরু হয়ে গেছে। একজন নেভিগেটর দূরবীন দিয়ে দুর-দুরান্তে পর্য্বেক্ষণ করছে।
ডেকে দাঁড়িয়ে ছিল তাহমিনা ও কায়েস। সাগরের নীল পানি, আকাশের নীল আর কায়েসের নীল সার্ট মিলেমিশে একাকার। ফর্সা, লম্বা, মাথা ভরা কোঁকড়া চুল, কায়েস যেন সমুদ্রের সেই বরপূত্র। তার পাশে দাঁড়ানো শ্বেতশুভ্র বসনের সেই জলপরী যার হাসিতে মুক্তা ঝরে। এই প্রথম তাহমিনা কায়েসের দিকে মুগ্ধতার দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে থাকলো।
কায়েসের চোখেও মুগ্ধতার আবেশ। প্রথম নীরবতা ভেঙ্গে তাহমিনাই বললো, “দেখো কি সুন্দর এলবার্ট পাখী, সী-গাল উড়ে যাচ্ছে, সাগরের পানিতে আকাশের ছায়া, কী সুন্দর তাইনা?”
কায়েসের চোখেও মুগ্ধতার ছোঁয়া, তবে কি ও স্বপ্ন দেখছে! কায়েস ছোট্ট করে বললো, “হুমম।”
মানুষের হৃদয়ের চেয়ে বড় দর্পণ আর কি হয়! সেই দর্পণে কখন যে কার ছবি ভেসে ওঠে তা কেউ বলতে পারে না। সেখানে কোন শাসন কোন যুক্তি কিছুই চলে না। নিজের অজান্তেই কায়েসের হৃদয়ে সেই ছবি আঁকা হয়ে গেছে, এক ধনাঢ্য, অত্যাধুনিক, উগ্র মন-মানষিকতার তরুনীর।
তাহমিনা আরেকটু সরে গিয়ে বললো, “কথা বলছো না যে! ডাট হয়েছে?”
কায়েস উত্তর দিল, “ওসব তো আপনাদেরই মানায়।”
তাহমিনা বললো, “এক যাত্রায় পৃথক ফল হ’তে নেই। তুমি কি বলো?”
“আপনাকে ম্যাম…”
“ওসব ম্যামফ্যাম নয়, আমার একটা নাম আছে। আর তখন ছিল স্থলভাগ এখন জল। দু’জায়গায় তো দুরকম নিয়মই হবে।”
তাহমিনা নেভিগেটরের নিকট থেকে বাইনাকুলারটা চেয়ে নিয়ে দেখতে থাকলো। আর কায়েসকেও ডেকে দেখালো, “দেখো দেখো… একটা ডলফিন ভুসস করে উপরে উঠছে আবার ডুব দিয়ে মিলিয়ে গেল! দূরে ওগুলো মাছ ধরার ট্রলার, বাবা কি সাহস ওদের!”
কায়েস বললো, “সাহস তো আছেই। এটা ওদের জীবিকা তবে খুব ঝুঁকির কাজ। অনেক জেলে সমুদ্রের টর্নেডোতে প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।”
তাহমিনা কায়েসের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা জাহাজডুবি হয়?”
“অবশ্যই হয়!”
তখনই একটা বড় ঢেউ এসে ডেকের উপর আছড়ে পড়লো। তাহমিনার লং স্কার্টের খানিকটা এবং পুরুষ দুজনের প্যান্টের খানিকটা ভিজিয়ে চলে গেল। তাহমিনা ভয়ে কায়েসকে জড়িয়ে ধরেছে। নেভিগেটর যিনি ছিলেন তিনি বললেন, “ভয় পাবেন না ম্যাম, সমুদ্রযাত্রায় এটা মামুলী ব্যাপার।”
Leave a Reply