বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ১২:১৫ অপরাহ্ন

বগুড়ায় পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার মৃত্যু, স্বজনদের শোকের মাতম

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭
  • ৪৬ Time View

এজেড হীরা, বগুড়া প্রতিনিধি:

বগুড়ার শাজাহানপুরে পুলিশ হেফাজতে মাসুদুল হক পিন্টু (৪৭) নামের এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পুলিশ তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তবে পুলিশের দাবি, তাকে মারপিট করা হয়নি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে পিন্টু মারা গেছেন।

পিন্টু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত টর্চার থেকেও তা হতে পারে ধারণা। তবে তার শরীরের বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই বিএনপি নেতার মৃত্যুতে তার স্বজনদের মধ্যে শোকের মাতম বিরাজ করছে।
জানা যায়, পিন্টু উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের শাবরুল গ্রামের জাহান আলীর পুত্র এবং ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। এছাড়া তিনি আশেকপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য। শাজাহানপুর থানায় চলতি মাসে দায়ের করা জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের একটি মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি ছিলেন পিন্টু। গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কৈগাড়ী ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিছুর রহমান ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে নিজবাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন।
এ ব্যাপারে পিন্টুর ভাগ্নে সুমন জানান, পুকুর নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে দায়ের করা একটি মামলায় মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ তার মামা মাসুদুল হক পিন্টুকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গাড়িতে তোলার আগেই রাস্তায় লোকজনের সামনে তাকে বেদম মারপিট করে পুলিশ। মারতে মারতেই তাকে গাড়িতে তোলা হয়। এরপর তাকে থানায় নেয়ায় পথে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ সদস্যরাই তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে পিন্টু মারা যান। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তারা হত্যা মামলা দায়ের করবেন বলেও জানান।
কৈগাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিছুর রহমান মারপিটের কথা অস্বীকার বলেন, “তাকে কোনো মারপিট করা হয়নি। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন।”
তিনি জানান, পিন্টুর বিরুদ্ধে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন তার চাচাতো ভাই মিল্টন। সেই মামলার (মামলা নং-১৯) এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসার পথে রানীরহাট এলাকায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তার স্বজনদের সাথে করে তাকে মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৪টার কিছু আগে পুলিশ সদস্যরা মাসুদুল হক পিন্টুকে নিয়ে আসেন। তারা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কথা বললেও প্রাথমিক পরীক্ষায় হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়ে। এ কারণে কার্ডওলজি বিভাগে তাকে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতালে দায়িত্বরত কোন চিকিৎসক এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একজন জানিয়েছেন, পিন্টু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন। এটি অতিরিক্ত টর্চার (নির্যাতন) থেকেও হতে পারে। শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন আছে। বিস্তারিত ময়না তদন্ত হলে জানা যাবে।
এদিকে পিন্টু মারা যাওয়ার খবরে শাবরুল গ্রামের ও দলীয় নেতাকর্মীরা হাসপাতাল গেটে ভিড় করে। সেখানে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা পুলিশের বিরুদ্ধে ¯ে¬াগান দেয়। তারা প্রকাশ্যে মারপিট করে হত্যা করার অভিযোগ আনেন কৈগাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ সময় তারা সেখানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করারও চেষ্টা করেন। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল আসামির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় তথা পুলিশ হেফাজতে যদি মারা যায় এবং সংশ্লিস্ট পুলিশ জড়িত থাকলে বা অন্যায় কোন কাজ করে থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়