বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

পাথরঘাটায় চার বছরে ১৩ বেওয়ারিশ লাশ, রহস্যের জট কি খুলবে না?

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭
  • ৪৭ Time View

ইমরান হোসাইন, পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটায় চলতি বছরের ১০ আগস্ট পাথরঘাটা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন পুকুর থেকে উদ্ধার হয় এক তরুণীর লাশ। পরিচয় না মেলায় অজ্ঞাত হিসেবে দাফনের পাশাপাশি অপমৃত্যুর একটি মামলা রেকর্ড হয় পাথরঘাটা থানায়। এরপরের ঘটনা প্রায় সবার জানা। অজ্ঞাত তরুণীর এই লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গত ১২ নভেম্বর গ্রেফতার হয় উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের ৪ নেতাসহ পাথরঘাটা কলেজের এক নৈশ প্রহরী। এরপর আদালতের মাধ্যমে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। এক পর্যায়ে তরুণীকে গণধর্ষণের পর হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দেয়। তবে যে বিষয়টি রহস্যজনক তা হল হত্যার কথা  স্বীকার করলেও চরম নির্মমতার শিকার ওই তরুণীর পরিচয় দেয়নি হত্যাকারীরা। ফলে এখনও বের হয়নি তরুণীর পরিচয়।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য, কেবল একটি নয়, বিগত ৪ বছরে এই পাথরঘাটায় এরকম অন্তত ১৩টি বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭ জন মহিলা, ৫ জন পুরুষ এবং ১টি কিশোর। অবশ্য পুলিশের খাতায় হিসাব নেই এই ১৩ লাশের। পাথরঘাটা থানা পুলিশের দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে তাদের কাছে হিসাব আছে ১১টির। এর মধ্যে ৬ জন মহিলা, ৪ জন পুরুষ এবং ১ জন কিশোর। ২০১৩ সালের শেষ থেকে চলতি বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া এসব লাশের মধ্যে ১২টির কোনো পরিচয় আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এসবের সঙ্গে কারা জড়িত তারও কোনো হদিস মিলছে না।
সর্বশেষ চলতি বছরের ১০ আগস্ট পাথরঘাটা কলেজের পুকুরে এক তরুণীর লাশ মেলে। যেটি নিয়ে বর্তমানে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল এই তরুণীর নাম প্রিয়াংকা। বছর খানেক আগে সে রওশন সার্কাস নামে কুষ্টিয়ার একটি সার্কাস পার্টির সঙ্গে পাথরঘাটায় এসেছিল নাচ দেখাতে। ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে তার একটি ছবিও রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সার্কাস চলাকালীন পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের সম্পর্ক হয়। সেই সম্পর্র্কের    সূত্র ধরে তরুণীকে পাথরঘাটায় এনে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা জেলা ডিবির পরিদর্শক জিয়াউল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে রওশন সার্কাসের মালিক শেখ আফতাব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে শেখ আফতাব উদ্দিন জানান নাচের মেয়েরা আসলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সদস্য নয়। আয়োজকদের চাহিদার ভিত্তিতে তাদেরকে বিভিন্ন স্থান ভাড়া করে আনা হয়। ২-৩ দিন থেকে নাচ করে তারা টাকা নিয়ে চলে যায়। ফলে তাদের বিস্তারিত বায়োডাটা আমাদের কাছে থাকে না।
প্রিয়াংকার এটাও আসল নাম নয়। নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখেই মূলত এরা নাচ-গান করে।
একের পর এক লাশ মিলছে অথচ এদের পরিচয় মিলছে না- এর কারণ জানতে চাইলে একসময় পাথরঘাটায় থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা বর্তমানে বরগুনার বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিএম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে লাশগুলো পাওয়া যেত গলিত-অর্ধগলিত অবস্থায়। চেহারা চেনা কিংবা শনাক্তকরণেরও কোনো উপায় থাকত না। তারপরও আমরা চেষ্টা করতাম এদের পরিচয় খুঁজে বের করার। কিন্তু সত্যি কথা বলতে প্রায় কখনোই সফল হইনি। আমাদের ধারণা এইসব লাশ স্থানীয় তো দূরের কথা, হয়তো বরিশাল বিভাগেরই কারও নয়। দূর-দূরান্ত থেকে নিয়ে এসে বা আসার পর হত্যার শিকার হতো এরা। ফলে এদের পরিচয় পাওয়া যেত না।

সর্বশেষ ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হওয়া তরুণীর ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে থাকা বরগুনা জেলা ডিবির পরিদর্শক পাথরঘাটা থানা পুলিশের  সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল হক বলেন, ‘এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ৫ জনই বলছে যে তারা ভাসমান এক পতিতাকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং লাশ কলেজের পুকুরে ফেলে দিয়েছে। এটি হতে পারে তাদের অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার একটি কৌশল। তবে আমরা মেয়েটির পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’

পাথরঘাটায় একের পর এক বেওয়ারিশ লাশ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সব ঘটনার রহস্য যে আমরা বের করতে পারিনি তা নয়। গেল বছর এরকম এক তরুণীর বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যায় কালমেঘা এলাকায়। পরে তদন্ত করে দেখা যায় যে জয়পুরহাটের বাসিন্দা ওই মেয়েকে কাকচিড়া এলাকায় এক যুবক সুজন ফুসলিয়ে আনার পর হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। দুুুর-দূরান্ত থেকে আসার কারণে এদের পরিচয় আর খুঁজে বের করা যায় না। তবে আমরা সব ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়