(মাফিয়াতন্ত্রে জিম্মি রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কুসুম বাগানে অনুপ্রবেশকারীরা হুতুম প্যাঁচা সেজে বসে আছে ডালে ডালে, দেশের অর্থনীতি গোল্লায় যাক, কিছু অসাধু প্রতারকরা মানুষ ঠকিয়ে কোটিপতি বনে যাচ্ছে, আসছে আইনের আওতায়, কয়েকদিন মুখোশ উন্মোচিত খবরে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও দূর্নীতি দমনে স্থায়ী সমাধান না হলে প্রকৃত দূর্নীতিগ্রস্থরা থেকে যাবে অধরা।)
শের ই গুল :
দেশের অর্থনীতি আজ মুখ থুবড়ে পড়ছে। দ্রুত গতিতে একদিকে কিছু লোক কোটিপতি বনে যাচ্ছে, অন্যদিকে একই গতিতে বিপুল লোকজন দরিদ্র হচ্ছে। মূলত: লুটপাটীয় আর্থসামাজিক ব্যবস্থার ফলশ্রুতিতে অর্থনীতিতে এসব অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে । আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি, পুঁজিবাজার, এমএলএম কোম্পানী, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পসহ কেনাকাটা খাত থেকে শতসহস্র কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেলেও, এর সাথে জড়িত রাঘব বোয়ালদের বিচার বা শাস্তি না-হওয়ার পশ্চাতে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, সেগুলো দেখার কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা যেনো বাংলাদেশে নেই ! সেই লুটপাটের সিংহভাগ টাকা কীভাবে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেসব বিষয়েও কেউ খতিয়ে দেখছে কিনা তাও জানা যাচ্ছে না।
এসব লুটপাট বন্ধ ও এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কিছুই করণীয় আছে বলেও মনে হয় না। এর অর্থ কি এই যে, এসব অপরাধকর্মের সাথে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের ক্ষমতাসীনরাও জড়িত ? তারাও কি ঘুষ বা একটা পারসেন্টেজ কমিশন খেয়ে ঐসব অপকর্মের হোতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? সতেরো কোটি মানুষের ছোট্ট একটি দেশ থেকে গুটিকতক দুর্নীতিবাজ-লুটেরা এভাবে লুটপাটের হোলিখেলায় দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে সীমাহীন সুখসাগরে জীবনযাপন করছে, অপরদিকে সাধারণ মানুষ দিনকে দিন আর্থিকভাবে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে ।
কয়েক কোটি শিক্ষিত বেকারসহ দেশের স্বাধীনতার অধিকাংশ সূর্যসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা চরম অনিশ্চয়তার আবর্তে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে । বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকারদের অবস্থান, সমাজে মানবিক মর্যাদা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়, সভ্যতা ও ভব্যতায় পচন, ভিন্নমতের প্রতি আক্রোশ, নৈতিকতার নিম্নগামিতা, শিক্ষা ব্যবস্থায় ধস, মাদক অনাচার ও অন্যান্য অসামাজিক কর্মকাণ্ডের হলাহল ইত্যাদি চরমভাবে জেঁকে বসেছে ।
দেশের এমনসব আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দেউলিয়াপনাকে পুঁজি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকারের বিপক্ষ শক্তি হিশেবে ধর্মীয় জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির চরম উত্থান ঘটেছে। গ্রামেগঞ্জে হাটেমাঠে শহরে-নগরে মাদ্রাসা-মসজিদে প্রচারমাধ্যমে ওয়াজ নসিহতের নামে চলছে অশিক্ষিত মূর্খ গোঁয়ার মোল্লাদের লাগামহীন সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ও উস্কানির বন্যা আবার এদের মধ্যেও কিছু ভাল আলেম আছে যারা আবার কোণঠাসা।
মোট কথা বাংলাদেশকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ঐ গুটিকতক দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়াদের সাথে গাটছড় বেঁধে দেশের রাজাকার মোল্লা সমাজ হেন কোনো কাজ নেই যা তারা সুচারু করে যাচ্ছে। সবকিছু পর্যালোচনা করে মনে হয় যেনো তাদের এসব অপকর্মের পশ্চাতে সরকারের মধ্যকার আরেকটি সরকারের ইন্দন কাজ করছে !
