মংলা বন্দরের শ্রমিক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় খালাস হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার মেট্রিক টন আমদানি পণ্য। সমপরিমাণ পণ্য খালাসে চট্টগ্রাম বন্দরে সময় লাগছে ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় দু’সপ্তাহ।
এ কারণে মমংলা বন্দরে আমদানি পন্য খালাসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন আমদানিকারক ব্যাবসায়ীরা। দ্রুত পণ্য খালাস হওয়ায় মোংলা বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে।
শিপিং এজেন্ট ও আমদানিকারকরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস কাজে ধীরগতি ও নানা বিড়ম্বনার কারণে তারা এখন মংলা বন্দরমুখী হচ্ছেন। আর এ বন্দর ব্যবহারের ফলে তাদের আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি কমে যাচ্ছে, অর্থের সাশ্রয়ও হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, আমদানি পণ্য খালাস কাজের বর্তমান গতি ধরে রাখতে পারলে মোংলা বন্দরে জাহাজের সংখ্যা আরো বাড়তে থাকবে।
শিপিং এজেন্ট ও আমদানিকারকদের একাধিক সূত্র জানায়, খুলনার ফুলতলার আমদানিকারক শেখ ব্রাদার্স অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করে। থাই পতাকাবাহী ‘এমভি ওরিয়ার নারী’ এই কয়লা নিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। সেখানে ১৮ দিনে ২৬ হাজার টন কয়লা খালাস হয়। বাকি ২৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে জাহাজটি গত ২৬ অক্টোবর রাতে মোংলা বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে আসে। এখানে শ্রমিক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় সমপরিমাণ কয়লা মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় খালাস করা হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেইে গত ২৮ অক্টোবর জাহাজটি মোংলা বন্দর ত্যাগ করে। দ্রুত গতিতে পণ্য খালাস হওয়ায় জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান সন্তোষ প্রকাশ করে। তারা পণ্য খালাসকারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স নূর এ্যান্ড সন্স’কে প্রশংসা সনদও প্রদান করে।
অপরদিকে ঢাকাস্থ এজি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্টিজ লিঃ ৪২ হাজার মেট্রিক টনের মত ‘ফিস ফুড’ আমদানি করে। ১৭ সেপ্টেম্বর পানামা পতাকাবাহী ‘এমভি মেডিসার্জ স্টা’ নামের একটি জাহাজ ওই ফিস ফুড নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। সেখানে টানা ৩৪ দিন অবস্থানের পর জাহাজটি থেকে মাত্র ১৮ হাজার টন পণ্য খালাস করা হয়। পুরো চালান চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের কথা থাকলেও ধীরগতির কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আমদানিকারক শেষ পর্যন্ত জাহাজটিকে মোংলা বন্দরে আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
২১ অক্টোবর জাহাজটি বাকি পণ্য খালাসের জন্য মোংলা বন্দরে আসে। তারপর ১১ দিনে জাহাজটি থেকে ২২ হাজার মেট্রিকটন পণ্য খালাস করা হয়েছে। বাকি পণ্য খালাস শেষে বৃহস্পতিবার জাহাজটি বন্দর ত্যাগ করতে পারবে বলে আশাবাদী পণ্য খালাসকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর এ্যান্ড সন্সের খুলনার ব্যবস্থাপক সাধন কুমার চক্রবর্তী। তার মতে, পর্যাপ্ত লাইটারেজ জাহাজসহ বন্দর জেটিতে আধুনিক ক্রেন ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলে মোংলা বন্দর ব্যাপক কর্মচঞ্চল বন্দর হিসেবে পরিচিতি পাবে।
এ ব্যাপারে ‘এমভি মেডিসার্জ স্টা’ জাহাজের খুলনাস্থ লোকাল এজেন্ট ‘ট্রাস্ট শিপিং কোম্পানি’র ফৌরদৌস কবির জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে আসা বাণিজ্যিক জাহাজকে খালাস প্রক্রিয়া শেষ করতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। আর পণ্য খালাস কাজের ধীরগতির কারণে জাহাজ মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিদিন প্রায় ১৪ হাজার ৯শ’ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। যার প্রভাবে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ কারণে আমদানিকারকরা দ্রুত পণ্য খালাস করতে মোংলা বন্দরমুখী হচ্ছেন।
মোংলা বন্দরের অর্থ ও হিসাব বিভাগ সূত্র জানায়, এ বন্দরে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বিদেশি জাহাজের আগমন, পণ্য হ্যান্ডলিং ও বন্দরের আয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে ৬শ’ ২৩টি বিদেশি জাহাজের আগমন ঘটে। পণ্য হ্যান্ডেলিং হয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। আর অর্জিত মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৭২ কোটি টাকা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, নেপাল ও ভুটানের নিজস্ব বন্দর না থাকায় তারা কলকাতার হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করে আসছে। তবে এখন মোংলা বন্দর ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে তাদের।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর একে এম ফারুক হাসান বলেন, বন্দরের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় জাহাজের আগমন, পণ্য হ্যান্ডেলিং ও আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মংলা বন্দরকে ঘিরে বর্তমানে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে তাতে আগামীতে এ বন্দর দেশের অর্থনীতিতে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply