বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
টঙ্গীতে জমি আত্মসাৎ এর জন্য নিজের মাথায় আঘাত করে মিথ্যা মামলা সাজালেন ছোট ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুরকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষনা করার লক্ষে ইউএনও এর প্রেস ব্রিফিং মিরপুরে ছিনতাইকারী চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার : দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা: খাদ্যমন্ত্রী চেম্বার আদালতেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজ ইলিয়াস-বাবুলের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের নতুন দিন ধার্য টাঙ্গাইল-৩ আসন আওয়ামীলীগের গৃহবিবাদের সুযোগ নিতে চায় বিএনপি হজ পালনে থাকছে না বয়সসীমা, শর্ত তুলে নিলো সৌদি আরব কুষ্টিয়ায় পরিবারের সবাইকে রুমে আটকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন কর্তৃক শরণখোলায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলে কলা নিয়ে বিপাকে চাষীরা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৩০ মে, ২০২০
  • ২৩ Time View

 

 

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :

 

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে করোনার প্রভাবে কোটি-কোটি টাকার উৎপাদিত কলা নিয়ে লোকসানে পড়েছে কৃষকরা। গড়াঞ্চলের সহস্রাধিক চাষী উৎপাদিত কলা নিয়ে বিপাকে পড়েছে। কলার আড়ৎ ও মোকাম বন্ধ থাকায় বেঁচা-কেনা বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়েও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

জানাগেছে, মধুপুর গড়াঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষি। কলা ও আনরস মূলত এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতি সচল রাখে। প্রতিবছর কলা থেকে কোটি-কোটি টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। সারাবছর কলা উৎপাদিত হয়। এখানে কলাকে কেন্দ্র করে চাষী, শ্রমিক, কুলি, পরিবহন ও পরিবহন শ্রমিকসহ নানা মানুষের রুটি-রুজি হয়।

স্থানীয় কলা চাষী, বেপারী ও আড়ৎদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কলার রাজধানী লাল মাটির মধুপুর গড়াঞ্চল। লালমাটি কলা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় এই অঞ্চলের উৎপাদিত কলা ঢাকা, রাজশাহী, কক্সবাজার, টেকনাফ, সিলেট, নাটোর, ভৈরবসহ দেশের নানা জেলায় কলা রপ্তানী হয়ে থাকে।

চাষীরা জানায়, কলা চাষে অন্য ফসলের চেয়ে বেশি খরচ হয়। প্রতিটি গাছে রোপণ থেকে শুরু করে কলা বিক্রি পর্যন্ত গাছ প্রতি ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে ৩০০ থেকে ৩৫০টি কলা গাছ লাগনো যায়। এতে পরিচর্যা করতে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ জন্য এই অঞ্চলের কৃষকরা ব্যয় বহুল কলা চাষের অর্থের যোগানের জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, এনজিও এবং গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কলা চাষে বিনিয়োগ করে থাকেন।

এ বছর করোনার প্রভাব পড়ায় কলা কেনা-বেঁচা থমকে গেছে। এ জন্য কলার ক্রেতা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে ব্যয় বহুল অর্থে উৎপাদিত কলা নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছে চাষীরা।

সরেজমিনে মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের পীরগাছা, ভবানীটিকি ও মমিনপুর গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ তিন গ্রামের কৃষকদের প্রধান ফসল কলা। কলা চাষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত তাদের জীবনাচার।

এ এলাকর প্রান্তিক কৃষকরা ৫ বিঘা থেকে ২০০-৩০০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে কলা বাগান করেছে। কলা চাষে বিনিযোগ করতে এলাকার কৃষকদের দুই লাখ থেকে ২০-৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে গ্রাম্য মহাজনের ঋণ নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা সবেচেয়ে বেশি। প্রতি মাসে এ ঋণের মাসিক কিস্তি দিতে হচ্ছে। এখন কলা বিক্রির উপযুক্ত সময়। আর এ মৌসুমেই কলা বিক্রি থমকে যাওয়ায় বসে পড়েছে তারা।

পীরগাছা গ্রামের চাষী রুকনুজ্জামান খান ২৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কলা চাষ করেছেন। শামছুল আলম ২০০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কলা চাষ করেছেন। তার ঋণ ৩০ লাখ টাকা। এভাবে জমি লিজ নিয়ে সাজু ২০০ বিঘা, সাখওয়াত ৭৫ বিঘা, দেলোয়ার ১৩ বিঘা, ফজলু শেখ ১৫ বিঘা, হানিফ ৮ বিঘা, লিচু খান ২০০ বিঘা, হালিম সরকার ৫০ বিঘা, আজিজ ৩০ বিঘা, ইদ্রিস খান ৪০ বিঘা, শেখ আলহাজ ৩০ বিঘা, বাদশা ২৫ বিঘা, আনোয়ার ১২০ বিঘা, ফরহাদ ১২০ বিঘাসহ গড়াঞ্চলের শ’ শ’ কৃষক জমি লিজ ও ঋণ নিয়ে কলার বাগান করেছেন।
এসব কলা চাষীরা জানান, ছোট কৃষকদের ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৩০-৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ রয়েছে। এবার কলার বাজার ও বিক্রি থমকে পড়ায় প্রত্যেক কৃষকেরই ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে। সার, চারা, কীটনাশক, ভিটামিনসহ নানা কৃষি পণ্যের দোকানে বাকি, শ্রমিকের মজুরি, বড় সুদের ঋণের বোঝা মাথার উপর রয়েছে। এ নিয়ে কৃষকের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

কলা বেপারী আব্দুল জলিল জানান, এ এলাকা থেকে কলা কিনে তিনি চট্টগ্রাম, ঢাকা, সাতকানিয়া, কক্সবাজার, সিলেট, টেকনাফ, ভৈরবসহ নানা জেলায় বিক্রি করতেন। এখন সব মোকাম বন্ধ। এ বছর কৃষক, পাইকার, চাষী প্রত্যেকেরই লোকসান গুনতে হচ্ছে।

কলা চাষী সাজু মিয়া জানান, প্রতি বছর তিনি কোটি টাকার কলা বিক্রি করেন। এ বছর কলা চাষের খরচ তোলাই কঠিন হযে পড়েছে। কলা চাষী লিচু খান, সাখাওয়াত ও শামছুল আলম জানান, করোনার প্রভাবে কলার আড়ৎ বন্ধ থাকায় পাইকাররা কলা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। দুই একজন কিনলেও অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাতে আবাদের খরচও উঠবে না। তাদের লাখ লাখ টাকা ঋণ কী করে পরিশোধ করবেন? এ চিন্তায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের দাবি কৃষি প্রণোদনায় বা ভর্তুকির খাতে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে কলা চাষীরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, জেলার কৃষকদেরকে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মধুপুর গড়াঞ্চলের কলা চাষীরা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মধুপুর গড়াঞ্চল বলতে সাধারণত মধুপুর, ঘাটাইল, ধনবাড়ী, সখীপুর ও গাজীপুরের কিয়দংশকে বুঝায়। অধিদপ্তর থেকে উপজেলা ওয়ারী খোঁজখবর নিয়ে কলা চাষীদেরকেও কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়