(ভুয়া ম্যাজিষ্ট্রেট সেজে একটি প্রতারক চক্র রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তিতাসের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আবার ব্ল্যাকমেইলিং করে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এসব প্রতারকদের সাথে তিতাস প্রধান কার্যালয়ের অনেক অসাধু কর্মকর্তার সাথে আতাত রয়েছে।)
স্টাফ রিপোর্টার :
সম্প্রতি তিতাসের গ্যাসের লাইন কাটাকে কেন্দ্র করে একটি ভুয়া প্রতারক চক্রের ঘটনা সামনে আসলে জানা যায়, এই প্রতারক চক্রের মধ্যে একজন অভিনয় করেন তিতাসের ম্যাজিষ্ট্রেটের, বাকিরা অভিনয় করেন বিভিন্ন কর্মকর্তার। এই সংবাদ প্রকাশ হলে অনুসন্ধান করে জানা যায়, খোদ সরিষা ক্ষেতেই ভুত। তিতাস প্রধান কার্যালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘাপটি মেরে আছে চোরের দল। তারা রীতিমতো সরকারী চাকরী করছে। তাদের বিভিন্ন রকম আতাতে প্রতারক চক্ররা এই দুঃসাহসী কাজ করার সাহস পায়। এখান থেকে অবৈধ আমদানীতে যে কোটি কোটি টাকা আসে তার সিংহ ভাগ চলে যায় ঘাপটি মেরে থাকা চোরের পকেটে। রক্ষক যেখানে ভক্ষক।
দুষ্কৃতিকারী লুটেরাদের সাথে মিশে খোদ কিছু অসাধু সরকারী কর্মকর্তারা নিজেদের পকেট অন্যায়ভাবে ভরার প্রয়াসে হাত মিলিয়ে মীর জাফরের মতো দেশ ও জনগণের ক্ষতি করে আসছে। এরকম মীরজাফরদের খোঁজ পাওয়া গেছে তিতাস প্রধান কার্যালয় সহ রাজধানীর বিভিন্ন দপ্তরিক অফিসে। এসব অসাধু কর্মকর্তারা রীতিমতো দিনে দুপুরে যারা ডাকাতি করে তাদেরকে সহযোগীতা করে আসছে এমন অভিযোগ উঠে এসেছে রাজধানীর উত্তরা সহ বিভিন্ন এলাকায়।
গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড(তিতাস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম একটি রাজস্ব আয়ের উৎস। এদেশের গ্যাস দেশের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। তিতাস এই দায়িত্বটি পালন করার জন্য রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন শহর উপশহরে দিয়েছে গ্যাসের লাইন। প্রতিনিয়ত কলকারখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সিএনজি পাম্পে গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে যা থেকে প্রতিটি মানুষ হচ্ছে উপকৃত।
বর্তমান সময়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচাল মোঃ হারুনুর রশিদ মোল্লার নেতৃত্বে যখন অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ সহ তিতাসের বকেয়া আদায়ের মধ্য দিয়ে সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রী সহ সবাই যখন তিতাসকে ডেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় উন্নয়নের রোল মডেলের সোপানে কাজ করে যাচ্ছে, ঠিক তখনই একটি কু-চক্রী মহল তিতাসের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা নিজেরা ম্যাজিষ্ট্রেট সেজে বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে যেয়ে তিতাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যায় রেগুলেটর, রাইজার সহ পাইপ আবার তারাই গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন কিছু ফেরৎ দেয়।
