বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
টঙ্গীতে জমি আত্মসাৎ এর জন্য নিজের মাথায় আঘাত করে মিথ্যা মামলা সাজালেন ছোট ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুরকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষনা করার লক্ষে ইউএনও এর প্রেস ব্রিফিং মিরপুরে ছিনতাইকারী চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার : দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা: খাদ্যমন্ত্রী চেম্বার আদালতেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজ ইলিয়াস-বাবুলের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের নতুন দিন ধার্য টাঙ্গাইল-৩ আসন আওয়ামীলীগের গৃহবিবাদের সুযোগ নিতে চায় বিএনপি হজ পালনে থাকছে না বয়সসীমা, শর্ত তুলে নিলো সৌদি আরব কুষ্টিয়ায় পরিবারের সবাইকে রুমে আটকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন কর্তৃক শরণখোলায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

নিখোঁজ স্কুল ছাত্রকে খুঁজতে গিয়ে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৮
  • ৬২ Time View

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
প্রায় তিন মাসে আগে নগরীর চকবাজার এলাকা থেকে নাফিস উল ইসলাম (১৪) নামে এক স্কুল ছাত্র নিখোঁজ হয়। সে নগরীর কাজেম আলী স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। এই ঘটনায় চকবাজার থানায় নাফিসের বাবা নজরুল ইসলাম একটি সাধারণ ডায়রিও করেন। গত এক মাস ধরে তাকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ তদন্ত করে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে নিখোঁজ নাফিস উল ইসলাম সদরঘাট থানা এলাকায় রয়েছে। তাকে খুঁজতে গিয়ে নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায় নব্য জেএমবির আস্তানাটির সন্ধান পায় । সোমবার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ সদরঘাট থানা পুলিশ অভিযান করলে সেখান থেকে থেকে দুই আত্মঘাতী জঙ্গি ধরা পড়ে। আটককৃত দুই জঙ্গির নাম আশফাকুর রহমান (২১) ও রাকিবুল হাসান (২০)। এর মধ্যে আশফাক ময়মংসিহ জেলার গপরগাঁও থানার শিলাশী গ্রামের নাসিরাবাদ দাখিল মাদ্রাসারা ১০ম শ্রেণি ও রাকিবুল কুমিল্লা জেলার কোম্পানিগঞ্জ বদি আলম ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে অধ্যায়নরত ছিল। আটককৃত দুই জঙ্গি জানিয়েছে, তাদের সদরঘাট থানায় হামলার পরিকল্পনা ছিল। ওই থানার ওসি একজন নারী হওয়ায় তারা সেখানে হামলার পরিকল্পনা নেয়। আটকৃত দুই জঙ্গি নাফিস সম্পর্কে বলে, নাফিসও নব্য জিএমবির সদস্য। অভিযান চালানোর আগেই নাফিস নেত্রোকোনায় চলে গেছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দ্ইু জঙ্গি জানায়, আশফাকুর রহমান ও রাকিবুল হানান নিজস্ব নাম হলেও তাদের সাংগঠনিক নাম আছে। আশফাকুরের সাংগঠনিক নাম আবু মাহির আল বাঙালী ওরফে রাসেল ওরফে সেলেবি তিতুশ ও রাকিবুলের সাংগঠনিক নাম সালাউদ্দিন আয়ুবী ওরফে আবু তাইছির আল বাঙালী ওরফে হাসান। জিজ্ঞাসাবাদে তারা এটাও বলে, নাফিসের সাংগঠনিক নাম আব্দুল্লাহ।
দুই জঙ্গি আশফাক ও রাকিবুল ধরা পড়লেও ছদ্ধবেশে যে ভাসাটি ভাড়া করেছিল সে ধরা পড়েনি। তার নাম মেজবাহ। ধারণা করা হচ্ছে পালিয়ে যাওয়া নাফিস ওরফে আব্দুল্লাহ জঙ্গিগোষ্ঠীর আত্মঘাতী দলে যোগ দিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে দুই জঙ্গি আরো জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তারা তিন জন চট্টগ্রামে আসে (ছদ্ধবেশে যে ভাসা ভাড়া করা মেজবাহ)। কিন্তু মেজবাহ দুই দিন পর চলে যায়। মুলত তারা, তাদের নেতা ডনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে বড় ধরনের হামলা করার উদ্দেশ্যে আসে। আর প্রথমে তারা গ্রেনেড বিস্ফোরক মজুদ করার পাশাপাশি নিজেরা চট্টগ্রামে সংগঠিত হচ্ছিল। সংগঠনের নির্দেশে সদরঘাট থানায় হামলা করার উদ্দেশ্যে প্রথমে তারা একটি স্কেপম্যাপও আঁকে। ম্যাপ আঁকার পর সেটি ডনের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে আত্মঘাতী হামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তার আগেই ধরা পড়ে।
এই বিষয়ে সিটিটিসি’র কর্মকর্তারা মনে করছেন, নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে হামলার পরিকল্পনা ভন্ডুলের পাশাপাশি বড় ধরনের নাশকতা থেকে চট্টগ্রামকে বাঁচানো গেছে।
অভিযানে নেতৃত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোর নাফিস নিখোঁজের ঘটনায় নগরীর চকবাজার থানায় একটি জিডি হয়। সেই জিডির তদন্ত করতে গিয়ে দেখি নাফিসের অবস্থান নগরীর সদরঘাট থানা এলাকায়। আমরা অবস্থান পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার আগেই দেখি আব্দুল্লাহ নেত্রকোনার কলমাকান্দায় চলে গেছে। সদরঘাটে অবস্থানের বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জঙ্গি আস্তানাটির সন্ধান মেলে। নাফিসও বর্তমানে নব্য জেএমবির সঙ্গেই আছে। তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। প্রায় এক মাস ধরে রেকি করার পর সোমবার রাতে পূর্ব মাদারবাড়ির বালুর মাঠ সংলগ্ন পোর্ট সিটি হাউজিং সোসাইটির মিনু ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযান চালানো হয়। এসময় সেখান থেকে দুজনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি সদরঘাট থানায় হামলার পরিকল্পনা-সংবলিত টার্গেট ওয়ান লেখা একটি মানচিত্র পাওয়া গেছে। হামলার জন্য মজুদ করা ১০টি গ্রেনেড ও একটি সুসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
নাফিস উল ইসলাম ওরফে আব্দুল্লার বাবা নজরুই ইসলামের দায়ের করা সাধারণ ডায়রিতে উল্লেখ আছে, নাফিসের নিজ বাড়ি চন্দনাইশের পাঠানদন্ডীর পশ্চিম কানাইমাদারি গ্রামে। নগরীর চকবাজার থানার সিরাজদৌলা রোডের একটি বাসায় থাকে। তবে বাবা নজরুলের একটি দোকান আছে। নাফিস কাজেম আলি স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। গত ৬ অক্টোবর দুপুরে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি।
নাফিসের বাবা নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলতে তিনি বলেন, ‘নাফিস পড়ালেখায় তেমন মনোযোগি ছিল না। অষ্টম শ্রেণিতে পড়লেও মাঝেমাঝে সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরতো। আর সব সময় চুপচাপ থাকতো। কারও সাথে তেমন কথাও বলতো না। মাঝে মাঝে বোকাঝোকাও দিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ একদিন দুপুরে দোকান থেকে ৬০ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। আর সেই দিন থেকে নাফিস কে পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর আমি চকবাজার থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়রি করি।’
এদিকে আটকৃত দুই জঙ্গিকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু ছালেম মোহাম্মদ নোমান রিমান্ডে নেওয়ার এই নির্দেশ দেন। সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এ এ এম হুমায়ুন কবির জানান, সিটিটিসি’র পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়ার দায়ের করা মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসেকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসি’র পরিদর্শক আফতাব আহমেদ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিলেন। শুনানি শেষে আদালত সাতদিন মঞ্জুর করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়