শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
শেরপুরে জনসচেতনামূলক বিট পুলিশিং সমাবেশ অনুষ্ঠিত পুতিনকে গ্রেপ্তার প্রচেষ্টার অর্থ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ব্রয়লার মুরগি: খামার পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা নির্ধারণ, খুচরায়ও কমবে কল্যাণ ও সৌভাগ্যের বার্তা মাহে রমজান নীলফামারীতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে টি-টুয়েন্টি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ভুয়া প্রজ্ঞাপনে সালনা নাসির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজে  অবৈধভাবে নিয়োগ শিক্ষক ইফতেখারকে   উত্তরখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর আইকন বনানীতে প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় ফুটপাত দখল শেষ, রাস্তা দখলে মরিয়া রমজান মাস উপলক্ষে কালিয়াকৈরে ইফতার সামগ্রী বিতরণ  অফিস সহায়কের প্রতি অমানবিক আচরণে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্নীতিতে উদ্বেগজনক মাত্রায় পরিবেশ দূষণ গাজীপুরে

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩
  • ৩৪ Time View

 

 

 

সামছুদ্দিন জুয়েল :

 

দেশে পরিবেশ দূষণ উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়েছে। বিশেষ করে গাজীপুর সহ অন্যান্য বাণিজ্যিক এলাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। শিল্প-কারখানা সৃষ্ট দূষণে এরই মধ্যে এখানকার বায়ু, পানি, সাধারণ মানুষের বাড়িঘর গাছগাছালি নদ-নদী জর্জরিত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পূবাইলসহ গাজীপুরের ঘনবসতি পূর্ণ কয়েকটি এলাকায় কালি তৈরির কারখানা চকপাউডার সাদা মাটি সিরামিকপণ্যের ওয়েস্টেজ মেশিনে ভাঙ্গানোর ফ্যাক্টরী বা গোডাউন আছে। স্থানীয় জনসাধারণের দাবি বাসাবাড়িতে আসবাবপত্র খাবার পাত্র থালাবাটি বিছানার উপরে পরে ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে যায় বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও মালিকদের জানালে সদোত্তরে বলেন আমরা পরিবেশ ও প্রশাসক ম্যানেজ করে চলি আমাদের কারখানা বা গোডাউন ফাঁকা জায়গায় নেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা আপনারা যা পারেন করেন।

অনুসন্ধানে গাজীপুরের পূবাইল করম তলা হসপিটালে ঢুকতেই চুনা ও মাটি ভাঙ্গানো রশিদ ও রাজ্জাক মোল্লার কারখানা পরিচালনায় রুবেল জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর এর সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে আমরা পরিবেশ ও পূবাইল থানা ম্যানেজ করে ব্যাবসা পরিচালনা করি, এলাকাবাসীর দাবি বাসাবাড়ি সহ হসপিটালের রোগী সবাই অতিষ্ঠ ফ্যাক্টরীর ধুলোবালিতে।

আরো অনুসন্ধানে জানা যায়, পূবাইল কলেজ গেট বাধুন রোডে (অটো গ্রিল কর্পোরেশন) নামে গাড়ির টায়ার পুরানো বা গালাইয়া তৈল জাতীয় উপাদান তৈরী করে একটি প্রতিষ্ঠান, ২০১৭ সালে কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে পথচারী সহ ৫ জন মৃত্যু সনাক্ত করে তাদের মধ্যে একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা ছিল আহত অর্ধ শতাধিক। কয়েক বছর বন্ধ থাকার পরে ক্ষমতার দাপটে মালিক ইমান উদ্দিন কারখানাটি পুনরায় চালাচ্ছেন। কারখানায় কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।

ম্যানেজারকে পাওয়া গেলে মুঠোফোনে কথা হলে প্রাণের বাংলাদেশকে জানান, আমরা পরিবেশ ও পূবাইল থানা ম্যানেজ করে কারখানা চালাচ্ছি। সাধারণ মানুষ ও পাশে আরএফএল গ্রুপ এর বহুতল ভবনের কর্মকর্তাগন জানান, এই ফ্যাক্টরীর মেশিন যখন চলে তখন কারখানার ধুয়া বা দুর্গন্ধে অস্থির হয়ে পড়ি, চোখ দিয়ে পানি বের হয়, মাথা ঘুরায়, বিছানা সহ আসবাব পত্র নষ্ট হয় এদের পরিবেশ ও প্রশাসনিক হাত অনেক বড়ো কারখানা মালিক এর দাবি। মেগডুবী কলের বাজার এলাকায় ফরহাদ, ফারুক, টুটুল, সহ খোলা স্থানে অনেক কারখানা ও গোডাউন আছে স্হানীয় কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিশ জানান, অনেকেই এদের ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গাজীপুরে বিভিন্ন এলাকায় জুট গোডাউন ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে যা প্রসেসিং এর ডাস্ট পরিবেশ দূষণ করছে। আরো জানা যায়, পরিবেশ ক্ষতিকারক পলিথিন গাজীপুরা সাতাইশ চৌরাস্তার ব্যবসায়ী জামাল মিয়া জানান চাক পাউডার এর ডাস আর পলিথিন তৈরি ও পুরাতন পলিথিন দিয়ে দানা তৈরি করে যার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ আমরা প্রশাসন নিরব। ডাইনিং কারখানা সহ একাধিক ফ্যাক্টরীর ময়লা পানি আকাশ বাতাস দুষিত ঘরের টিন গাছপালা ফসল নষ্ট মাছ মরে যওয়া পশু পাখি মানুষের রোগব্যাধি আক্রান্ত।

এ বিষয়ে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব মোহাম্মদ নয়ন সাহেব এর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জানান, আমি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করিতেছি কারও অভিযোগ থাকলে সুস্পষ্ট ভাবে জানালে আমি ব্যবস্থা নিব। কর্মকর্তাদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। যাচাই-বাছাই করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দেয়া এবং দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের অন্যতম কাজ। একইভাবে দূষণের সঙ্গে কারা জড়িত এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার তথ্য বিস্তারিতভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করাও সংস্থাটির দায়িত্ব। আগে নিয়মিত করলেও সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর দূষণকারী বড় প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করছে না। বড় শিল্প মালিকদের মান বাঁচাতেই নাকি এ পদক্ষেপ।

দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত দূষণকারীর নাম প্রকাশের বিষয়টি এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। হঠাৎ করে এটা বন্ধ করা দুর্ভাগ্যজনক। একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তরের এ প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের ব্যত্যয় কাম্য নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ সুরক্ষা ও দূষণ রোধে কাজ করছে। কিন্তু সময়ান্তরে প্রতিষ্ঠানটিতে সুশাসন সংকট তীব্রতর হয়েছে। টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, আমলানির্ভরতা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও নিরীক্ষায় ঘাটতি, পেশাগত দক্ষতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে অনেকটা অকেজো হয়ে পড়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

কর্মীদের একাংশের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অংকের নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ঘাটতির ফলে সংস্থাটিতে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। অধিদপ্তরের কর্মীদের একাংশের সঙ্গে পরিবেশ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের একাংশের যোগসাজশ এবং তাদের প্রভাবের কাছে আত্মসমর্পণ করার কারণে প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি এক ধরনের বিপরীতমুখী ভূমিকা পালন করছে।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সার্বিকভাবে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে দেশে অন্তত দুই যুগ আগে প্রণয়ন করা হয়েছে আইন। ১৯৯৫ সালে গৃহীত সেই ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন’ যথেষ্ট ভালো একটি আইন। পরিবেশ দূষণসংক্রান্ত অপরাধের বিচার করার জন্য দেশে তিনটি পৃথক আদালতও রয়েছে। কিন্তু এ আইনের পর্যাপ্ত প্রয়োগ হচ্ছে না বলে পরিবেশ দূষণসংক্রান্ত অপরাধগুলো যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না। যাদের কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশের দূষণ ঘটছে, তাদের মধ্যে এটা অনুধাবনে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে যে তাদের ওইসব কর্মকাণ্ড পরিবেশ সুরক্ষা আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ কিংবা তারা সেগুলোকে অপরাধ বলে গণ্য করলেও এ রকম ভেবে নিশ্চিন্ত থাকেন যে কিছু জরিমানা পরিশোধের মাধ্যমেই ওইসব অপরাধের শাস্তি এড়ানো সম্ভব। রুটিন কাজ হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন কারখানা বা স্পট পরিদর্শন করে আসছে। দূষণের কারণ শনাক্ত করে দায়ীদের অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানা করছে। কিন্তু কঠোর শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। ফলে পরিবেশ দূষণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজেই ভালো আইন থাকা সত্ত্বেও কার্যকর প্রয়োগের অভাবে এর প্রত্যাশিত সুফল মিলছে না।

সুতরাং অবস্থা পরিবর্তনে চাই পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষ সক্রিয়তা। অভিযোগ আছে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় তদারকির সময় তদারকি কর্মকর্তা ইটিপি, কারখানার পরিবেশ, পানির মান, লাইসেন্সের কাগজপত্র, ল্যাবরেটরি রিপোর্ট, টাকার রসিদ, ছাড়পত্র নবায়ন, মূল সার্টিফিকেট ইত্যাদি বিষয় সংশ্লিষ্ট কারখানার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সঠিকভাবে তদারক করেন না। ফলে তদারকি প্রক্রিয়ার মধ্যেই দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে, যা সুশাসনের অন্তরায়। সুতরাং তদারকি ব্যবস্থায় আরো স্বচ্ছতা আনতে হবে। অধিদপ্তরের এমন সিদ্ধান্তের কারণে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো আরো বেশি দূষণপ্রবণ হয়ে উঠবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাগরিকদের অর্থে চলে সংস্থাটি। সুতরাং গোষ্ঠীস্বার্থ নয়, সামষ্টিক স্বার্থ রক্ষাই প্রতিষ্ঠানটির মূল দায়িত্ব। কাজেই সংস্থাটির কার্যক্রম আরো সুস্পষ্ট ও জবাবদিহিতামূলক হওয়া উচিত। বাংলাদেশে কারখানাগুলোকে দূষণের মাত্রা অনুযায়ী সবুজ, কমলা ও লাল হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নতুন এক প্রতিবেদনে পরিবেশ অধিদপ্তরকে যে পরিমাণ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশের পরিবেশ কেন এত দ্রুত দূষিত হচ্ছে তার একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

সাধারণ মানুষ মনে করে, দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় এনে, বহিস্থ প্রভাব থেকে মুক্ত করে পরিবেশ অধিদপ্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ দূষণ ও এর বিপর্যয় থেকে উত্তরণে ব্যর্থতার পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন সম্ভব হবে না। বিষয়টি দেশ ও জাতির সার্থে তুলে ধরা হলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়