দেশের এহেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, দুর্নীতি লুটপাট ও মাফিয়াতন্ত্রসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে যে নৈতিক আদর্শিক ও দেশপ্রেমমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সরকার অগ্রসর হবে, তারও তেমন ন্যূনতম পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। সরকার যেনো যখন যেমন তখন তেমন ধরনের অবস্থার মধ্যে হাবুডুবু খেয়ে শুধু দিন পার করার নীতিতে চলছে। আদর্শ, চেতনা ও সুদূরপ্রসারী হিসেব না রেখে শুধুমাত্র ক্ষমতা ভোগ ও লুটপাটের সহযোগী বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অকারণ নীরব ভাগিদারের অপবাদ নিয়ে আর যা-ই হোক দেশের মানুষের কল্যাণ করা যায় না।
মুক্তিযুদ্ধের সাগরসম রক্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সীমাহীন শৌর্য বীর্য ত্যাগ ও বীরত্বের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কি একটি দুর্নীতিবাজ লুটেরা মাফিয়া ও প্রতারক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হতেই থাকবে ? চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি দখলবাজি চলছেই। মাফিয়াতন্ত্রের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের রাজনীতি। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাতেই ঘটে চলছে সব ধরনের অপরাধ। খুন-খারাবি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে সংঘাত-সংঘর্ষ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনৈতিক নেতারা। আধিপত্য সৃষ্টি এবং সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটাতেই একেক স্থানে একেকজন নেতা অপরাধের নেপথ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছেন।
নানা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েই জেলায় জেলায় সর্বদলীয় সন্ত্রাসী মদতদাতা নেতাদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে এলাকার সবকিছু। রাজনৈতিক দলের ত্যাগী নেতা- কর্মীরাও তাদের কাছে জিম্মি থাকছেন। অপরাধ কর্মকাণ্ডে সিদ্ধহস্ত নেতারা সর্বদলীয় সিন্ডিকেট গঠন করায় সব সরকারের আমলেই তারা থাকেন সর্বোচ্চ সুবিধায়। যে দল যখন ক্ষমতায় আসে তখন শুধু ওই দলের অপরাধী নেতাকে সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে এগিয়ে দেওয়া হয়। অপরাধজগতের চিহ্নিত গডফাদাররাই এখন স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও খবরদারিত্ব করছেন।
অপরাধী নেতাদের সিন্ডিকেট প্রভাব খাটিয়ে, চাপ সৃষ্টিসহ যোগসাজশের মাধ্যমে সব কাজ হাসিল করার মতো ক্ষমতাবান মাফিয়ায় পরিণত হয়েছেন। রাজনৈতিক নেতারা নানা অপরাধের পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সঙ্গেও সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন। দেশের অন্যান্য স্থানেও ক্ষমতাসীন দলের কোনো না কোনো নেতা মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে আছেন।
এভাবেই দেশজুড়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা- কর্মীরা নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে এবং জেলা ও থানা পর্যায়ে গড়ে তোলা আলাদা আলাদা অপরাধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে অপরাধী নেতারা রাজনৈতিক দলের নানা পদ-পদবি-নেতৃত্ব বাগিয়ে নেন। অন্যান্য দলের অপরাধীরা সরকার দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে প্রবেশ করে বড় বড় হাইব্রীড নেতা সেজে বসে আছে।
ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনটির নানা পদ- পদবি লাখ লাখ টাকা দামে কিনে নেতা বনে যাওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বেপরোয়া অপরাধ ঘটেই চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে জলে জঙ্গলে মিলছে বেওয়ারিশ লাশ! এক কোটি বিশ লাখ মানুষের শহর রাজধানী ঢাকায় দিনদুপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটছেই। কোনো ক্ষেত্রেই বিচার নেই, সান্ত্বনাও পায় না স্বজনরা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অপরাধের এক ভয়ানক তাণ্ডবলীলা দেখা গেছে বিগত বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারের আমলে।
সে সময় ভয়ানক বাংলাভাই, মুফতি হান্নানরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে পুঁজি করে দেশজুড়ে সীমাহীন অরাজকতার সৃষ্টি করে। মুফতি হান্নানের মতো অজানা অচেনা ব্যক্তিটিও রাজনৈতিক প্রভাবকে পুঁজি করে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত হত্যার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয়কে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি- টেন্ডারবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। নানা অবৈধ পথে অর্জিত অর্থের ভাগবাটোয়ারা নিয়েই বাধে সংঘাত সংঘর্ষ।
বখে যাওয়া এই রাজনীতিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশও যুক্ত আছে। প্রতিটি এলাকায় একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতা এমনভাবেই অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন যে, হাতেনাতে ছিনতাইকারী ধরা পড়লেও তাদের ছাড়ানোর জন্য থানায় গিয়ে ধরনা দেন।
পুলিশ মামলাজনিত কারণে মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড়তে অস্বীকার করলে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে থানা ঘেরাও করে নানা বিশৃঙ্খলা করার অসংখ্য নজির বিদ্যমান রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ নিজেও বলেছেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশকে হিমসিম খেতে হয়।
মাফিয়াতন্ত্রে জিম্মি রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কুসুম বাগানে অনুপ্রবেশকারীরা হুতুম প্যাঁচা সেজে বসে আছে ডালে ডালে, দেশের অর্থনীতি গোল্লায় যাক, কিছু অসাধু প্রতারকরা মানুষ ঠকিয়ে কোটিপতি বনে যাচ্ছে, আসছে আইনের আওতায়, কয়েকদিন মুখোশ উন্মোচিত খবরে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও দূর্নীতি দমনে স্থায়ী সমাধান না হলে প্রকৃত দূর্নীতিগ্রস্থরা থেকে যাবে অধরা।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply