আ: রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :
টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উত্তোলন করার চেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের সহকারী জজ (কালিহাতী) আদালতে দায়েরকৃত মামলায় উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও তার কার্যালয়ের সার্ভেয়ারকে আসামি করা হয়েছে। আদালত আগামি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন।
কালিহাতী পৌর সভার উত্তর কালিহাতী এলাকা ভূমির মালিক বিএনপি সমর্থিত সাবেক মেয়রের ভাই হওয়ার ক্ষোভে বর্তমান পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি নুরুন্নবী সরকারের প্ররোচনায় সরকারি কর্মকর্তারা ওই ভূমি দখলে নেমেছেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী আব্দুস ছাত্তার মিয়া। এ নিয়ে হতাশা ও জমি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন ওই ভূমির মালিক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, কালিহাতী পৌর সভার কালিহাতী মৌজার সাবেক ৮৭ নং দাগের মালিক দাবিকৃত ০২.৫০ শতাংশসহ মোট ২০ শতাংশ ভূমির জোতদখলদার মুচিরাম মাঝি। পরে ওই ভূমি বংশপরম্পরায় পৈত্রিকসূত্রে সুনীল চন্দ্র রাজবংশী মালিক হন। এরপর ১৯৯৯ সালে ১৭ মে ৩৫৭৪ নং এওয়াজনামা দলিলমূলে সাবেক ৮৭ দাগের ০২.৫০ শতাংশ ভূমি মামলার বাদী আব্দুস ছাত্তার মালিক হন। বর্তমানে বিআরএস জরিপে আব্দুস ছাত্তার মিয়ার নামে ৮৭ নং দাগের ০২.৫০ শতাংশ ভূমির মাঠপর্চা প্রস্তুত হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাই নদী ঘেঁষা কালিহাতী পৌর সভার ওই ভূমিতে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। নদী থেকে উত্তোলনকৃত মাটি দিয়ে ভূমি উঁচুকরণে কাজ করছেন আট জন নারী শ্রমিক। ৬০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে সরকারি কাজ করছেন বলে জানান নারী শ্রমিক মাধবী রাজবংশী।
স্থানীয় প্রতিবেশী সম্ভু রাজবংশী জানান, জমিটি সাবেক মেয়র আব্দুস ছাত্তার মিয়াদের। এই জমিতে তারা মাটি মজুদ রাখাসহ নানা ধরণের কাজে ব্যবহার করেছেন- তা তারা দেখেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধের আগে থেকে বসবাসকারী প্রতিবেশি ফিরোজা শহীদ সিদ্দিকী জানান, তার স্বামী ও তারা একই সময় হিন্দুদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন। তবে তারা কতটুকু জমি কিনেছিলেন তা তিনি বলতে পারেননি। এছাড়া সে সময় এই এলাকার অধিকাংশ জুড়ে নদী ছিল বলে জানান তিনি।
অপর প্রতিবেশি বাচ্চু সিদ্দিকী জানান, জমিটি কালিহাতী পৌরসভার সাবেক মেয়র জব্বার ও তার ভাইদের ছিল। হঠাৎ একদিন দেখেন সরকারি লোকজন এসে জমিটি খাস বলে দাবি করে ঘর নির্মাণের জন্য মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেন। জমির প্রকৃত মালিকানা নির্ণয়ের দাবি জানান তিনি।
জমির দাবিদার আব্দুস ছাত্তার মিয়ার ভাতিজা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, জমিগুলো তাদের ক্রয়কৃত। প্রায় বিশ বছর যাবৎ ওই জমিগুলো তারা ভোগদখল করছেন এবং কিছু জমি বিক্রিও করেছেন। তাদের ৮৭ নং দাগের রেকর্ড ও দলিলমূলে প্রাপ্ত পাঁচ শতাংশ জমিতে জোরপূর্বক সরকারিভাবে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা কাগজপত্র নিয়ে জমিটি তাদের বলে কর্মকর্তাদের বুঝানোর চেষ্টার পরও সার্ভেয়ার গুরুত্ব দেননি। এর প্রতিকারে তারা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তার কার্যালয়ের সার্ভেয়ারকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরও কাজ বন্ধ না করে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
কালিহাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাহিদ হোসেন জানান, জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত তাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উত্তোলনের জন্য মাটি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় সাধারণত তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে। তিনি যথাসময়ে আদালতে জবাব দাখিল করবেন বলেও জানান।
কালিহাতী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি নুরুন্নবী সরকার জানান, জমিটি পৌর এলাকায় হলেও এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তাকে জড়িয়ে অহেতুক প্রশ্ন তোলা হচ্ছে দাবি করে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। জমিটি সরকারি না ব্যক্তি মালিকাধীন সে বিষয়টি উনারাই নিশ্চিত করতে পারবেন।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল হুসেইন জানান, জমিটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এ কারণে তারা জমিতে মাটি ভরাট করছেন। জমিটি ব্যক্তি মালিকাধীন দাবি করে মামলা ও আদালতের নোটিশ পাঠানোর কথা স্বীকার করেন তিনি। আদালতের পাঠানো নোটিশের জবাব যথাসময়ে দেওয়া হবে। তারপরও ওই ভূমি পুনরায় পরিমাপ করা হবে বলে তিনি জানান।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply