বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

প্রসঙ্গ: বাংলাদেশের ইতিহাস ও তরুণ প্রজন্মের ভাবনা- আকাশ ইকবাল

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭
  • ৭৭ Time View

১০ শ্রেণিতে পড়াকালীন ১৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আমরা বন্ধুরা একটা কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলাম। আমাদের বিদ্যালয়ের আশে পাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটা বিদ্যালয়ে মিলেই এই কুইজ প্রতিযোগিতা। ১৪ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে ১২ই ডিসেম্বর আমরা কুইজ সংগ্রহ করে দেখছিলাম। প্রশ্ন ছিল, কত সাল থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়? একজন উত্তরে লিখেছেন ১৯৫২ সাল থেকে! গত বছর দুয়েক আগে সময় টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, কত সাল থেকে শহীদ দিবস পালন করা হয়? উত্তরে প্রায় শিক্ষার্থী বলেছিল ১৯৫২ সাল থেকে! গত বৃহস্পতিবার ১৪ ডিসেম্বর সারা দেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। সকালে রায়ের বাজার বধ্য ভুমিতে বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের ঢল নামে। সেখানে বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে একটি আলোচনা সভাও হয়। আলোচনা সভায় শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছোট ছেলে আসিফ মুনীর বলেছেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে সচেতন নন বর্তমান তরুণ প্রজন্ম’। তিনি তো মিথ্যে বলেননি। সত্যিই তো। আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে সচেতন নন। শুধু বুদ্ধিজীবী দিবস নয়, কোন দিবস নিয়েই সচেতন নন। কখন, কেন, কি দিবস পালন করা হয় বেশির ভাগ তরুণ জানে না। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এইচএসসি পরীক্ষার হলে আমার পাশে এক ছাত্রী বসেছিল। পেছন থেকে একজন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমাদের স্বাধীনতনা দিবস কবে? উত্তরে সে বলেছিল, ১৬ ডিসেম্বর! গতকাল বাংলা নিউজের একটি সংবাদে দেখলাম, ৫ জন তরুণ শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়? চারজন শিক্ষার্থীই সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। একজন কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী উত্তর দিতে পেরেছে। এর অর্থ কি বুঝায়? আসিফ মুনীর তো সত্যই বলেছেন। আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম একেবারেই সচেতন নন আমাদের দেশের ইতিহাস নিয়ে। গত বছর মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মীরসরাইয়ে আমরা একটা আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলাম আমাদের দলের পক্ষ থেকে। সেখানে অংশ গ্রহণ করেছিল বেশ কয়েকটি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন করেছিলাম, মাতৃভাষা দিবস কেন পালন করা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর প্রায় সবাই দিতে পেরেছিল। কখন থেকে পালন করা হয় এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই দিতে পারেনি। এছাড়াও প্রশ্ন করা হয়েছিল, জাতিসংঘ কবে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়? হাতে গনা কয়েকজন ছাড়া অনেকেই সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। প্রশ্ন করা হয়েছিল ইউনেস্কো কখন স্বীকৃতি দিয়েছিল? এটা মাত্র দুজন শিক্ষার্থী সঠিক উত্তর দিয়েছিল। এতে বুঝা যায় শুধু শহরের শিক্ষার্থীরা নয়, মফস্বলের শিক্ষার্থীরাও আমাদের দেশের ইতিহাস নিয়ে সচেতন নয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম নিজের দেশের ইতিহাস পাঠ করেন না। আমি নিজেও তরুণ। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি দেশের ইতিহাস নিয়ে আমার যতটা মাথাব্যাথা আছে ততটা মাথাব্যাথা নেই আমাদের দেশের বর্তমান অনেক তরুণ প্রজন্মের। আমি কেন করি? ওরা কেন করে না? এই প্রশ্নে আসলে উত্তরে বলব, আমি আমার দেশকে ভালবাসি। আমি নিজেকে সচেতন মনে করি। ওরাও দেশকে ভালবাসে। কিন্তু তারা সচেতন নয়। আমি বলব, যারা নিজের দেশ সম্পর্কে ধারণা রাখে না, দেশের ইতিহাস জানে না তারা তো এই দেশে বাস করার কোন অধিকারই রাখে না। তারা যে বাঙ্গালি বা বাংলাদেশি সেটাও বলতে লজ্জা বোধ করে। শুধু বাংলা জানলেই বাঙ্গালি হওয়া যায় না আজ তা সুস্পষ্ট। দেশের ইতিহাস নিয়ে তারা ভাবে না, তারা ভাবে সার্টিফিকেট অর্জন করে ভাল ক্যারিয়ার গড়ার কথা। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম দেশের ইতিহাস পাঠ না করার অন্যতম কারণ হিসেবে আমি বলব, যখন থেকে এই দেশে সুস্থ ছাত্র-রাজনীরি ইতি ঘটেছে তখন থেকে ইতিহাস পাঠ ও চর্চা বন্ধ হয়ে গেছে। আজ যারা নিজেদের মুজিব আর্দশ বলে গর্জে উঠে তারাও সঠিক ভাবে জানেনা দেশের ইতিহাস। শুধু দেশের ইতিহাস নয়, খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কেও জানেনা। তাদের নেতাদের কাছ থেকে সভা সমাবেশে যা শুনে ততটুকুই জানে। এর বেশি না। জানার দরকারই মনে করে না। তাদের তো প্রয়োজন ক্ষমতা। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ যে চারটি মূল স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে সংঘঠিত হয়েছিল সেই চার স্তম্ভই আজ নেই। তাছাড়া আমাদের দেশের শিক্ষা এখন কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। বাংলা, ইংরেজি ও মাদ্রাসা এই তিন ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণেই মূলত ইতিহাস চর্চা অনেকটা কমে গেছে। যারা বাংলায় পড়ছে তারা বাদে বাকি শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষার্থীরা জানেই না দেশের ইতিহাস।  আমাদের পরিবারগুলোও তার সন্তানের প্রতি ইতিহাস পাঠে সচেতন নয়। বাবা-মায়ের চিন্তা একটাই। কিভাবে সন্তান গোল্ডেন পাবে? কিভাবে ভাল ক্যারিয়ার তৈরি করবে এটাই।
সত্যি কথা বলতে কি আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের দিনগুলো কেবল আনুষ্ঠানিকতা পালন বা বিশেষ দিনে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিজস্ব ইতিহাস পাঠ বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিহাস পাঠের বাধ্যবাধকতার নিয়ম চালু নেই। ফলে দেখা যায়, জাতির আত্মপরিচয়ের ইতিহাস না জেনেই প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ইতিহাসজ্ঞানবর্জিত হয়ে পাস করে বেরিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ি আমাদের রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা। দায়ি এই শিক্ষা ব্যবস্থা যারা কয়েম করেছে।

লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়