শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

দিনাজপুরে রসালো লিচু রমজানেই বেদেনার স্বাদের কাছাকাছি নেই চায়না-থ্রি

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯
  • ১১১ Time View

মোঃ নূর ইসলাম নয়ন, দিনাজপুর:

 

কারিগররা এখন ভীষণ ব্যস্ত লিচু বহনের খাঁচা তৈরীতে। প্রস্তুতি নিচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস ও ট্রাক ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বাগানের মালিকরা তাদের কাজের লোক নিয়ে ব্যস্ততায় দিন পার করছেন গাছ ও ফলের পরিচর্যায়। মধু মাসের শুরুতেই বাজারে আসবে রসে টুইটম্বুর লিচু।

রমজানে রোজাদারদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত হবে সুমিষ্টি ফল লিচু। এবার ঈদের পরও বাজারে লিচু থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। সঙ্গে তো আম থাকবেই। তবে দিনাজপুরে আমের চেয়ে লিচুর কদরই বেশী। দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। গত বছর ছিল পৌনে পাঁচ হাজার হেক্টর। এবারও লিচুর বাম্পার ফলন হবে। তবে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের মতে, এবার কম মুকুল আসায় ফলও কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় এই অঞ্চলে প্রতি বছর লিচুর আবাদ বেড়েই চলেছে। কেননা লিচুর বাগান গড়ে তুলতে পারলেই লাভ। আগাম ফল বিক্রি করেই টাকার দেখা পাওয়া যায়। বিরল উপজেলার বাগান মালিক মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, গড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকায় এক বিঘা জমি কিনে কলম চারা লাগালেই টাকার মুখ দেখতে পাওয়া যায়। এই খাতে টাকা লাগালে হারানোর কিছু থাকে না। তার মতে বড় ধরনের একটি গাছ লাগানোর ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যেই ফল দিতে শুরু করে। তবে বিক্রিযোগ্য ফল পেতে আরো দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। গাছ বড় হলেই ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়।

দুই যুগ আগেও এলাকাভিত্তিক ছিল লিচুর বাগান। দিনাজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণাংশে মাশিমপুর ও তার আশপাশের এলাকা ছিল বেদেনা লিচুর আবাদস্থল। মাটির কারণেই এই এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও বেদেনা লিচুর গাছ হলেও ফলন হতো না বলেই ধারণা ছিল। কিন্তু চাহিদা ও আগ্রহ বাড়ার সাথে বেদেনা লিছুর আবাদ বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে দিনাজপুরের দো-আশযুক্ত মাটিতে বেদেনা লিচুর ফলন হচ্ছে। পাশাপাশি বিজ্ঞানের বদৌলতে হাইব্রিড জাতের চায়না-থ্রি লিচু এখন বেদেনার জায়গা দখল করে নিয়েছে। আকারে বেদেনার চেয়ে বড় এবং রসে পরিপূর্ণ হওয়ায় কদর বেড়েছে এই লিচুর।

তবে বেদেনা লিচুর স্বাদের কাছে জায়গা নিতে পারেনি হাইব্রিড চায়না-থ্রি লিচু। মান ও দামের দিক দিয়ে এই লিচুকে ভিআইপি লিচু হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। মৌসুমে প্রতি হাজার বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু ২ থেকে ৩ হাজার টাকা হিসাবে বিক্রি হলেও সপ্তাহান্তে এই লিচু ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে থাকে।

অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় লিচুর বাজার এক থেকে দেড় মাস থাকে। বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর পাক ধরার ১৫ দিনের মাথায় গাছ থেকে পাড়তে হয়। গত দুই দশকে সদরের পাশাপাশি বিরল উপজেলা লিচুর জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। মৌসুমে এই উপজেলা থেকে শত শত ট্রাক লিচু চলে যায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বোম্বাই, মাদ্রাজি ও কাঠালিসহ হরেক জাতের লিচু। লিচুর পাশাপাশি দিনাজপুরের গোপাল ভোগ, মিশ্রি ভোগ ল্যাংড়া আমের স্বাদও অতুলনীয়। গাছে পার্শ্ববর্তী জেলার সূর্যপুরী আম।

স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা জোরেসোরেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ লিচু এবার রোজার পরে বাজারে থাকবে। ঈদ শেষে লিচু বাজারে থাকলে চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই দামও চড়া হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়