এভাবে এই চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। হয়রানি হচ্ছে গ্রাহক, হয়রানি হচ্ছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। এদের এতটাই সাহস সচিব পদমর্যাদা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বড় বড় কর্মকর্তাদের ব্যক্তি মালিকানা বাড়ী থেকেও গ্যাসের লাইন অবৈধ ভাবে কেটে ব্ল্যাকমেইলিং করতে তাদের বুক কাটেনা। এই চক্রের অন্যতম হোতা জাহিদ (ম্যাজিষ্ট্রেট), হাবিব, সুজন, হাবিবুর রহমান, জাকির, নজরুল, মাহবুব, তাদের সহযোগী মাসুদ ও মামুন এরা সবাই প্রতারক চক্রের সদস্য। এদের মধ্যে হাবিবের স্ত্রীও মাঝে মাঝে সাজে ভুয়া ম্যাজিষ্ট্রেট। এসব চক্রের সদস্যরা তিতাসের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে। প্রতারক হাবিব জানায়, আমি জাকিরের ভাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদের মধ্যে অনেকে কোন না কোন সময় তিতাসের বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত ছিল বিধায় কিভাবে লাইন কাটতে হয় তা তাদের জানা আছে। এরা বিভিন্ন অপরাধে বহিস্কৃত ও চাকুরিচ্যুত হয়েছে। কেউ কেউ খেটেছে জেল, আবার পুনরায় বের হয়ে জড়িয়েছে অপরাধে। ০১-০২-২০২৩ ইং দুপুরের সময় উত্তরা ১০ নং সেক্টর, ১২ নং সেক্টর সহ নলভোগ এলাকায় বিভিন্ন বাড়ী থেকে এই প্রতারক চক্ররা লাইন কেটে রেগুলেটর সহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি নিয়ে যায়। বিশ্বস্ত সূত্রে এই খবর তিতাসের কর্মরত মাস্টার রুলে কাজ করা সংবাদের প্রতিবেদক সোহাগ জোয়াদ্দার জানতে পারলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখে তিতাসে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ জানায়, কাউকে লাইন কাটার জন্য সেখানে পাঠানো হয়নি। তারা প্রতারক চক্র। পরবর্তীতে এই চক্রের সাথে কথা বলে তাদেরকে টাকা দিয়ে মালামাল ফেরৎ আনার কথা জানালে প্রতারক চক্ররা খিলক্ষেত থানা সংলগ্ন নিকুঞ্জে সোহাগ জোয়াদ্দারের সাথে দেখা করলে, এক পর্যায়ে প্রতারক চক্ররা বুঝতে পারে সোহাগ জোয়াদ্দার পুলিশ ডেকে তাদেরকে ধরিয়ে দিবে। তখন প্রতারকরা সোহাগ জোয়াদ্দারের সাথে দস্তাদস্তি করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সম্পূর্ণ বিষয়টি সোহাগ জোয়াদ্দারের গোপন ক্যামেরায় রেকর্ড হয়।
বিষয়টি নিয়ে সোহাগ জোয়াদ্দার খিলক্ষেত থানার কর্তব্যরত ইন্সপেক্টর তদন্ত এনামুল হক খন্দকারের কাছে গেলে তিনি জানান, উত্তরা পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু ঐ মুহুর্তে ইন্সপেক্টর তদন্ত পদক্ষেপ নিলে প্রতারকদের গ্রেফতার করা যেত। তিনি সহযোগীতা তো করলেনই না উল্টো আমি কোন পত্রিকায় কাজ করি, এই পত্রিকা চিনিনা ইত্যাদি হেয় প্রতিপন্ন কথা বলে কালক্ষেপন করে উপহাসের হাসি হাসলেন।
এ বিষয় নিয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হারুনুর রশিদ মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি জানান, এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নেব। প্রতিবেদকের এই সংবাদ গত সংখ্যায় প্রকাশক হওয়ার পর ইতিমধ্যে তাকে এবং পত্রিকার সম্পাদককে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে প্রতারক চক্র। এই সংবাদ লেখার সময় পত্রিকা অফিসে প্রস্তুতি চলছে প্রতারকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরী করার জন্য।
এসব প্রতাকরা প্রতারণা করেও ভয় পায়না। কারণ তাদের পিছনে রয়েছে তিতাসের বড় বড় বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তাদের রয়েছে শত শত কোটি কোটি টাকা। অন্যায় করে বেঁচে যাওয়ার মতো রয়েছে তাদের হাজারও পথ। তারা বলে, টাকা দিয়ে সব পাল্টে দেওয়া যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সোপানে কোন অসাধু মীরজাফর বেঈমান কর্মকর্তা ও প্রতারক চক্রের স্থান নেই। সবাই আসবে আইনের আওতায় এমনটাই প্রত্যাশা সবার। আগে সোনার বাংলা পরে অন্যসব। সাধু সাবধান।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply