শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

জেনে নিন, মাইগ্রেন থেকে প্রতিকারের উপায়

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০
  • ৮৩ Time View

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 

মাথাব্যথা নিয়ে আমরা কম-বেশি সবাই বিভিন্ন সময়ে ভোগান্তিতে পড়ি। মাথাব্যথার একটি বিশেষ ধরন হলো মাইগ্রেন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১১% বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথায় ভুগছেন। সাধারণত ২০-৩০ বছর বয়সে এ রোগ শুরু হয়।

কারণ: মাথার ভেতরে রক্ত চলাচলের তারতম্যের কারণে মাইগ্রেন হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে বিদ্যমান ধমণিসমূহ মাথাব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে যায়, এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। প্রথমে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে গিয়ে চোখে সব অন্ধকার মনে হয়, পরে রক্ত চলাচল হঠাৎ বেড়ে গিয়ে প্রচণ্ড মাথাব্যথার অনুভূতি তৈরি হয়। তবে মাইগ্রেন চোখের কোনো সমস্যার জন্য হয় না। নিউরোভাস্কুলার এ অসুখে মাথাব্যথার জন্য সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের অত্যধিক উপস্থিতি দায়ী। তবে মাইগ্রেনের কারণ সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীর এটি বেশি হয়। নারীর ঋতুস্রাবের সময় এ ব্যথা আরও বাড়ে।

ঝুঁকি: চকলেট, আঙুরের রস, কফি ও পনির জাতীয় খাবার বেশি খেলে মাইগ্রেন হতে পারে। এছাড়া দুশ্চিন্তা, ব্যায়াম, অতিরিক্ত ভ্রমণ, অনিদ্রা, দীর্ঘদিন জন্মবিরতিকরণ ওষুধ খাওয়া, দীর্ঘক্ষণ টেলিভিশন দেখা, মোবাইলে কথা বলায়ও হতে পারে। তবে কম্পিউটারে কাজ করা, অতি উজ্জ্বল আলো, শব্দ, গন্ধ ও বাতাসের চাপের তারতম্য মাইগ্রেনের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

লক্ষণ: মাইগ্রেনের প্রধান লক্ষণ হলো মাথাব্যথা, যা মাথার একপাশ থেকে শুরু হয়ে সমস্ত মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতিও তৈরি করতে পারে। মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথার সাথে বমিভাব বা বমি এবং চোখে ঝাপসা দেখাও যুক্ত হতে পারে। বিরক্তিবোধ, শব্দ ও আলো ভালো না লাগা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, অতিরিক্ত হাই তোলা, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘনঘন প্রস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথার দু’একদিন আগেই শুরু হতে পারে।

প্রতিকার: কিছু নিয়ম মেনে চললে মাইগ্রেনের তীব্রতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। বাঁধাকপি, মাশরুম, চেরি, খেজুর, ডুমুর, অরগান মিট, চিংড়ি, আদা-চা প্রভৃতি খাবার মাইগ্রেনের স্থিতি ও পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করে। তিল, আটা, বিট প্রভৃতি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার, ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত, আলু, বার্লি প্রভৃতি ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার, সবুজ, কমলা, হলুদ রঙের শাক-সবজি ইত্যাদি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।

সতর্কতা: বেশি সময় ধরে টিভি, কম্পিউটার ব্যবহার না করা, উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ এড়িয়ে চলা, তীব্র রোদ ও ঠান্ডা পরিহার করা, কম বা অতিরিক্ত আলোয় কোনো কাজ না করা, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও পরিমিত ঘুম প্রভৃতি নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন মাইগ্রেন পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করে। মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেলে বিশেষত বমি হলে প্রচুর পানি পান করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা, বিশ্রাম করা ইত্যাদি মেনে চললে মাথাব্যথার তীব্রতা হ্রাস পায়। পাশাপাশি চকলেট, অ্যালকোহল, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পেঁয়াজ, টমেটো, সাদা রুটি, আপেল, কলা, চীনাবাদাম, চা, কফি, কোমলপানীয়, টক জাতীয় ফল, আইসক্রিম প্রভৃতি খাবার পরিহার করতে হবে।

চিকিৎসা: বেশি মাথাব্যথা হলে এবং বারবার মাথাব্যথার আক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিছু ওষুধ বারবার মাথাব্যথার আক্রমণ ঠেকাতে আবার কিছু ওষুধ মাথাব্যথা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব ওষুধ সেবনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মানসিক চাপ পরিহার করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়