শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নীলফামারীতে ট্রেন আটকিয়ে মানববন্ধন ঢাকাসহ তাপপ্রবাহ বইছে ৬০ জেলায় সোনারগাঁয়ে ৭টি রেষ্টুরেন্টসহ দুই হাজার অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন ১ জনকে আটক স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা দাম কমবে ইন্টারনেটের ১৬১ টাকা কমলো ১২ কেজি এলপিজির দাম মেলান্দহের আদ্রা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কুচক্রিমহলের ষড়যন্ত্র! উত্তরা আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ রেললাইন বস্তি অপরাধ মাদকের অভয়ারণ্য গুলশান-বনানীর বিস্তৃত এলাকার একচ্ছত্র মাদক সম্রাট হুমায়ুন কবির গাজী ক্ষমতার জোরে অন্যের জমি দখলের চেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে; থানায় অভিযোগ

দান রোগ-ব্যাধি নিরাময় করে দানের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩
  • ২৯ Time View

 

 

 

মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার :

 

জীবনে চলার পথে টাকাপয়সা লাগেই। অর্থসম্পদ টাকাপয়সা মানুষের জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ অর্থ মানুষ উপার্জন করে, ব্যয় করে এবং সঞ্চয়ও করে। এ উপার্জন-ব্যয়-সঞ্চয়- সবই পার্থিব এ জীবনকে সাজিয়ে তোলার জন্যে, এ জীবনের সুখ ভোগ করার জন্যে। নিজের উপার্জিত সম্পদ দিয়ে মানুষ নিজের প্রয়োজন মেটায়, মেটায় অধীনস্থ পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনও। কিন্তু সামর্থ্য সকলের সমান থাকে না। কারও কাছে সঞ্চিত হতে থাকে প্রয়োজন-অতিরিক্ত টাকার ভাণ্ডার, কারও হাতে থাকে না দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন পূরণের যৎসামান্য উপকরণ।

এ পরিস্থিতিতে মানুষ এগিয়ে আসে মানুষের কল্যাণে। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ বিলিয়ে দেয় অন্যদের প্রয়োজনে। দান বা সদকা বলে আমরা সাধারণত একেই বুঝি।

শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় ও কৃপণতার আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার কথা দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। -সূরা বাকারা (২) : ২৬৮

আয়াতের মর্মে কোনো অস্পষ্টতা নেই। মানুষ যখন দান করতে চায়, শয়তান তখন তাকে অভাবের ভয় দেখায়। নিজের ভবিষ্যৎ, সন্তানের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নানা বিষয় সামনে তুলে ধরে তাকে দান থেকে বিরত রাখতে চায়। দান করলে নিজের সম্পদ চলে যাবে অন্যের হাতে, এতে সম্পদ যাবে কমে- এসব তো স্বাভাবিক কথা-ই। স্বাভাবিকতার এ ফাঁদ পেতেই শয়তান মানুষকে দানের অবারিত সওয়াব থেকে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ দয়াময় আমাদেরকে শয়তানের এ ফাঁদের কথা জানিয়ে দিচ্ছেন, এর পাশাপাশি নিজে দয়া করার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। আল্লাহ যদি কাউকে দয়া করেন, তার আর ভয় কীসের! এ দয়ার প্রতি যার আস্থা অটুট, তার আবার কীসের দরিদ্রতা, কীসের অভাব! আল্লাহ তাআলা যে দানশীলদের দয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, বিষয়টি এখানেই শেষ নয়; তিনি এরপর ঘোষণা করছেন- আল্লাহ প্রাচুর্যময়। কোনো কিছুর অভাব তাঁর নেই। তিনি সর্বজ্ঞ। জগতের সবই তাঁর জানা। কোনো কিছুই তাঁর অজানা নয়, তাঁর থেকে গোপন নয়। যাকে তিনি চান, তাকে তিনি দেবেন। তাঁর দেয়ার হাত সদা প্রসারিত। তাঁর দেয়া বড়ই অকৃপণ। তাঁর প্রাচুর্যেও কোথাও কোনো ঘাটতি নেই। তাঁর ইলম ও জ্ঞান, তাঁর কুদরত ও ক্ষমতা- সবই অসীম। ফুরিয়ে যাবার ভয় নেই কোনো কিছুতেই। এমন সর্বব্যাপী ক্ষমতার অধিকারী যিনি, তিনি কথা দিচ্ছেন- নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ কেউ কাউকে দান করলে তাকে তিনি দুটি পুরস্কার দেবেন :
এক. পরকালে তাকে ক্ষমা করবেন।
দুই. দুনিয়াতে তার প্রতি দয়া করবেন। অর্থাৎ তার সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেবেন।

কিয়ামতের ময়দানে যখন মানুষের আমলের হিসাব হবে, তখন কারও হাতেই কোনো টাকাপয়সা থাকবে না। দুনিয়ার আমলই তখন একমাত্র সম্বল। হিসাবনিকাশের পর ভালো আমল যার বেশি হবে, তার খুশির কোনো সীমা থাকবে না। সে অন্যদের ডেকে ডেকে নিজের আমলনামা দেখাবে, পড়তে দেবে। আর যার মন্দ আমলের পাল্লা ভারি হয়ে যাবে, তার অবস্থা হবে ঠিক বিপরীত। নিজের কৃতকর্মের জন্যে আফসোস করা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকবে না। দুনিয়াতে মানুষ যখন শাস্তির মুখে পড়ে, তখন টাকাপয়সা দিয়ে তা থেকে মুক্তির চেষ্টা চালায়। কিন্তু ঐ সময় তো আর টাকাপয়সা থাকবে না কারও। যদি থাকত, তবে গোনাহের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্যে সবই সে তখন দান করে দিত। এমনকি দুনিয়াভর্তি সোনারূপাও যদি তখন কারও হাতে থাকত, দোজখের আজাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যে সবই সে বিলিয়ে দিত। তবুও যদি রেহাই পাওয়া যেত! পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা সবই আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন। সূরা ইউনুসের ৫৪ নং আয়াতের অর্থ-(যারা জুলুম করেছে, তাদের প্রত্যেকের কাছেই যদি পৃথিবীর সকল সম্পদও থাকত, তবে তারা তা মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দিত। যখন তারা শাস্তি দেখবে, তখন মনে মনে আফসোস করবে। তাদের মাঝে ন্যায়ের সঙ্গেই বিচার করা হবে। তাদের কাউকেই কোনো জুলুম করা হবে না।)

লক্ষণীয় বিষয় হল, গোনাহের অভিশাপ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে পরকালে মানুষ যে সম্পদ মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চাইবে, মুক্তিপণ দিতে না পারায় এবং শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি না পাওয়ায় কেবল আফসোস করবে, দুনিয়াতে সে সম্পদ দানেই আল্লাহ তাআলা গোনাহ মাফ করে দেয়ার কথা দিচ্ছেন। বোঝা গেল, সম্পদ দিয়ে শাস্তি থেকে বাঁচা যাবে। দুনিয়াতে মানুষের শাস্তি থেকে যেমন টাকার বিনিময়ে বাঁচা যায়, তা পরকালেও সম্ভব। তবে কথা হল, পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে টাকা ব্যয় করতে হবে দুনিয়াতে। দুনিয়ার দান পরকালের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দেবে।

দানশীলতা একটি মহৎ গুণ। দানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার দেওয়া সম্পদের শুকরিয়া আদায় করা হয়, সম্পদ বৃদ্ধি পায়, গরিব ও অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শিত হয়। সমাজের নিঃস্ব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর দ্বারা মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অফুরন্ত সাওয়াব লাভ করে। যে যত বেশি দান-সদকা করে তার আমলনামা ততই সমৃদ্ধ হয়।

অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এমন লোকদের খুঁজে খুঁজে গোপনে দান করলে অবশ্যই অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে দান ও অন্যের কষ্ট লাঘব, উভয় সওয়াবই পাওয়া যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সহমর্মিতা, সহানুভ‚তি ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার এবং বেশি বেশি দান-সদকা করে প্রকৃত গরিব-অসহায়, নিঃস্ব লোকদের পাশে দাঁড়িয়ে অশেষ সওয়াব অর্জনের তাওফিক দান করুন।

লেখক : চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ,শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়