আ: রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ও ফতেহপুর ইউনিয়নে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রায় ৭০ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ওই সব এলাকার চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
জানাগেছে, গোড়াই ইউনিয়নের কদিম দেওহাটা, মীর দেওহাটা, দেওহাটা মল্লিকপাড়া, সারেংবাড়ি এবং ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া, হিলড়া ও হিলড়া আদাবাড়ী এলাকায় পাশাপাশি কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে কোনটির অনুমোদন থাকলেও কোনটির নেই। এসব এলাকার ১২-১৩টি ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়ার কারণে পাশের ক্ষেতের ধানের পাতা লালচে ও বিবর্ণ হয়ে গেছে। ধানের ছড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশেই থাকা বিভিন্ন ধরনের সবজিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এবং এর সংশোধিত আইন, ২০১৯ অনুযায়ী- আবাসিক এলাকা, কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্লিনিকের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ কৃষি জমি, সবজি বাগান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠেছে। অজ্ঞাত কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর এসব ইটভাটা চালানোর অনুমোদন দিয়ে থাকে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আবদুল হাই, উপজেলার গোড়াইল গ্রামের বিল্লাল হোসেন, মীর দেওহাটা গ্রামের মোহাম্মদ আলী, ফজল মিয়া, মো. আমান উল্লাহ, শহিদুর রহমান, ইউসুফ মিয়া এবং গাজীপুরের সফিপুরের মো. সাইজ উদ্দিন এসব এলাকায় ইটভাটা চালাচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগে প্রকাশ, ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে ফসলের এমন ক্ষতি হচ্ছে। এসব ইটভাটার কারণে পাশের জমিগুলোর ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ধোঁয়ার কারণে ধানের চারা লাগানোর পর চারাগাছের পাতা বিবর্ণ হতে থাকে। এ অবস্থায় ধানের চারা বড় হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে পাতার রং দেখে মনে হয় পুড়ে গেছে। ধানের ছড়া নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ইটভাটা ঘেঁষেই তৈরি করা সড়ক দিয়ে ওই সব ইটভাটায় কাঁচামাল হিসেবে মাটি, কয়লা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা ও ইট পরিবহনের জন্য ভারী ট্রাক চলাচল করায় গ্রামীণ সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে।
স্থানীয় শাজাহান বয়াতির স্ত্রী হোসনে আরা জানান, তারা ১৫০ শতক জায়গা বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেন। ৪-৫ বছর আগে ওই স্থানে ইটভাটা নির্মাণ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে ইটভাটা বাড়তে থাকে। ইটভাটা হওয়ার আগে জমি থেকে তারা যথেষ্ট পরিমাণ ধান পেতেন। কিন্তু তিন বছর ধরে জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মীর দেওহাটা গ্রামের সমেজ উদ্দিন জানান, গত বছর প্রতি শতাংশ জমিতে ২০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন ইটভাটার মালিকরা। কিন্তু ওই ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে আবাদের খরচ ওঠেনি। তিনি আরও জানান, কাউকে কিছুই বলার নেই। সবাই নেতা টাইপের লোক। ধান তো নষ্ট হয়ই। গাছের ফল থাকে না। নারকেলগাছের নারকেল পূর্ণবয়স্ক হওয়ার আগেই পড়ে যায়। অন্যসব গাছে যদিও ফল ধরে ছোট থাকতেই ঝড়ে যায়।
স্থানীয় একটি সেচযন্ত্রের মালিক আমিনুর রহমান জানান, মল্লিকপাড়া ও সারেংবাড়ি এলাকায় ধান চাষের জন্য চারটি সেচ প্রকল্প রয়েছে। ইটভাটার কারণে সব প্রজেক্টের ধানেরই ক্ষতি হয়েছে। ভাটার ধোঁয়ায় সব পুড়ে গেছে। সবগুলো ভাটার ধোঁয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ইটভাটার মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, ঈদের আগেই তার ভাটার আগুন নিভিয়ে ফেলেছেন। তার ভাটার কারণে কোনো ধানক্ষেত নষ্ট হয়নি।
অপর এক ইটভাটার মালিক মো. আমান উল্লাহ জানান, অপেক্ষাকৃত নিচু চিমনির ধোঁয়ার কারণে ফসল নষ্ট হয়ে থাকে। তার ইটভাটার চিমনির উচ্চতা প্রায় ১৩০ ফুট- যার ধোঁয়া আকাশে মিলিয়ে যায়। ফলে তার ভাটার কারণে ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জমির উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply