বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৪:১১ পূর্বাহ্ন

টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও বন্ধ হচ্ছে না কবিরের চাঁদাবাজি (পর্ব-২)

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩
  • ১৯ Time View

 

 

আনিছ মাহমুদ লিমন :

 

দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে প্রশাসনের সাফল্য রয়েছে অনেক। সে জন্য জনসাধারনের কাছে প্রশাসনের ভাবমূর্তী উজ্জ্বল হয়েছে। সরকার প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া হুশিয়ারী সত্ত্বেও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় চাঁদাবাজরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে।

এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে অপমান অপদস্ত হতে হয়। রাজধানীর মিরপুরের এক নম্বর সেকশনের বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ফুটপাত ও রাস্তার হকারদের কাছে থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আদায় করে কবির। পুলিশ প্রশাসনের নামেই কবির হকারদের কাছ থেকে চাঁদার টাকা আদায় করে। মিরপুর এক নম্বর সেকশনের জিমার্ট মার্কেট, মিরপুর নিউ মার্কেট, মুক্ত বাংলা মার্কেট, রবিউল প্লাজা, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, সিটি করপোরেশন মার্কেট, হযরত শাহ আলী মহিলা কলেজ মার্কেট, ফেয়ার প্লাজা, ছিন্নমূল মার্কেট, আন-নূরী মসজিদ মার্কেট, মা প্লাজা মার্কেট, বাগদাদ মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় কয়েক হাজার হকার ব্যবসা করে।

এসব হকারদের প্রত্যেকের থেকে কবির প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে প্রশাসনের নামে চাঁদা আদায় করে। এসব চাঁদার টাকা আদায়ের জন্য কবিরের ভিন্ন ভিন্ন কর্মচারী রয়েছে। এক একজন কর্মচারী এক এক মার্কেটের সামনে থেকে চাঁদার টাকা আদায় করে। দৈনিক চাঁদা আদায়ের পরও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তাদের নামে সপ্তাহে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় হয় আড়াই লক্ষাধিক টাকা। হকারদের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে কবিরের সাথে কথা বললে সে এসব চাঁদার সিংহ ভাগই প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তিদের দিতে হয় বলে জানায়।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে কবিরের সহযোগিদের কাছ থেকে জানা যায় চাঁদার টাকার সিংহ ভাগই থেকে যায় কবিরের পকেটে। কবির চাঁদাবাজির সাথে সাথে বিভিন্ন হকারের দোকানও দখল করে । মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের কাজি ষ্টোরের সামনে ফলের দোকানটি ওসি শাহ আলীর নাম ভাঙ্গিয়ে দখল করে নেয়। এভাবে বেশ কটি দোকান শাহ আলী থানার নাম ভাঙ্গিয়ে দখল করে ভাড়া দিয়ে রেখেছে। তাছাড়া কবিরের নিজেরও ফুটপাতে রয়েছে প্রায় বিশটি দোকান। প্রত্যেক দোকান কর্মচারী দিয়ে পরিচালনা করে।

এসব দোকান দেখভালে রয়েছে তার ছোট ভাই , তার বড় ভাই দিয়ে পরিচালনা করে ছয়টি গেন্ডার মেশিন। বিভিন্ন মার্কেটের সামনে হকারদের সাথে কথা বলে জানা যায় কবিরের চাঁদাবাজির চিত্র। হকাররা কবিরের চাঁদাবাজি থেকে পরিত্রান ও মুক্তি চায়। হকারদের অভিযোগ শাহ আলী থানার কর্তাব্যক্তির প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় কবির চাঁদাবাজি করে। তাকে কোন হকার কিছু বললেই পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে অথবা থানায় ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে হকাররা কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না বলে জানায়।

কবিরের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিলে তার গ্রামের অনেকেই বলে কবির হঠাৎ করে কোটি কোটি টাকা পেল কোথায় ? গ্রামের বাড়িতে আলিসান বিল্ডিং। উপজেলা সদরে বিশাল এক মার্কেট। মার্কেটের নাম রেখেছে ‘‘কবির মার্কেট’’ গ্রামে বিশটি হুন্ডা (মটরসাইকেল)কিনে ভাড়া দিয়ে রেখেছে।‘‘সোনার তরী’’ ব্যানারে চলে তার দুটি ‘‘ নাইট কোচ’’ বেশ কটি মাইক্রো গাড়ী ভাড়া দিয়ে রেখেছে। কবির নিজেকে শাহ আলী থানার হকার লীগের ‘‘সেক্রেটারী’’ দাবি করে। কবিরের রয়েছে দুটি এন . আই . ডি কার্ড।

একটি তার গ্রামের ঠিকানায় , অপরটি ঢাকার মিরপুর এক নম্বর ডি ব্লক – ৯ নম্বর রোডের ঠিকানায়। কবিরের ঘনিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে- কবিরের জাতীয় পরিচয়পত্র মিরপুরের ঠিকানায় দিয়ে বানিয়েছে সেটি ভূয়া। কবির চাঁদাবাজির সাথে সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র জাল তৈরি করে সেটি দিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে দোকানের ট্রেড লাইসেন্স করেছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় জাল এন . আই . ডি দিয়ে কাম হাসিল করে। তার জাল এনআইডি নম্বর – মোঃ কবির ১৪৯৪১২৩৩২৪। কবিরের ব্যক্তিগত অফিস রয়েছে ফেয়ার প্লাজায় , সেখানে রাত নয় টার পরে তার চাঁদাবাজির কর্মচারীদের নিয়ে হিসাবে বসে। মার্কেটের দারোয়ানের সাথে কথা বললে , সে জানায় কবির ভাই প্রতি রাতে তার কর্মচারীদের কাছ থেকে আদায় করা চাঁদার লাখ লাখ টাকার হিসাব করে বুঝে নেয়।

কবিরের মোবাইল ফোনে রয়েছে মন্ত্রি , এমপি ও ছোট বড় রাজনৈতিক নেতাদের নম্বর। তাছাড়া পুলিশ প্রশাসনের ছোট কর্তা , বড় কর্তাব্যক্তির নাম নম্বর ও রয়েছে তার মোবাইলে। রয়েছে র‌্যাব , ডিবি , সিআইডির কর্তাব্যক্তিদের নাম নম্বর। এদের নাম ভাঙ্গিয়ে হকারদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়। এক নম্বর সেকশনের মার্কেটগুলির কমিটির লোকজনের সাথে কবিরের চাঁদাবাজির আলাপ করলে, তারা বলে, কবিরের মত লোক টাকার গরমে একসময় হয়ে ওঠে শীর্ষ সন্ত্রাসী টোকাই সাগর অথবা কালা জাহাঙ্গীরের মত সন্ত্রাসী।

এখনই এর লাগাম টেনে না ধরলে পরবর্তীতে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে কবির। তার চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপকর্মের খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তীতে সংবাদ প্রকাশ করা হবে ।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়