বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন

দেশের প্রথম নারী কাজী হতে চেয়েছিলেন আয়শা সিদ্দিকা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১
  • ২১ Time View

 

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

হোমিও চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা সেবায় রয়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের পশ্চিম কাঁটাবাড়ী (কালীবাড়ী বাজার এলাকা) গ্রামের আয়েশা সিদ্দিকা(৩৯)। সংসার জীবনে এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে তার।

আয়শার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে তার নিজ বাড়ী কাটাবাড়ী গ্রামে। তিন বোন এক ভাইয়ের পরিবারে দ্বিতীয় সন্তান তিনি। বাবাও ছিলেন হোমিও চিকিৎসক। বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় মাদ্রাসায় পড়তে পড়তেই বিয়ে দেয়া হয় তাকে। বিয়ের পরেও পড়াশুনা চালিয়েযান আয়শা। একই সঙ্গে ফুলবাড়ী দারুসুন্নাহ সিনিয়র সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেছেন, এবং হোমিও কলেজ থেকেও ডিগ্রী নিয়েছেন তিনি।

বাবা সাবেক হোমিও চিকিৎসক মরহুম আবুল কালাম আজাদ ও স্বামী হোমিও চিকিৎসক মো. সোলাইমানের হাত ধরেই এ পেশায় আসেন তিনি। প্রায় ১৯ বছর ধরে হোমিও চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন আয়শা সিদ্দিকা (৩৯)। তবে তিনি হতে চেয়েছিলেন দেশের প্রথম নারী কাজী বা নিকাহ্ রেজিস্টার।

শুধু হোমিও চিকিৎসক হিসেবেই নয়,নিজেকে সমাজে নিজের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার স্বপ্ন তার ছোটবেলা থেকেই। এ কারণে বিভিন্ন সামাজিক কাজেও নিজেকে জড়িয়ে রাখেন সময় পেলেই।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের পয়লা এপ্রিল দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি দেখে সাধ জাগে তিনিও হবেন কাজী (নিকাহ্ রেজিষ্টার)। কিন্তু প্রকাশিত ও প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ ছিল না যে, শুধুমাত্র পুরুষরাই আবেদন করবেন কিংবা নারীরা আবেদন করতে পারবেন না।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী একই সালের ১১ এপ্রিল আয়েশা সিদ্দিকা ফুলবাড়ী পৌর সভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কাজী বা নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার পদের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে ২০১৪ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ফলে স্থানীয়ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির সভাপতি হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। সদস্য হিসেবে ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার মেয়র এবং কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার।

কমিটি নির্বাচিত প্রার্থীদের তিন সদস্যের একটি প্যানেল প্রস্তুত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে কমিটির কাছে জানতে চাওয়া হয় কমিটি কাকে নিয়োগ দিতে চায়। সেই সময় কমিটি আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগের সুপারিশ করে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ্ রেজিষ্টারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়, এমন মত দিয়ে নিয়োগ কমিটির প্রস্তাবিত প্যানেল বাতিল করেন।

এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্টে রিট করেন আয়শা সিদ্দিকা। ছয় বছর পর ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রয়ারী আদালত মন্ত্রণালয়ের মতামতকে বহাল রেখে রায় প্রদান করেন। এরপর সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে বিষয়টি সকলের নজরে আসে।

বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন চলছে। এর পরও থেমে থাকেননি আয়েশা সিদ্দিকা। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের গত ৯ মার্চ সুপ্রিল কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে একটি আপিল দায়ের করেছেন।

আয়েশা বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমি আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। নারীর অধিকার আদায়ের চেষ্টা করব। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জরি করা বিধিমালায় কোথাও বলা হয়নি যে কেবল পুরুষই নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবে। সেখানে যেসব যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে, তার সবগুলোই তার রয়েচে। তাছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানেই নারী ও পুরুষ সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে প্রধান মন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজনীতি, বিচারাঙ্গণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মত কাজেও যেখানে মেয়েরা সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বিয়ে নিবন্ধনের কাজটিতে কেন তাদের ‘অযোগ্য’ করে রাখা হবে, সেই প্রশ্ন তার। আয়েশা বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমি মনে করি, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে একজন নারীকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

সে কারনে তিনি প্রধান মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি আরও জানান,তার স্বামী মো. সোলাইমান তাকে সহযোগিতা ও উৎসাহ না দিলে তিনি কিছুই করতে পারতেন না। এ কারণে তিনি তার স্বামীসহ পরিবারের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়