ভীষ্মদেব বাড়ৈ
‘খুনটাও’ আজকাল খেলা! কেউ হাসতে হাসতে মানুষ খুন করে- কেউ খেলত-খেলতে খুন করে। নিজাম ডাকাতের গল্প পড়েছি- রতœাকর দস্যুর কাহিনী পড়েছি: তারা অভাবের তাড়নায় লুণ্ঠন করতো। বিনা প্রয়োজনে পথিককে খুন করতো না। আবার কর্ণাটকের ডাকাত ভিরাপ্পান মতো কোন-কোন ডাকাত গরীব দুঃখীদের সাহায্য করতো। অথচ এখন টিভি খুললেই খবর, নিজের আশেপাশে- নিজর দেশে অথবা – অমুক দেশে- দেশের অমুক জায়গায় এতোজন খুন- এতোজন ধর্ষণ! কি সাবলিল উচ্চারণ! খই ফোটার মতো টাটকা খবর! কারো কোন অভিব্যক্তি নেই। এমনি অনেক সময় পরিস্থিতির তান্ডবে ভিকটিমও অনেক সময় নির্বাক হয়ে যায়। অথচ ‘যার যায়- সেই জানে’!
সমাজে জ্ঞানী মানুষেরা দুইভাবে চিন্তা করে- ‘যদি তার গালের থাপ্পরটা আমার গালে লাগত?’- তবে কি হতো? এভাবে একটু চিন্তা করলে- এতো সংঘাত- এতো মৃত্যু কিছুটা হলেও রোধ হতো। মানুষ মুড়ির মতো মরছে! বোমা ফেলছে – মুসলমান মরছে; বোমা ফোটছে, হিন্দু মরছে;- বোমা বিস্ফোরনে, খ্রিষ্টান মরছে! অথচ বিশ্বের মোড়লরা বলছে না-‘আহা! মানুষ মরছে!’ ছোট বেলায় পড়া সেই চোরের আত্মকাহিনীর মতো- সবাই দেখছে একটি চোরকে মারছে; অথচ শুধু একটি শিশুই তার বাবাকে বলল- “বাবা চোর কোথায়? এতো মানুষ” চোর এতো প্রহারের পরও না কাঁদালেও- শিশুটির কথা শুনে কেঁদে দিল।
আমরা বিভিন্ন পদ-পদবীর চাপে ও ভারে মানুষ হওয়া ভুলে গেছি। আমরা মোড়ল- আমরা প্রেসিডেন্ট- আমরা নেতা- আমরা নেতার চেলা- আমরা ক্যাডার- আমরা বড় ভাই- আমরা বস- ইত্যাদি- ইত্যাদি। আজকাল আর কেউ ‘জীবনের লক্ষ্য’ রচনাতে ‘মানুষের মতো মানুষ হবো’ বাক্যটি ব্যবহার করে না। একটি মানুষের জীবনে কতো টাকা প্রয়োজন? আমার পিতা- পিতামহেরা শাক- নুন দিয়ে ভাত খেতো। কতো সহজ-সরল জীবন। আমার বাবা বলতেন-‘যেখানে মিথ্যা বলার প্রয়োজন- সেখানে যাব কেন?’- কতো সাবলীল উচ্চারণ। এই তো বছর ত্রিশ আগের কথা। এখন এসব যেন রূপকথা। আমরা পাশের ফ্লাটের মানুষটিকে চিনিনা। আবার আগ বাড়িয়ে পরিচয় নিতে গেলেও- ভাববে আমার বুঝি কোন উদ্দেশ্যে আছে! বিশ্বাসের জায়গাটা কতো ঠুনকো হয়ে গেছে।
‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যে বা আমি বাঁধি তার ঘর’ কবিতার লাইনগুলি আজ চিরিখানায়। রবীন্দ্রনাথ কে ?- এ প্রশ্ন করলে, যদি শিক্ষার্থীদের কাছ হতে উত্তর আসে-‘ ভারতের প্রেসিডেন্ট’- আমরা কোথায় বসবাস করছি? দু’- দশটা টাচ মোবাইল আর আর পাঁজেরো না হলে নাকি আজকাল বড় লোকের সন্তানদের ( অবশ্য সবাই নয়) স্ট্যাটাস বাঁচে না! কি আছে ইহাতে? আজকাল যেমন ধর্ষক সাফাত, নাঈম, তুফান আছে: তেমনী মহারানী ঐশীরাও আছে। এখন তাদের মতো লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীর কাছে যৌনতা একটি খেলা। আমরা চোখ বেঁধে কানামাছি খেলতাম- ওরা চোখ খুলে যৌনতা ছেলে! তাদের কাছে এসব যৌনতা নাকি টাইম পাস! আমরা পুতুল খেলতাম ওরা এগুলো খেলে! আবার কেউ-কেউ ইহ কালে খেলতে না পেরে ( খেলার সঙ্গতি না থাকায়) পরকালে হুড়- পরিদের সহিত খেলার আশায় জঙ্গি হয়ে শহীদ হয়। এক্ষেত্রে ছিঁচকেরাও পিছিয়ে নেই-। স্কুল- কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উঠতি তরুণ- তরুণীরা প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সারা দিন- পর্ণো আর ক্রাইম পেট্রোল দেখেই চলে যায়। আত্মা কি? আত্মার সাধনা কি? তা জানার তাদের ফুরসরত কই? তাদের চোখে- মুখে- সারা অঙ্গে শুধু কামনা। ভাল বই- ভালো সঙ্গ তাদের শক্র।
আজ সময় এসেছে আবার আত্মার সাধনায় করার। আবারো সক্রেটিসের মতো বলতে হবে- কহড়ি ঃযুংবষভ আমাদের প্রতিটা ঘরে আবারো তীর্থ রচনা করতে হবে। আমরা বৃহৎ অর্থে মানুষ। আমরা একই বিশ্ব পিতার সন্তান, এই ভ্রাতৃত্ব বোধে মানুষ হতে হবে। আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ বাড়িয়ে তুলতে হবে। আমরা যেন- রবীন্দ্রনাথের মতো ঔদার্য রেখে বলতে শিখি-
‘ এসো আর্য- এসো অনার্য হিন্দু- মুসলমান, এসো- এসো আজ তুমি ইংরাজ- এসো- এসো খ্রিস্টান; এসো হে ব্রাহ্মণ শুচি করি মন- ধরো হাত সবাকার; এসো হে পীত- হোক উপবীত সব অপমান ভার।‘ আমাদের হুশে যেন আগুন লাগে- আমারা যেন মানুষ হই।
লেখক: ব্যাংকার
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply