(প্রশাসন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা প্রকৃত সাংবাদিকরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আরও আছে মামলার ভয়, সবসময় পাশে থাকে না প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো। কোন রকম ফেসবুক চালানো শিখে হয়ে যায় সম্পাদক। তথ্যমন্ত্রীর উক্তি অনলাইন পোর্টালের কার্ডধারীরা সাংবাদিক নয়। নির্দিষ্ট নীতিমালা বাস্তবায়নের অভাবে প্রকৃত সাংবাদিকরা পাচ্ছে না তাদের ন্যায্য সম্মান। করোনা মহামারীতে একের পর এক সাংবাদিকদের মৃত্যু প্রমাণ করে দেশের যেকোন দূর্যোগময় সময় তাদের অবদান ইতিহাসের পাতায় অম্লান হয়ে থাকবে)।
শের ই গুলঃ
সম্প্রতি বাংলাদেশে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন বেড়ে গেছে, কেন হামলা হয় সাংবাদিকদের উপর শুধু বাংলাদেশে নয়, পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশেই সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে যেখানে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়নি, সে দেশগুলোতে সাংবাদিকদের উপর প্রায়ই হামলার ঘটনা ঘটে থাকে।
জনগণের জন্য নিয়োজিত এই পেশাজীবীদের উপর কেন হামলা হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মোফাস্বল সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সাংবাদিকদের উপর হামলা নতুন কোনো ঘটনা নয়।” তাঁর কথায়, ‘‘সরকার কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনগণের কোনো দাবি-দাওয়া বা সরকারের কোন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে নয়, বরং পুলিশ ও দলীয় কর্মীদের দ্বারা দমন-পীড়নের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে চায়। পেশাগতভাবেই সাংবাদিকরা এসব দমন-নিপীড়নের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরেন।
সরকার, প্রশাসন, দলীয় নেতাকর্মী কিংবা অনেক ব্যবসায়ীরা যা চাপা দিতে চায়, সাংবাদিকরা তা প্রকাশ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় তারা।’ সাংবাদিকদের এ পেশাগত আচরণের কারণেই সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অনেকেই তাঁদের উপর হামলা চালায় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ মোফাস্বল সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের গণমাধ্যম চূড়ান্ত স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে এটি যাতে অপরের স্বাধীনতা খর্ব না করে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। অনলাইন পোর্টালের কার্ড নিয়ে যারা সাংবাদিক পরিচয় দেয়, তারা আসলে সাংবাদিক নয়।
সব মিলিয়ে গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত দশ বছরে দেশে গণমাধ্যম দ্রুত বিকশিত হয়েছে। এখন মিডিয়া বলতে শুধু খবরের কাগজকে বোঝায় না। এখন এতে খবরের কাগজ, টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সংবাদপত্রের চিত্র গত দশ বছরে বদলে গেছে। হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে মিডিয়ার ব্যাপক বিকাশের কারণে এতে আরো অনেক নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে। তিনি মনে করেন, যে কোনো মিডিয়ায় যে কোনো ধরনের ভুয়া নিউজ প্রচার হলে তা অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
মন্ত্রী বলেন, অনেকে সামাজিক মাধ্যমকে গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে, এটি একটি অসম্পাদিত প্লাটফর্ম, গণমাধ্যম নয়। তিনি বলেন, অনলাইন পোর্টালের কার্ড নিয়ে যারা নিজেদেরকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেয়, তারা আসলে সাংবাদিক নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪ পাস করেছেন এবং পরে দেশের মিডিয়ার বিকাশের জন্য বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল গঠন করা হয়। দেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু তার শাসনকালে প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪-এর মতো অনেক আইন পাস করেন। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগঠনগুলোর দাবী সাংবাদিকের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দেশের দূর্ণীতিবাজ, ঘুষখোর, টেন্ডারবাজ, ত্রাণচোর ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসিরা সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ মনে করে, একেরপর এক হামলা-মামলায় সাংবাদিকরা আজ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সারাদেশে অব্যাহত নির্যাতন, মামলা-হামলা, লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেই চলছে। পুলিশি জুলুম হয়রাণীতে সাংবাদিকের প্রাণ ওষ্ঠাগত। পুলিশও সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ ভাবছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জাতির জনকের সোনার বাংলা যেখানে সাংবাদিকের কলম সত্য প্রকাশে নিরন্তর প্রচেষ্টায় কাজ করবে তা শুধু স্বপ্নই রয়ে যাবে। রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের একটি গণমাধ্যম আজ মামলা-হামলায় পঙ্গুত্ববরণ করতে চলছে।
বাকি তিনটি যতই শক্তিশালী হোকনা কেন রাষ্ট্র কোন শক্তিতে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবে তা বোধগম্য নয়। করোনার মহামারী শেষ হলে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য করে বেশ কিছু বিজ্ঞজনরা বলেন এবং বলতে চায়- আপনি বিশ্ববরেন্য মানবতাবাদী স্বীকৃত। আপনি বিশ্বের একজন সাহসি প্রধানমন্ত্রী। আপনি করোনায় দেশের সকল পেশার মানুষের পাশে জানপ্রাণ দিয়ে দাঁড়িয়েছেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সকল পেশাজীবীরা আপনার মাধ্যমে সুবিধা পেয়েছেন। ঈদের আগে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ সকল পেশার মানুষ কমবেশি আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন।
যদি প্রশ্ন করা হয় কোন পেশার মানুষ সরকারের আর্থিক সুবিধা পায়নি? নি:সন্দেহে উত্তরটা মিলবে সাংবাদিক। দেশে সাংবাদিকরাই আজ সুষম সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত ও নিরাপত্তাহীন। যেমনটি নেই কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, চলছে সাংবাদিক ছাটাই। যেন কচু পাতার পানির মতো সাংবাদিকের চাকুরী। প্রয়োজন একটি নীতিমালা। দেশ গঠনের ৪৯টি বছরেও এটি সম্ভব হয়নি, আর কবেইবা হবে কেউ জানেনা। সাংবাদিক নির্যাতনমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হলেই কেবল জাতিরজনকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। সরকারের হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবেনা। এজন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা।
তারা রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ। তাইতো জীবন-সংসারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে প্রতিদিন তারা অন্যায়-অনিয়ম ও দূর্ণীতিবাজদের বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক যখন হত্যা মামলার আসামি হয়। তখন আর সাংবাদিকের নিরাপত্তা কোথায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি দেশের সাংবাদিকের শেষ ভরসাস্থল বলে আমরা আপনাকেই বলছি। প্রকৃত প্রকাশক ও সম্পাদক, যারা বহু কষ্টে একটি পত্রিকাকে চালিয়ে রাখছে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, প্রকৃত সাংবাদিকদের স্বার্থে, তাদের সাথে আলোচনা করুন। সাধারণ নিরপেক্ষ সাংবাদিক ও সংগঠনসমুহের নেতৃবৃন্দের মনোকষ্টের কথাগুলো শুনুন। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের সুখেদুঃখে যারা কাজ করে তারা আপনাকে কী বলতে চান, আপনি তাদের ডাকুন, কথা শুনুন। মফস্বলের সাংবাদিকদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
তাই সময় এসেছে দেয়ালে পিঠ ঠেকানো সাংবাদিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর। আমরা চাই অপ-সাংবাদিকতামুক্ত বাংলাদেশ। তাই প্রয়োজন সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন। আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐ সকল সাংবাদিক নির্যাতনকারী অন্যায়-অনিয়ম, জুলুমবাজ, দূর্ণীতিগ্রস্থ সন্ত্রাসি, হায়েনার বিরুদ্ধে শপথ গড়ে তুলি। কোথাও কোন সাংবাদিকের বিপদে আমরা যে যার জায়গা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ি। প্রতিবাদের ঝড় তুলি। দাবি তুলি সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের সোপানে তার কুসুম বাগানে সাংবাদিক নির্যাতন চলবে না। অপ-সাংবাদিকতা দূর হোক। প্রকৃত সাংবাদিকরা পাবে তাদের উপযুক্ত সম্মান। আগে সোনার বাংলা পরে অন্যসব। সাধু সাবধান।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply