দিনাজপুর প্রতিনিধি :
দিনাজপুরে ভাল নেই উপজাতিরা। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম দিয়ে বাঁশ শিল্পের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করেও দাম পাচ্ছেন না তারা। পাইকাররা সামান্য মূল্য দিয়ে কিনে নিচ্ছে আদিবাসী তথা উপজাতিদের হাতে গড়া বাঁশের বিভিন্ন দ্রব্যাদি। কিন্তু দাম পাচ্ছে না। ফলে বাঁশশিল্পে কর্মরত উপজাতিরা অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন। বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় পুঁজি ও অর্থের অভাবে সীমাহীন অভাব অনটনের মধ্যেদিয়ে দিন কাটাচ্ছেন দিনাজপুরের বাঁশশিল্পের কারিগর উপজাতিরা।
এ পেশায় নিয়োজিত শত শত শ্রমিক অর্থ ও পুঁজির অভাবে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে করে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্ত শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। বংশগত ভাবে দীর্ঘদিন থেকে এ পেশার সাথে জড়িত। তারা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র যেমন, ডালি, মাছের খোলই, কুলা, মুরগী পালনের ঝাপা, খইচালা ঝুরি, মাছ ধরা ডেরই, বাঁশের হারিকেন, পশুর হাত থেকে গাছ রক্ষাকারী খাঁচা, হাত পাখা, বাঁশি ইত্যাদি তৈরি করে উপজেলা বিভিন্ন হাট বাজার ছাড়াও অন্যান্য উপজেলার হাট বাজারে খুচরা ও পাইকারী দরে বিক্রি করে বেশ স্বাচ্ছন্দে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। ঐ সময় একটি বাঁশের মূল্য ছিল ১৫-২০ টাকা।
দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬নং খামার ঝাড়বাড়ী ইউনিয়নের শান্তিপাড়া গ্রামের বাঁশমালি সান্দ্রিনা মুর্ম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্লাস্টিকের তৈরি জিনিস পত্রে বাজার দখল হয়ে গেছে। বর্তমানে বাঁশের তৈরী জিনিসের তেমন কদর নেই। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে আরো বলেন, বর্তমানে এই ব্যবসা করে সংসার চালানো খুবই কষ্ট কর হয়ে পড়েছে। আমি ডেলিয়া (ডালি) বানিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে কোন মতে দিনপাত করছি। শান্তিপাড়ার অন্যান্য বাঁশ শিল্পী যসেফ মুর্মু, রাফায়েল মুর্মু, স্বপ্না রানী, সমাজ মুর্মু জানান, এক সময় তারা অল্প টাকার বাঁশ ক্রয় করে সেই বাঁশ দিয়ে ঘর গোছালির বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করে সেগুলো নিজের জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলায় খুচরা ও পাইকারী দরে বিক্রি করে বেশ স্বচ্ছলতার সাথে সংসার জীবন চালাতে পারতেন। বর্তমানে একটি বাঁশ ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় ক্রয় করে সেই বাঁশ থেকে বিভিন্ন সামগ্রী বানিয়ে যে টাকা আয় হয় তাতে আমাদের শ্রমের টাকাই আসে না।
তারা আরোও বলেন, আমরা শুধু বংশ পরমপরা রক্ষায় এ পেশা ধরে রেখেছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই দারিদ্রতার কারণে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। দিনাজপুরের উপজাতিরা তাদের এই পেশাকে বাঁচাতে সরকারিভাবে অনুদান চেয়েছেন।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply