(ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদ বলেছেন- সরকারের দুঃশাসন, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না, ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম অস্থিরতা ও হতাশা বিরাজ করছে। জনজীবনে চলছে মারাত্মক সংকট। উন্নয়নের নামে দেশে চলছে সীমাহীন লুটপাট।)
শের ই গুল :
দেশের সর্বত্র নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে আমজনতার নাভিশ্বাস ক্রমাগত বাড়ছেই। ভোগ্য পণ্যের মধ্যে চাল তেলসহ অতি আবশ্যকীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ও হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। মূল্য বৃদ্ধির কারসাজি প্রতিবছর হলেও সরকার ও ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রকেরা প্রতিবার বলে আসছে রমজানে মূল্যবৃদ্ধি হবে না কিন্তু রমজান আসার অনেক আগেই ব্যবসায়ীরা মূল্য বৃদ্ধি করার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠে।
এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বারোশো টাকার জায়গায় প্রায় দুই হাজার টাকা ছুই ছুই হয়ে গেছে। বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। মাস দুয়েক ধরেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দ্রব্যমূল্যের দাম, এখন আর কত বাড়বে। গত কয়েক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে শেষতক শোষিতের পক্ষে শ্রম নিয়োজিত কতিপয় বাম ঘরানার সংগঠন সরকারের বিরুদ্ধে মওকা পেয়ে সরব হয়ে হরতাল আহ্বান করেছে।
সরকারও কানে ঝাড়া দিয়ে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কর্মকর্তাদের তদারকিতে নামিয়েছেন। নামালে কি হবে এ দেশতো মুক্তবাজার অর্থনীতির গণতান্ত্রিক দেশ। নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার দেখাতে গেলেই বাঁধা আসবে গণতন্ত্রের, স্বাধীনতার; মানবাধিকারে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ হবে হৈ হৈ করে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, বৈষম্য কারো নজর পায় না, দেশজুড়ে শুধুই উন্নয়ন বাদ্য। বর্তমানে এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না, যার দাম বৃদ্ধি পায়নি। সাধারণের ব্যবহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বলাবাহুল্য, এখন বেশির ভাগ দ্রব্যের মূল্য ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। নিম্ন আয়ের মানুষ যা উপার্জন করছে তার পুরোটাই জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির জন্য ব্যয় করার মতো অর্থ তাদের হাতে অবশিষ্ট থাকছে না। সুতরাং বলা যেতেই পারে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষকে মারার আরেক নাম দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।
অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। বাজারে চালের দাম বেড়েছে। বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য। লাগাম ছাড়া দামে শহুরে দারিদ্র্য মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। গরিব মানুষের সস্তায় ক্রয়ের শেষ পণ্য মোটা চালের কেজি পৌঁছেছে ৫০ টাকায়। চালের দামের ওপর নির্ভর করছে অন্যান্য জিনিসপত্রের দামের সমীকরণ। পরিণামে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কৃষক, শ্রমিক এবং পেশাজীবীসহ সীমিত আয়ের মানুষ।
অথচ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। চোখে পড়ছে না সারাদেশে কালোবাজারি ঠেকানোর কার্যক্রম। অধিকন্তু বছরের এই সময়ে বাংলাদেশে চালের দাম বৃদ্ধি নজিরবিহীন এবং উৎকণ্ঠার। রাজধানী উত্তরার বাজার ঘুরে দেখাগেছে চালের দাম মান অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। যেমন (কেজি দর) বালাম ৬৫, মিনিকেট ৭৫, আটাশ ৬৮, বাশমতি ২৬০, নাজির শাইল ৭৫ , উনত্রিশ ৬৫, কাজলতা ৭০ এবং পারিজা ৬৫ টাকা করে। সয়াবিন তেল বোতল জাত বর্তমান বাজার মূল্য লিটার প্রতি রুপচাঁদা, ফ্রেশ, তীর ২১০ টাকা, বসুন্ধরা ২০০ টাকা, খোলা তেল লিটার প্রতি ১৯৫, সরিসার তেল লিটার প্রতি ২৫০ টাকা, আটা ৭০ টাকা, ময়দা ১০০ টাকা, চিনি ১১০-১২০টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, মুশুর ডাল ১২০থেকে ১৫০ টাকা, খেসারী কেজি প্রতি ১২০ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলার ডাল ১২০ টাকা, জিরা কেজি প্রতি ৪০০-৫০০টাকা। কাঁচাবাজারে আলু ৩০ টাকা, আদা ১৬০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা, পিয়াজ ৬০ টাকা, হলুদ ২২০ টাকা, ড্যাড়শ ৮০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, করোলা ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, শশা ১০০ টাকা, ফুল কপি ৬০ টাকা, মিষ্টি আলু ৪০-৫০ টাকা, বাধা কপি ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া-ফালি ৪০ টাকা, সিম ৮০ টাকা, গাজর ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০-২০০০ টাকা, শুকনা মরিচ ২৮০-৩০০ টাকা, মুরগীর ডিম ফার্ম ডজন ১৫০ টাকা, পোল্ট্রি মুরগি কেজি ২১০ টাকা, কক মুরগি ৩৫০ টাকা, সোনালী ৪৬০টাকা, দেশী মুরগি ৭০০ টাকা, গরু ৭০০,খাশি হাজার টাকা। ফলের বাজারও চড়া। আপেল ২৫০-৩৮০ টাকা, কমলা ৩২০-৪৫০ টাকা, আঙ্গুর সাদা ৩৮০-৬০০ টাকা, আঙ্গুর কালো ২৫০-৩০০ টাকা, মাল্টা ১৫০-১৬০ টাকা, নাশপাতি ২০০-৩২০টাকা, আনার ৩৮০-৫০০ টাকা, খেজুর ১২০-১৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদ বলেছেন সরকারের দুঃশাসন, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না, ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম অস্থিরতা ও হতাশা বিরাজ করছে। জনজীবনে চলছে মারাত্মক সংকট। উন্নয়নের নামে দেশে চলছে সীমাহীন লুটপাট। দেশে বাকস্বাধীনতা নেই, বিচার বিভাগে স্বাধীনতা নেই, নেই রাজনৈতিক অধিকার। প্রতিবাদ করলেই নামে নির্যাতনের খড়গ। চাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব জিনিসের দাম এখন আকাশচুম্বী। সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দলীয় লোকদের সিন্ডিকেটের কারণে বিগত ১৪ বছর ধরেই সব জিনিসের দাম বেড়েছে কয়েক গুণের বেশি।
বর্তমানে সাধারণ মানুষের ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা, মানুষের বেঁচে থাকাই এখন দায়। এ অবস্থায় আবারও বিদ্যুতের পর গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি জনদুর্ভোগ আরও বাড়াবে, যা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। অবিলম্বে সরকারকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিষয়টিকে ইস্যুকরে বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply