উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং গত ৫ দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার মানুষ এখন বন্যাকবলিত। রানীনগর, মান্দা ও আত্রাই উপজেলার ১৫টি স্থানে আত্রাই ও ছোট যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলা সদরের সাথে আত্রাই উপজেলার ও নাটোর জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে নওগাঁর ৯টি উপজেলার ২৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং কয়েক হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ২ লক্ষাধিক লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, জেলার আত্রাই, ছোট যমুনা, ও পূর্নভবা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আত্রাই নদীর বিপদসীমার ২১৮ সেন্টিমিটার ও ছোট যমুনার শহরের লিটন ব্রীজ পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মান্দা, আত্রাই ও নওগাঁ সদর নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৪০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধ যাতে ভেঙ্গে না যায়, সেজন্য মানুষরা দিন-রাত পাহারা দিচ্ছে। আতঙ্কে রয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার লাখ লাখ মানুষ। বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে ঘরবাড়ি ও ফসল ডুবে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহেলাকেই দায়ি করছেন স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা।
এদিকে ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শহরের প্রধান সড়ক এক ফুট পানির নীচ দিয়ে যানবাহন চলছে। এ ছাড়াও পুরাতন কালেকটরেট ভবন চত্বর, জেলা প্রশাসকের বাসভাবন, পুলিশ সুপারের বাসভবন, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, বিহারী কলোনী, নাপিতপাড়া, উকিলপাড়া, কালীতলা, পার-নওগাঁসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ২ থেকে ৩ ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। পানি এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় চিকিৎসার জন্য একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য জরুরি ভাবে ১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। বর্তমানে অসহায় পরিবারগুলো বিশ্ব বাঁধে, স্কুলে ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোন সরকারী সাহায্য বা ত্রাণ তাদের কাছে না পৌঁছায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে পানি ধেয়ে এসেছে। এতে করে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে ২১৮ সেন্টিমিটার ও ছোট যমুনা নদীর পানি ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. মো. আমিনুর রহমান জানিয়েছেন, জেলায় খাদ্য মজুদ আছে সাড়ে ৭৪ মেট্রিক টন এবং নগদ টাকা মজুদ আছে ৫ লাখ টাকা। প্রয়োজনীয় চাহিদা সরকারের নিকট দাখিল করা হয়েছে। তাৎক্ষনিক ভাবে ৩৩ মেট্রিক টন চাল এবং ৫২ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply