(নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার কোন ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর সেই আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে বেড়েছে ব্যয় কিন্তু বাড়েনি আয়, অন্যদিকে পকেট উজাড়, ক্রেতা পড়েছেন মহাসংকটে।)
বেলায়েত হোসেন :
দ্রব্যমূল্যের উদ্যগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। এর পরেও প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লাগামহীন দাম বেড়ে যাওয়া। সাধারণ মানুষের খেয়ে বেচে থাকার উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। যেমন চাল, ডাল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
বিশেষ করে যেসব খাবারে পুষ্টিগুণ একটু বেশি যেমন দুধ, ডিম, মাংস, ডাল, চিনি প্রত্যেকটি জিনিসেরই দাম আকাশ ছোঁয়া। সব মিলিয়ে কাঁচাবাজারের লাগামহীন মূল্যে নিম্ন আর মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন এখন বির্পযস্ত। সবজি কেনাই এখন দুরূহ ব্যাপার, মাছ মাংসের দিকে নাইবা গেলাম। তাই ডাল আর ডিমের ওপরই ভরসা খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর। সে ডিমের দামও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
২০২৩ সালে সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষ এবং অর্থনৈতিক মন্দা আরও ব্যাপকভাবে দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কার কথা কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় আনার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু ইদানিং মাছ-মাংস-ডিম-শাকসবজির দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে প্রতিটি সবজি কেজি প্রতি দুই থেকে চার গুণ দামে কিনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার কোন ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর সেই আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে বেড়েছে ব্যয় কিন্তু বাড়েনি আয়, অন্যদিকে পকেট উজাড়, ক্রেতা পড়েছেন মহাসংকটে। বাড়তি দামের ফলে জনজীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠা ক্রেতা বাধ্য হয়ে বাজার সেরে ফিরছেন ঘরে। কোনোরকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বিক্রেতাদের গলায় নানান অজুহাত। হঠাৎ করেই নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
এসব নিত্যপণ্যের দাম কেন ঊর্ধ্বমুখী এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে তাই বিক্রিও হচ্ছে বেশি দামে। খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারদের কাছে মজুত থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাচ্ছেন না তাঁরা। এ ছাড়া পাইকারি পর্যায়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সব মিলিয়ে বাজারে পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ কারণেই দাম বাড়ছে। দামের এই লাগাম টানতে হলে উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে তদারকিও।
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্যের মজুত রয়েছে। কিন্তু বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের তেমন কোনো তৎপরতাও নেই। সরকারের প্রচার-প্রচারণা যেমন ক্রেতাদেরও মজুত করা থেকে থামাতে পারছে না, তেমনি মূল্য বৃদ্ধিও ঠেকাতে পারছে না।
এ ব্যাপারে বাজার করতে আসা একজন ক্রেতা অভিযোগ করেন, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে নজর কম, তাই ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। সরকারকে কঠোর হাতে অতিলোভী অসাধু এসব ব্যবসায়ীকে দমন করতে হবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যতালিকা টাঙানো এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে দেশের সাধারণ মানুষের আরও একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply