শের ই গুল:
আপন মানুষ হারানোর কষ্ট, যার আপন মানুষ যায় শুধু সেই বুঝে কষ্টটা কত তীব্র।
আগুন আগুন আর আগুন সবত্রই জ¦লছে আগুন, এ যেন আগুনের গজব। পুরান ঢাকার চুরিহাট্টার ভয়াবহ আগুনে পোড়া মানুষের কান্নার মাতম না থামতেই রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে দেখতে হলো ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। দেশে প্রতি দিন প্রায় ৫০০ মানুষ আগুনে পুড়ছে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হচ্ছে। গুরুতর দগ্ধ লোকজনের একটি অংশ মারা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া আগুনের দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। সরকার, গণমাধ্যম, চিকিৎসক সমাজ, বে সরকারী প্রতিষ্ঠান সহ সবাইকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। আগুনের লেলিহান শিখা একরাতে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় কত জনের সাজানো সংসার। দীর্ঘ দিনের শ্রমে-ঘামে গড়ে তোলা জীবিকার প্রতিষ্ঠান। এতই আকস্মিক আর এমন ভয়াবহ সেই ঘটনা যে, যারা এর প্রত্যক্ষদর্শী তারাও কথা বলার ভাষা খুজে পায় না। দেশ স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড পাড় করছে। শুধু পোড়া লাশ আর লাশ যেন লাশের স্তুপ, পুড়ে কালো কয়লার রূপ নেওয়া ভবন। হাসপাতাল, মর্গ সব জায়গায় স্বজনের খোজে মরিয়া হয়ে উঠে স্বজনরা। কাগজ, কাপড়, প্যাকিং, আসবাপত্র, আলিশান ডেকারেশন, বাক্সের টুকরো, প্রসাদনী সামগ্রী নিত্য প্রয়োজনীয় সব আরো কত কি পুড়ে কয়লা হয়ে পড়ে থাকে। সঙ্গে মিশে থাকে মানুষের মাংস-মজ্জা-রক্ত। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারী ইউনিটের চিকিৎসকেরা পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। এই ইউনিটে শয্যা আছে ৩৩০টি।
প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে পাচ শতাধিক, প্রতিদিন এত মানুষ পুড়ছে কিন্তু প্রতিরোধের কোন জনসচেতনতা মূলক কর্মকান্ড নেই। চিকিৎসকেরা বলছেন আগুনের ঝুকির বিষয়ে সচেতন করতে সরকারের গণমাধ্যমে প্রচার জোরদার করতে হবে। অনেকে সরকারকে দোষ দিচ্ছেন, অনেকে ভবন মালিকদের কিংবা ভবন অনুমোদন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের দোষ দিচ্ছেন। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন জলাশয়গুলো ভরাট হলো কেন? অনেকে আবার প্রয়োজন ও যুগের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে কেন উন্নত ও আধুনীক যন্ত্রপাতির পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে না, দমকল বাহিনীকে আরোও আধুনিক চৌকষ করা হচ্ছে না সেই অভিযোগও তুলেছে। অনেকে আবার সরকারের উন্নয়ন সংক্রান্ত ¯েøাগানকে ব্যঙ্গ-বিদ্রপ করছেন। উন্নয়নের সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠে যদি নামার ব্যবস্থাই না থাকে সে কিসের উন্নয়ন! এসব ক্ষোভ, সমালোচনা ইত্যাদি সবকিছুর পিছনেই হয়তো যুক্তি আছে।
এছাড়া গত কয়েক দশক ধরেই দেখছি শাসকদের সীমাহীন উদাসীনতা, এডহক ভিত্তিতে সমস্যার সমাধানে মানুষীকতা, কিছু মানুষের লোভ আর নাগরীকদের বিরাট একটা অংশের দায়িত্বহীন আচরন এই শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলেছে। আমরা দেখছি মানুষ বাড়ছে, নগর বাড়ছে, বাড়ছে পাপ আর অপরাধের প্রতিযোগিতার পাল্লা। একের পর এক বিপর্যয়, মানুষ মরছে, আমরা কয়েক দিনের জন্য সতর্ক হচ্ছি, তার পরই ফিরে যাচ্ছি পুরুনো সিস্টেমে। আমাদের দেশে বছরে গড়ে সতের থেকে আঠার হাজার অগ্নি কান্ড ঘটে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি, অতচ দূর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নেই বললেই চলে।
এমনিতেই দেশে অগ্নি কান্ডের ঘটনা বাড়ছে। এই দূর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই অধিকতর সতর্ক হতে হবে। তা না হলে হাতির ঝিল, মেট্টোরেল, গগণচুম্বি সব অট্টালিকা দিয়ে উন্নয়নের সৌধ ঠিকই গড়া হবে, কিন্তু সেই সৌধ মুহুর্তেই আগুনে পুড়ে ছাই হবে। কাজেই আগে আগুন থেকে রেহাই পাবার ও সতর্ক হবার উপায় জানতে হবে। সরকারকে নিতে হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply