নয়ন হোসেন:
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীর দুই পাড় দখল করে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক ডকইয়ার্ড প্রতিষ্ঠান। দখল আর দূষনে ধ্বংশ হতে চলেছে শীতলক্ষ্যা নদী।
বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নরসিংদী গাজীপুর, ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি নদী শীতলক্ষা নদী ওরফে লক্ষ্যা নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২২৮ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃত শীতলক্ষা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী নং ৫৫। এই নদীটি ব্রক্ষপুত্র নদো একটি উপনদী। এর গতিপথের প্রাথমিক পর্যায়ে এটি দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পরে নারায়ণগঞ্জের পূর্ব দিয়ে কালাগাছিয়ার কাছে ধলেশ্বরী নদীর সাথে মিশেছে। এর উপরি ভাগের একটি অংশ বানর নদী নামে পরিচিত। নদীটি প্রায় ১১ কিলোমিটার লম্বা এবং নারায়ণগঞ্জের নিকটে এর সর্বোচ্চ প্রস্থ প্রায় ৩০০ মিটার। এর সর্বোচ্চ প্রবাহ ডেমরার কাছে ২,৬০০ কিউসেক। সারা বছর ধাে এর নাব্যতা বজায় থাকে।
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীর দুই পাড় দখল করে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক ডকইয়ার্ড প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মাত্র ৭৫টি অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিøউটিএ) অনুমোদন থাকলেও ২ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমেভদন নেই বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়। এ সব প্রতিষ্ঠান নদীর পাড় দখল কাে অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের সৈয়দপুর থেকে রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ শীতলক্ষা নদীর সীমানা চিহ্নিত করে ৫ হাজার ১১টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১৯৮টি পিলার নদীর সীমানার সঠিক স্থানে বসানো হয়নি বলে আপত্তি জানিয়েছে সংস্থাটি। এ সব পিলারগুলোর বেশির ভাগই বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থিত। এ সব প্রতিষ্ঠান কৃত্রিমভাবে নদীর তীর ভরাট করে পিলারগুলো সরিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। নদীর পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে এ সব স্থাপনা তৈরির কারণে শীতলক্ষ্যাসহ ঢাকার চারদিকের নদীগুলো আজ হারিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া বিশেষজ্ঞরা জানান, ঢাকার চারদিকে শীতলক্ষ্যাসহ চারটি নদীর কোন অভিভাবক না থাকার কারণে বর্তমানে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ১৯৯৮ সালেও নদীর পানি কিছুটা স্বচ্ছ ছিল। কিন্তু এরপর থেকে নদীর পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে শিপ ও ডকইয়ার্ডসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরির কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতদিন ধরে এভাবে নদীগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান কোন প্রতিবাদ করেনি। সবাই মিলেমিশেই নদীগুলো নষ্ট করছে। তাই নদী ও নদীর তীর রক্ষায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তাছাড়া, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে রাতে চলাচল করছে বালুবাহী বাল্কহেডসহ মালবাহী কার্গো। এ কারণে গত তিন বছরে ৩০টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্প ও বাণিজ্যনগরী নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীদের খেয়া পারাপারের জন্য ঘাট আছে নয়টি। ঘাটগুলো হলো শহরের লঞ্চ টার্মিনাল এলাকার সেন্ট্রাল খেয়াঘাট, ৫ নম্বর সারঘাট, নবীগঞ্জ, সোনাকান্দা, মদনগঞ্জ, টানবাজার, বরফকল জামাল সোপ, ল²ণখোলা ও কুড়িপাড়া খেয়াঘাট। এসব ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী খেয়া পারাপার হয়। কিন্তু শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে কার্গো, বালুবাহী বাল্কহেডসহ বড় বড় নৌযান। এসব নৌযানের বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। নৌ পুলিশের হিসাবমতে, গত তিন বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩০টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ক্ষ্যায় খেয়া পারাপারকারী নৌকার মাঝি তোরাব আলী বলেন, নৌ দুর্ঘটনার জন্য একমাত্র দায়ী বাল্কহেড। বাল্কহেড লোড হয়ে চলাচল করলে পানির সঙ্গে মিশে থাকায় এটাকে দেখা যায় না। এ ছাড়া বাল্কহেড দ্রæতগতিতে চলায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। বিশেষ করে রাতে বাল্কহেড চলাচল করলে দেখা যায় না।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply