শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০১:৫৬ অপরাহ্ন

ডোকলামের দখল পেতে চীনের হাতিয়ার ‘থ্রি ওয়ারফেয়ার স্ট্র্যাটেজি’

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭
  • ৩০ Time View

রণক্ষেত্রে মুখোমুখি যুদ্ধ করে নয়াদিল্লির কাছ থেকে ডোকলাম ছিনিয়ে নেওয়া যে সহজ হবে না, সে কথা বুঝেছে বেইজিং। ভারতের একাধিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভারতের বিরুদ্ধে সনাতন ‘থ্রি ওয়ারফেয়ার স্ট্র্যাটেজি’কে হাতিয়ার হিসেবে বাছাই করেছে চীন? তারা জানান, ডোকলামে জয় পেতে চীন কিন্তু সুকৌশলে তাদের আসল তাস খেলে ফেলেছে।

কিন্তু কী এই কৌশল? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কৌশলের ছক তৈরি হয় ২০০৩-এ। যদিও প্রকাশ্যে সে কথা বেইজিং কখনই স্বীকার করে না। লালফৌজের নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন এই স্ট্র্যাটেজিকে ছাড়পত্র দেয়। দক্ষিণ চীন সাগরে দাদাগিরির লক্ষ্যেই জন্ম ‘থ্রি ওয়ারফেয়ার স্ট্র্যাটেজি’র বা তিন রণকৌশল নীতির। এর মধ্যে প্রথমটি হল ‘মিডিয়া যুদ্ধ’। প্রতিপক্ষকে নিশানা করে চীনা সংবাদমাধ্যমে একের পর এক প্ররোচনামূলক খবর প্রকাশ করে বিপক্ষকে চাপে রাখার ছক করা হয়েছে। ভারত যেটা টের পাচ্ছে। চীনা সংবাদমাধ্যমগুলি প্রায়ই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঙ্কার ছাড়ছে। অবশ্য নয়াদিল্লি ওইসব সংবাদপত্রকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। কারণ, চীনা সংবাদমাধ্যম আসলে সে দেশের শাসক কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীন। দলীয় মুখপত্র হিসাবে কাজ করে গ্লোবাল টাইমস, শিনহুয়া নিউজ। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সঙ্গে চীনের মানুষের পরিচয় নেই বললেই চলে। কারণ, সংবাদমাধ্যম ছাড়াও অধিকাংশ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারও নিষিদ্ধ সে দেশে।

দ্বিতীয় কৌশলটি হল ‘মানসিক যুদ্ধ’। এই কৌশলের জন্য নিয়োগ করা হয় চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে, সেনাকর্তাদের। তাঁরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মৌখিক তোপ দেগে আস্ফালন দেখান।  বারবার দেশের সামরিক শক্তির বড়াই করেন। সেনাবহরের খতিয়ান দেন। এই কৌশলেও দমেনি ভারত।  ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলিরা জানিয়ে দিয়েছেন, দেশ এখন আর ১৯৬২-র ভারত নেই যে চীনের কাছে হেরে যাবে! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ঢেলে সাজানো হয়েছে দেশের সামরিক বাহিনীকে। আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইজরায়েলের কাছ থেকে নিয়মিত অস্ত্র, যুদ্ধবিমান আসছে এ দেশে। চলে এসেছে অত্যাধুনিক কামান, তৈরি রয়েছে দেশের পারমাণবিক সাবমেরিন। আকাশপথে নজর রাখছে অত্যাধুনিক ড্রোন। আর এই সমস্ত সামরিক অস্ত্র পরিচালনা ও দক্ষতায় জল-স্থল ও আকাশে বিপক্ষ যে কোনও দেশের বাহিনীকেই যে টেক্কা দিতে পারে ভারত, সেটা কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

লালফৌজের ‘থ্রি ওয়ারফেয়ার স্ট্র্যাটেজি’র তৃতীয় কৌশলটি হল আইনি লড়াই। ২০১৬ সালে এই ছকেই আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ চীন সাগরের দখল পেতে চেয়েছিল বেইজিং। কিন্তু তা মুথ থুবড়ে পড়ে। বরং ফিলিপাইনের মতো দেশ কৌশলগত জয় ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এবার ভুটানকে ব্যবহার করে ওই একই পন্থা ভারতের বিরুদ্ধে গ্রহণ করতে চাইছিল চীন।

কিন্তু এবারও ওই ছক বানচাল করে দিল ভারত। বেগতিক বুঝে চীনা সেনাকর্তারা সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য ভারতের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন। কিন্তু ডোকলাম ইস্যুতে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে চীনকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, সেনা প্রত্যাহার করতে হলে একসঙ্গে দুই দেশকেই তা করতে হবে। সীমান্তে সংঘাতের পরিস্থিতি প্রশমনে শুক্রবার সিকিমের নাথু লা-তে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বসেছিলেন দু’দেশের শীর্ষ সামরিক কর্তারা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়