শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নীলফামারীতে ট্রেন আটকিয়ে মানববন্ধন ঢাকাসহ তাপপ্রবাহ বইছে ৬০ জেলায় সোনারগাঁয়ে ৭টি রেষ্টুরেন্টসহ দুই হাজার অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন ১ জনকে আটক স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা দাম কমবে ইন্টারনেটের ১৬১ টাকা কমলো ১২ কেজি এলপিজির দাম মেলান্দহের আদ্রা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কুচক্রিমহলের ষড়যন্ত্র! উত্তরা আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ রেললাইন বস্তি অপরাধ মাদকের অভয়ারণ্য গুলশান-বনানীর বিস্তৃত এলাকার একচ্ছত্র মাদক সম্রাট হুমায়ুন কবির গাজী ক্ষমতার জোরে অন্যের জমি দখলের চেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে; থানায় অভিযোগ

পিলার-তক্ষক নিয়ে প্রতারণা চলছে দেশজুড়ে

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ১৩৯ Time View

 

 

শের ই গুলঃ

 

রাজধানীর বিজয় সরণির সামরিক জাদুঘরের সামনের রাস্তায় দেখা গেল কয়েক তরুণের জটলা। গভীর মনোযোগে পরামর্শ করছিল তারা। অপরিচিত বা পথচারী দেখলেই থেমে যাচ্ছিল সেই আলাপন। পরে দলেরই একজন উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, ‘ভাই, কোটি টাকার জিনিস আছে এখানে। দোয়া করেন, যেন পাই।’ অনেকটা আগ্রহ নিয়ে জানা গেল সেই কোটি টাকার সম্পদের বিস্ময়কর ঘটনা। তক্ষক নামের ছোট আকৃতির এক ধরনের প্রাণীর খোঁজ করছে তারা।

তাদের মতে, একটি তক্ষকের দাম ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। বড় গাছের কোটরে থাকে তক্ষক। দিনের আলোয় এ প্রাণী পাওয়া যায় না। রাতে ডাকে তক্ষক। কুয়েতপ্রবাসী এক ব্যক্তি তক্ষক কেনে। আর ওই ক্রেতার হয়ে যোগাযোগ করে সিলেটের একজন। এর বেশি তথ্য দিতে রাজি হয়নি তরুণটি। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ওই ছাত্র জানায়, দুই মাস ধরে তারা ২০ বন্ধু রাজধানীর পার্ক-উদ্যানগুলোতে তক্ষক খুঁজছে। সন্ধ্যা হলেই লেখাপড়া ফেলে বেরিয়ে পড়ে তারা।

তক্ষক সম্পর্কে অনেক তথ্য আছে এ দলটির কাছে। তক্ষক পেলে লাখ লাখ টাকা মিলবে। আমেরিকার গ্রিনকার্ড পাওয়ার সুযোগ আছে! সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় চন্দ্রিমা উদ্যানের দিকে যাওয়ার সময় সামরিক জাদুঘরের কাছে আটকে যায় তারা। সেখানে তক্ষকের ডাক শুনেছে এ দলটি। কিন্তু রাতে সামরিক জাদুঘরের ভেতরে ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। তাই ১৫ দিন ধরে ওই এলাকায় ঘুরে কৌশল করছে তারা। নিরাপত্তাকর্মী ও জাদুঘরের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে তক্ষক সন্ধানীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু এ দলটি নয়, রাজধানীসহ সারা দেশে তক্ষকের সন্ধানে ঘুরছে অনেক মানুষ। প্রাণী পাচারকারী চক্রের জালে ধরা পড়া এসব ব্যক্তির কাছ থেকে জানা গেছে, একটি তক্ষকের মূল্য কোটি টাকা।

কিন্তু তক্ষকের খোঁজে নেমে প্রতারিত হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ। বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী তক্ষক ওষুধি তেলসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার হয়। দুই বছর ধরে পাচারকারী চক্র তক্ষক পাচারে মাঠে নেমেছে। দেশের বাইরে পাচার এবং পাচারকারীদের হাতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি তক্ষক হারিয়ে গেছে।

অভিযানে ৫শত’র অধিক তক্ষক উদ্ধার করা হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বিপদাপন্ন এ প্রাণীটির পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা নিজস্ব সিন্ডিকেটে তক্ষক সংগ্রহ করে পাচার করছে। এ চক্রে আছে বিদেশি ও প্রবাসীরাও। গ্রেপ্তারকৃত অর্ধশত ব্যক্তির দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, পার্বত্য এলাকা, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের বনাঞ্চল থেকেই বেশি তক্ষক ধরা হচ্ছে। বলা হয়, একটি তক্ষকের মূল্য কোটি টাকা। লাখ লাখ টাকায় এটি হাতবদল হয়। অনেক সময় না খেয়ে তক্ষকটি মারা যায়। নিঃস্ব হয়েছে অনেক তক্ষকসন্ধানী। তিনি আরো জানান, কিছু লোক প্রচার করছে, তক্ষক দিয়ে এইডস, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ওষুধ তৈরি হয়।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চীনে কিছু ওষুধ তৈরিতে তক্ষক ব্যবহার করা হয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তক্ষকের কিছুটা দাম ও চাহিদা আছে। তবে যতটা প্রচার করা হয়, ততটা নয়। সচেতনতা বাড়িয়ে জনসাধারণকে এর সঙ্গে যুক্ত করে তক্ষক পাচার বন্ধ করতে হবে। রাজধানীতে তক্ষক খুঁজে বেড়ানো একজন জানায়, তক্ষক ধরার জন্য তাদের নানাভাবে প্ররোচিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তক্ষক এখন আমেরিকায় যাচ্ছে। ওই দেশের সেনাবাহিনীর ওষুধ তৈরি হয় তক্ষক দিয়ে। তক্ষক দিলে আমেরিকার গ্রিনকার্ড দেওয়ারও প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। তক্ষক ধরার জন্য লোহার পাইপের মাথায় বাতি ও নেট যুক্ত করা বিশেষ যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে তাদের। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তক্ষক একটি গিরগিটি প্রজাতি।

পিঠের দিক ধূসর, নীলাভ-ধূসর বা বেগুনি-ধূসর। সারা শরীরে থাকে লাল ও সাদাটে ধূসর ফোঁটা। পিঠের সাদাটে ফোঁটাগুলো পাশাপাশি সাত-আটটি সরু সারিতে বিন্যস্ত। কম বয়সী তক্ষকের লেজে পর পর গাঢ়-নীল ও প্রায় সাদা রঙের বলয় রয়েছে। মাথা অপেক্ষাকৃত বড়, নাকের ডগা চোখা ও ভোঁতা। চোখ বড় বড়, মণি ফালি গড়নের। লেজ সামান্য নোয়ানো। দৈর্ঘ্য নাকের ডগা থেকে পা পর্যন্ত ১৭ সেন্টিমিটার এবং লেজও প্রায় ততটা লম্বা। তক্ষকের ডাক চড়া, স্পষ্ট ও অনেক দূর থেকে শোনা যায়। রাতের বেলা ডাকে তক্ষক। থাকে বড় আকারের গাছের কোটরে। ছাদের পাশের ভাঙা ফাঁকে বা গর্তে বাস করে তক্ষক।

পরে ‘তক্-ক্কা’ ডাকে কয়েকবার ও স্পষ্ট স্বরে। এরা কীটপতঙ্গ, টিকটিকি, ছোট পাখি ও ছোট সাপ খায়। ব্যাপক নিধনের কারণে তক্ষক বিপন্ন হওয়ার পথে। দেশি চিকিৎসায় এ প্রাণীর তেল ব্যবহৃত হয়। ভারত ও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি তক্ষক আছে। এ ছাড়া মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস। অন্যদিকে বরগুনার আমতলী থানার আড়পাঙ্গাশিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ম্যাগনেট পিলার প্রতারণা চক্রের সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিনকে (৫০) আটক করেছে র‌্যাব-৮।

এ অভিযানের সময় তার কাছ থেকে একটি পিলার, দু’টি চুম্বক চাকতি এবং চুম্বক পরীক্ষা করা সরঞ্জামাদি জব্দ করে র‌্যাব। আটক ফরিদ উদ্দিন ওই গ্রামের মৃত সামসু মোল্লার ছেলে। বৃহস্পতিবার র‌্যাব-৮ প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফরিদ আমতলী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ম্যাগনেট পিলার ও পিলারের মধ্যের চুম্বক চাকতি দিয়ে জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। কতিথ এই পিলারে থাকা চুম্বক চাকতি অতি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এবং এই পিলারে শুকনো ধানও আকৃষ্ট করে।

যার একেকটি চুম্বকের মূল্য কোটি টাকা বলে স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে। তারা অবৈধ পিলার ব্যবসায়ীদের কৌশলে নিজ এলাকায় নিয়ে আসে এবং নমুনা হিসেবে চুম্বকের চাকতি দেখায়। চাকতির গায়ে খোদাই করে ‌EAST INDIA COMPANY ১৮১৮’ এবং মাঝে ‘DANGER লেখা আছে।

চুম্বকটি আসল কিনা তা প্রমাণের জন্য টেষ্ট কিট হিসেবে শুকনো ধান একটি কাচের টিউবের মধ্যে সংরক্ষিত রাখে তারা। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক ফরিদ উদ্দিন জানায়, চাকতিগুলো তারা নিজেরাই তৈরি করে এবং যে ধানগুলো দিয়ে টেষ্ট করে সেগুলোর ভেতরে আগে থেকেই সূক্ষভাবে লোহা জাতীয় পদার্থ ঢুকানো থাকে।

ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অবৈধ ব্যবসায়ীরা এই চুম্বকর প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাবের বিশেষ দল মো. ফরিদ উদ্দিনকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিলার, দু’টি চুম্বক চাকতি এবং চুম্বক পরীক্ষা করা সরঞ্জামাদি জব্দ করে তারা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই রাতেই তাকে আমতলী থানায় সোপর্দ করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (খ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে র‌্যাব-৮।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়